করোনা মহামারির মধ্যেও ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের পুঁজিবাজার
আলোকিত বার্তা:করোনা মহামারির মধ্যেও ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের পুঁজিবাজার।তারল্য ও আস্থার সঙ্কট কাটিয়ে আলোর চমক দিচ্ছে পুঁজিবাজারে।করোনার মধ্যে গত তিন মাসে (৩১ মে-০৩ সেপ্টেম্বর) সূচক ও লেনদেনের বড় উত্থান দেখা দিয়েছে শেয়ারবাজারে।এসময় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাধারণ সূচক ৮৬৭ পয়েন্ট এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্য সূচক দুই হাজার ৭৩৮ পয়েন্ট বেড়েছে। একই সঙ্গে গড় লেনদেন ও বাজার মূলধনেও বড় ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে।ডিএসই ও সিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, করোনার ২ মাস বন্ধ থাকার পর ৩১ মে পুনরায় লেনদেন শুরু হয় পুঁজিবাজারে। সে সময় ডিএসইর সাধারণ সূচক ডিএসইএক্স চার হাজার ৬০ পয়েন্টে অবস্থান করছিল। গত ৩ মাসে (০৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) এটি ৮৬৭ পয়েন্ট বেড়ে চার হাজার ৯২৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে।ডিএসই অন্য সূচকের মধ্যে শরীয়াহ্ সূচক ১৯০ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৩৫০ পয়েন্ট বেড়ে যথাক্রমে ১১৪১ ও ১৭১৫ পয়েন্ট অবস্থান করছে। এসময়ের মধ্য বাজার মূলধন ও গড় লেনদেন বেড়েছে।
৩১ মে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল তিন লাখ ১৬ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা। তিন মাস পর (৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৭২ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা। চাট অর্থাৎ ডিএসইর বাজার মূলধন ৫৬ হাজার ৪১১ কোটি টাকা বেড়েছে।শুধু ডিএসই নয়, গত তিন মাসে বা ৬৬ কার্যদিবসে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই বেড়েছে দুই হাজার ৭৩৮ পয়েন্ট। ৩১ মে সিএসইর সূচক ছিল ১১ হাজার ৩২৮ পয়েন্ট ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এটি বেড়ে ১৪ হাজার ৬৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে।এদিকে,করোনা মহামারিকে দূরে সড়িয়ে পুঁজিবাজারকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন।নতুন কমিশনের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে বড় আর্থিক জরিমানা ও কিছু কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) বাতিল বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বাড়িয়েছে। একই সঙ্গে ব্যাংকের সুদের হার কমে যাওয়ায় শেয়ারবাজারে নগদ অর্থের প্রবাহ বেড়েছে। এতে করে বাজারে মূল্যসূচক, বাজার মূলধন ও আর্থিক লেনদেনে বড় উন্নতি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) এর সভাপতি শরীফ আনোয়ার হোসেন বলেন, করোনা মহামারি দেখা দেওয়ায় পৃথিবীর অন্যান্য দেশের শেয়ারবাজারের মতো আমাদের দেশের পুঁজিবাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিনিয়োগকারীরা আস্থা সংকটের মধ্যে পড়লে মার্চে শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়তে থাকে। ঠিক ওই সময় আগের কমিশন শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করে।তিনি বলেন, করোনার কারণে দুই মাস বন্ধ থাকে পুঁজিবাজার। পরবর্তীতে লেনদেন শুরুর পর ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দেওয়া হবে। এরকম নানা আলোচনার কারণে বাজারে প্যানিক সৃষ্টি হয়। বর্তমান কমিশন ফ্লোর প্রাইসের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিলে বিনিয়োগকারীরা আস্থা ফিরে পায়।শুধু তাই নয় কমিশন শেয়ারবাজারের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি অন্যায়কারীদেরকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনছেন। যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সৃষ্টি করছে। একই সঙ্গে ব্যাংকের সুদের হার কমে যাওয়া এবং সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ না থাকায় করোনাকালেও পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে বলে তিনি জানান।বিএসইসির সৎ নেতৃত্ব ও প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের পুঁজিবাজার বলে মনে করেন ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান।তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা ছিল। তিনি পুঁজিবাজারকে নিয়ে সকলকে জিরো টলারেন্সে থাকতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, পুঁজিবাজারে যত রুলস-রেগুলেশনস আছে তার কঠোর প্রয়োগ করতে হবে। যে যত শক্তিশালী হোক তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।তিনি আরও বলেন,প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা,বাংলাদেশ ব্যাংকের সুদের হার কমে যাওয়া এবং বর্তমান কমিশনের সৎ ও সাহসী নেতৃত্বের কারণে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা কাটছে, একই সঙ্গে তারল্য বাড়ছে। তাই এই সময়ে কমিশনের উচিত হবে বাজারে ভালো কোম্পানিকে নিয়ে আসা যাতে করে বাজার আরো গতিশীল হয় বলে তিনি জানান।