জীবন রক্ষা ও জীবিকায় পুনর্বাসনের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ না দিয়ে বাজেট
আলোকিত বার্তা:থাইল্যান্ডের প্রয়াত রাজা,সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মতো বাংলাদেশের মন্ত্রী,এমপি,জনপ্রতিনিধি,জননেতা ও ঊর্ধ্বতন আমলারা দেশের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিলে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি হতো বলে মন্তব্য করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট।সোমবার (৬ জুলাই) দুপুরে জোটের সমন্বয়কারী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন।২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট পাসের সমালোচনা করে তিনি বলেন,২০ দল অবাক বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে,এমন এক সংকটকালে ৫ লাখ কোটি টাকারও বেশি টাকার জাতীয় বাজেট পাস করা হয়েছে মাত্র একদিনের আলোচনায়।এমন হঠকারী,একনায়কসুলভ ও অস্বাভাবিক ঘটনা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কল্পনাও করা যায় না। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে।
নজরুল বলেন,জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার,রাজস্ব আদায়,রফতানি ও আমদানি প্রবৃদ্ধি,রেমিট্যান্স বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতির হার অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কাল্পনিক পরিমাণ নির্ধারণ করে বাজেটের আয়-ব্যয়ের অংক মেলানো হয়েছে। যেখানে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত ধ্বংস প্রায়, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ অনিশ্চিত এবং কমতে বাধ্য, সরকার নিজেই রাষ্ট্রায়ত্ত পাটশিল্প বন্ধ করে ব্যক্তিমালিকানাধীন শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য শিল্প বন্ধ ও শ্রমিক ছাঁটাইয়ের সুযোগ সৃষ্টি করেছে, লাখো প্রবাসী যখন নিঃস্ব হয়ে দেশে ফিরছেন, গণপরিবহন, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, নির্মাণ, গৃহ শ্রমিক, হকার্স, কুলি স্বনিয়োজিত কোটি কোটি শ্রমিক যখন কর্মহীন, খাদ্যহীন অসহায়- তখন সরকার তাদের জীবন রক্ষা ও জীবিকায় পুনর্বাসনের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ না দিয়ে বাজেটে প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধির মতো রসিকতা করেছে।’প্রবাসীদের প্রতি কটূক্তি ও অপমানজনক বক্তব্য প্রদানকারী মন্ত্রীদের প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বান জানিয়েছে ২০ দল। প্রবাসী শ্রমিকরা ছুটিতে এসে আর্থিক সংকটে পড়েছেন উল্লেখ করে তাদের প্রতি মাসে অন্তত ১৫ হাজার টাকা এবং যারা অনিবার্য কারণে ফিরতে বাধ্য হবেন তাদের সম্মানজনক পুনর্বাসনের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দের জোর দাবি জানিয়েছে জোটটি।অনিবার্য কারণে বেকার হয়ে পড়া এবং দিন আনে দিন খায় এমন দরিদ্র পরিবাবারের যতদিন প্রয়োজন ততদিন রেশন কার্ডের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরবরাহের মাধ্যমে তাদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য জোটের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানানো হয়।
২০ দল মনে করে, ‘থাইল্যান্ডে প্রয়াত রাজা, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মতো আমাদের দেশের মন্ত্রী, এমপি, জনপ্রতিনিধি, জননেতা ও ঊর্ধ্বতন আমলারা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিলে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি হতো।’সরকারি সেবা প্রতিষ্ঠান যথা বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল পরিশোধে বিপন্ন জনগণকে বাধ্য করার সরকারি উদ্যোগের তীব্র নিন্দা জানিয়ে আগামী ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত এসব বিল আদায় স্থগিত ঘোষণা এবং কর্মহীন ও দরিদ্র মানুষদের বিল মওকুফ করার জোর দাবি জানায় ২০ দল।
জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘নেপালের মতো দেশেও কোভিড টেস্টের জন্য জনগণকে টাকা খরচ করতে হয় না- এমনকি প্রাইভেট হাসপাতালে পরীক্ষা করতে হলে তার বিল সরকার পরিশোধ করে। সেখানে আমাদের দেশে দরিদ্র মানুষের জন্যও সরকার কর্তৃক ঘোষিত ‘সরকারি রোগ’ করোনা টেস্টের জন্য ২০০ টাকা ও ৫০০ টাকা ফি নির্ধারণের অন্যায় এবং অমানবিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’ এটি বাতিলের জন্য ২০ দল জোর দাবি জানাচ্ছে।সরকার জনগণকে বিভ্রান্ত করেছে এবং তাদের রোগ প্রতিরোধে অমনোযোগী করে জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে ঠেলে দেয়ার অভিযোগ করেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট।সোমবার (৬ জুলাই) দুপুরে জোটের সমন্বয়কারী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন। গতকাল জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকের বিষয়বস্তু নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।নজরুল বলেন, করোনায় চিকিৎসক, চিকিৎসাকর্মী, সেনাবাহিনী ও আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য এবং মহামারিতে দেশের যেসব রাজনৈতিক নেতা, বিশিষ্ট নাগরিক ও সাধারণ মানুষ মারা গেছেন তাদের জন্য সভায় গভীর শোক, আত্মার মাগফিরাত ও পরিবার পরিজনদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানানো হয়েছে। পর্যাপ্ত সুরক্ষা সরঞ্জাম এবং উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে অনেকের মৃত্যুর যেসব খবর গণমাধ্যমে প্রকাশত হয়েছে- সভায় সে বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এসব দুর্বলতা দূর করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানানো হয়।নজরুল বলেন, ২০ দল মনে করে বিদ্যমান সংকট নিরসনে দেশের সব রাজনৈতিক দল, শ্রেণি পেশার সংগঠন, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সম্মিলিত ও সক্রিয় প্রয়াসই শুধু দেশবাসীকে ক্রমবর্ধমান মহামারির ভয়াল প্রকোপ থেকে বাঁচাতে পারে। সরকারে মন্ত্রী, আমলা ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বাগাড়ম্বর করোনা প্রতিরোধে কোনো ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেনি বরং মহামারি বিস্তারে সহযোগিতা করেছে। জনগণকে বিভ্রান্ত এবং তাদের রোগ প্রতিরোধে অমনোযোগী করে জীবন-জীবিকা হুমকরি মুখে ঠেলে দিয়েছে।তিনি বলেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিট নিয়ে অহেতুক সময়ক্ষেপণ, বিদেশ থেকে নিম্ন মানের কিট, মাস্ক, পিপিইসহ সুরক্ষা সামগ্রী আমদানিতে সীমাহীন দুর্নীতি এবং নিম্ন মানের সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহারে অসংখ্য রোগী এবং ফ্রন্টলাইন অনেক স্বাস্থ্যসেবীর অকাল মৃত্যুর কারণ বলে জানা গেছে। এটা শুধু দুর্ভাগ্যজনক নয়, ক্ষমাহীন অপরাধ। যার তদন্ত ও শাস্তি হওয়া দরকার বলে দাবি করে ২০ দল।