আমি জানি আপনারা এক ধরনের আতঙ্ক ও দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
আলোকিত বার্তা:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস জনস্বাস্থ্যসহ বৈশ্বিক অর্থনীতির উপর নেতিবাচক থাবা বসাতে যাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা আভাস দিচ্ছেন। আমাদের উপরও এই আঘাত আসতে পারে।বুধবার সন্ধ্যায় স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি এ সব কথা বলেন।শেখ হাসিনা বলেন,আমি জানি আপনারা এক ধরনের আতঙ্ক ও দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।যাদের আত্মীয়-স্বজন বিদেশে রয়েছেন, তারাও তাদের নিকটজনদের জন্য উদ্বিগ্ন রয়েছেন। আমি সকলের মানসিক অবস্থা বুঝতে পারছি। কিন্তু এই সঙ্কটময় সময়ে আমাদের ধৈর্য এবং সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে।তিনি বলেন, এই ভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের উপদেশ আমাদের মেনে চলতে হবে। আমাদের যতদূর সম্ভব মানুষের ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে। যারা করোনাভাইরাস-আক্রান্ত দেশ থেকে স্বদেশে ফিরেছেন, সেসব প্রবাসী ভাইবোনদের কাছে অনুরোধ- আপনাদের হোম কোয়ারেন্টাইন বা বাড়িতে সঙ্গ-নিরোধসহ যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সেগুলো অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলুন।মাত্র ১৪ দিন আলাদা থাকুন।আপনার পরিবার,পাড়া-প্রতিবেশী, এলাকাবাসী এবং সর্বোপরি দেশের মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য এসব নির্দেশনা মেনে চলা প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কয়েকটি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ সহজ হবে। ঘনঘন সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে। হাঁচি-কাশি দিতে হলে রুমাল বা টিস্যু পেপার দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে নিবেন। যেখানে-সেখানে কফ-থুথু ফেলবেন না। করমর্দন বা কোলাকুলি থেকে বিরত থাকুন। যতদূর সম্ভব ঘরে থাকবেন। অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাবেন না।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাইরে জরুরি কাজ সেরে বাড়িতে থাকুন। মুসলমান ভাইয়েরা ঘরেই নামাজ আদায় করুন এবং অন্যান্য ধর্মের ভাই-বোনদেরও ঘরে বসে প্রার্থনা করার অনুরোধ জানাচ্ছি।আইইডিসিআর’র হটলাইন নম্বর খোলা হয়েছে। এছাড়া সোসাইটি অব ডক্টরস তাদের ৫০০টি নম্বর উন্মুক্ত করে দিয়েছে।বুধবার সন্ধ্যায় স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে এ সব আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে ওই সব নম্বরে যোগাযোগ করুন। সরকার চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়ানোর ক্ষমতা রাখলেও ততটা প্রাণঘাতী নয়। এ ভাইরাসে আক্রান্ত সিংহভাগ মানুষই কয়েক দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে আগে থেকেই নানা রোগে আক্রান্ত এবং বয়স্ক মানুষদের জন্য এই ভাইরাস বেশ প্রাণ-সংহারী হয়ে উঠেছে।তিনি বলেন, সেজন্য আপনার পরিবারের সবচেয়ে সংবেদনশীল মানুষটির প্রতি বেশি নজর দিন। তাকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করুন। তাকে ভাইরাসমুক্ত রাখার সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করুন। আতঙ্কিত হবেন না। আতঙ্ক মানুষের যৌক্তিক চিন্তাভাবনার বিলোপ ঘটায়। সবসময় খেয়াল রাখুন আপনি, আপনার পরিবারের সদস্যরা এবং আপনার প্রতিবেশীরা যেন সংক্রমিত না হন।শেখ হাসিনা বলেন,আপনার সচেতনতা আপনাকে, আপনার পরিবারকে এবং সর্বোপরি দেশের মানুষকে সুরক্ষিত রাখবে।করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কার্যক্রমকে যুদ্ধ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৯৭১ সালে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা শত্রুর মোকাবিলা করে বিজয়ী হয়েছি। করোনাভাইরাস মোকাবিলাও একটা যুদ্ধ। এ যুদ্ধে আপনার দায়িত্ব ঘরে থাকা। আমরা সবার প্রচেষ্টায় এ যুদ্ধে জয়ী হবো, ইনশাআল্লাহ। আবারও বলছি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। সকলে যার যার ঘরে থাকুন, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, নিরাপদ থাকুন।বুধবার (২৫ মার্চ) সন্ধ্যায় করোনাভাইরাস সম্পর্কিত বিষয়সহ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
সরকারপ্রধান বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ ও দিক-নির্দেশনা প্রদানের জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে।এছাড়া সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের জন্য ঢাকায় ছয়টি হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া আরও তিনটি হাসপাতাল প্রস্তুত করা হচ্ছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে করোনাভাইরাস আক্রান্তদের জন্য পৃথক শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।ঢাকায় ১০ হাজার ৫০টিসহ সারাদেশে ১৪ হাজার ৫৬৫টি আইসোলেশন শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সারাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য ২৯০টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখা হয়েছে।এতে মোট ১৬ হাজার ৭৪১ জনকে সেবা দেয়া যাবে।প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে ৮ মার্চ সর্বপ্রথম করোনাভাইরাসবাহী রোগীর অস্তিত্ব চিহ্নিত হয়। এরপর থেকে গতকাল পর্যন্ত ৩৯ জন করোনাভাইরাসবাহী রোগী শনাক্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে পাঁচজন বয়স্ক ব্যক্তি মারা গেছেন। তারা আগে থেকেই নানা অসুখে ভুগছিলেন। সাতজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। গতকাল (মঙ্গলবার) পর্যন্ত সারাদেশে ৩৭ হাজার ৩৮ জনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। এরমধ্যে ৯ হাজার ৮৮৫ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। গত ১৯-এ মার্চ থেকে বিদেশ হতে আগত সব যাত্রীকে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বিমানবন্দর থেকে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সরকারপ্রধান বলেন, সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ঢাকার আশকোনা হাজী ক্যাম্প এবং টঙ্গীর ইজতেমা ময়দান কোয়ারেন্টাইন সেন্টার হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। আমরা ইতোমধ্যেই অন-অ্যারাইভাল ভিসা বন্ধ করে দিয়েছি। বিদেশে অবস্থিত আমাদের মিশনগুলোকে কোনো বিদেশি নাগরিককে ভিসা না দিতে বলা হয়েছে। বিদেশ থেকে যারা আসছেন তাদের তালিকা ঠিকানাসহ জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করছেন।আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসাসেবা দেয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর্মীদেরই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে এবং যথেষ্ট পরিমাণ সরঞ্জাম মজুদ আছে। ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীরও পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। এ ব্যাপারে বিভ্রান্ত হবেন না। স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার বিষয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। গতকাল (২৫মার্চ) পর্যন্ত ১৩ হাজার পরীক্ষা কিট মজুদ ছিল। আরও ৩০ হাজার কিট শিগগির দেশে পৌঁছবে। ঢাকায় আটটি পরীক্ষার যন্ত্র রয়েছে। দেশের অন্য সাতটি বিভাগে করোনাভাইরাস পরীক্ষাগার স্থাপনের কাজ চলছে। আমি স্বাস্থ্যকর্মীসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী এবং প্রশাসনের সদস্যবৃন্দকে এই ভাইরাসের সংক্রমণ বিস্তাররোধে একযোগে কাজ করার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বেতার-টেলিভিশন এবং সংবাদপত্রসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত জনসচেতনতামূলক প্রচারণা জোরদার করা হয়েছে। জেলা, উপজেলা পর্যায়ে লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে।গুজবের বিরুদ্ধে সতর্কতা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ গুজব ছড়াবেন না। গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।