অহেতুক চাকরির পেছনে না ছুটে যুবসমাজকে তাদের মেধা ব্যবহারের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির আহ্বান - Alokitobarta
আজ : শুক্রবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অহেতুক চাকরির পেছনে না ছুটে যুবসমাজকে তাদের মেধা ব্যবহারের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির আহ্বান


আলোকিত বার্তা:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অহেতুক চাকরির পেছনে না ছুটে যুবসমাজকে তাদের মেধা ব্যবহারের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, সরকার চায় এই মুজিববর্ষে দেশে কোনো বেকার থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু চাকরির মুখাপেক্ষী হয়ে বসে থাকলে চলবে না। তরুণদের মাঝে যে সুপ্ত শক্তি রয়েছে- একটা কিছু তৈরি করার, তার চিন্তা এবং মননকে বিকশিত করার, সেই কর্মদক্ষতাকে কাজে লাগাতে হবে। নিজে কাজ করবে এবং আরও ১০ জনকে কাজের সুযোগ করে দেবে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারুণ্যের শক্তিই বাংলাদেশের অগ্রগতি- এই বক্তব্যই আমরা বিশ্বাস করি। সেই লক্ষ্য নিয়েই যুবসমাজকে আরও কর্মক্ষম করে গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার তার তেজগাঁও কার্যালয়ে জাতীয় যুব পুরস্কার-২০১৯ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি ২২ জন আত্মকর্মী এবং ৫ যুব সংগঠনের মাঝে পদক প্রদান করেন। ১৯৮৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৪৪৫ জন আত্মকর্মী সম্মানিত হয়েছেন। শেখ হাসিনা তরুণদের উদ্দেশে বলেন, ‘চাকরি না করে চাকরি দেব বা দিতে পারব। সেই সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। সেই চিন্তা মাথায় থাকতে হবে এবং আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। আত্মমর্যাদাবোধ থাকতে হবে। সেটা থাকলে আমার তো মনে হয়, বাংলাদেশে আর কেউ বেকার থাকবে না।তিনি দুটি ঘটনার উদাহারণ টেনে চাকরি না করলেই কাউকে বেকার ভাবার মানসিকতাও পরিবর্তনের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ফ্রিল্যান্সিং করে মাসে ২-৩ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করা যায়। ‘লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং’ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রয়োজনে কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে নিজস্ব প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে এক একজন স্বাবলম্বী হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনলাইনে কাজ করেই এখন ঘরে বসেই মানুষ অনেক টাকা রোজগার করতে পারছে।

যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেলের সভাপতিত্বে যুব ও ক্রীড়া সচিব আখতার হোসেন স্বাগত বক্তৃতা করেন। যুব ও ক্রীড়া অধিদফতরের মহাপরিচালক আখতারুজ্জামান খান উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে আত্মকর্মী হিসেবে দেশে প্রথম স্থান অধিকারকারী ইঞ্জিনিয়ার আতিকুর রহমান এবং দেশের সেরা যুব সংগঠক (মহিলা) হিসেবে পুরস্কার লাভকারী পারভীন আক্তার নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন।জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ার আতিক যুব উন্নয়ন অধিদফতর থেকে হাঁস-মুরগি এবং গবাদিপশু প্রতিপালনের প্রশিক্ষণ এবং স্বল্পমূল্যেও ঋণ নিয়ে অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ গড়ে তুলেছেন। যার প্রতিষ্ঠানের মূলধনের পরিমাণ ৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা এবং বার্ষিক আয় ১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।

প্ধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে এদেশের যুবসমাজ হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে লড়াই করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। আমরা বিজয়ী জাতি। বিজয়ী জাতি হিসেবেই আমরা এগিয়ে যেতে চাই। আমরা চাই, আমাদের যুবসমাজ আত্মনির্ভরশীল হোক, আত্মমর্যাদাশীল হোক। যুবসমাজ খেলাধুলা, সংস্কৃতি চর্চাসহ সর্বক্ষেত্রেই যেন পারদর্শী হয়ে ওঠে, সেদিকে লক্ষ রেখেই আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি এবং নিচ্ছি। সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এই প্রশিক্ষণটা একেবারে স্কুল পর্যায় থেকে শুরু করতে চাই। সে লক্ষ্যে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই যে কোনো একটা বিষয়ে হাতেকলমে শিক্ষা দেয়া শুরু হবে।

তিনি বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর এ পর্যন্ত আমরা ২ কোটি যুবসমাজের চাকরি এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পেরেছি। ‘স্টার্টআপ’ প্রোগ্রামের (কাজটি শুরু করার জন্য) জন্য সরকার ১০০ কোটি টাকা ‘থোক বরাদ্দ’ দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে উদ্যোক্তা হবে, তারাই এখান থেকে ঋণ পাবে। কাজ করতে পারবে এবং শুরু করলেই কিন্তু ব্যাপকভাবে কাজ করা যায়।

তিনি জানান, তার সরকার সারা দেশে যে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে, সেখানে যেমন খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে তোলা হবে, তেমনি উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণের সুবিধাও রাখা হবে। যেখানে ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।

‘আমাদের ছেলেমেয়েরা অত্যন্ত মেধাবী’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটি স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ নিলেই অনেক বড় বড় কাজ তারা করতে পারে। সে বিশ্বাস আমার আছে।’ সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতির প্রতি তার সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির পুনরুল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক এবং দুর্নীতি থেকে দূরে থাকতে হবে এবং এটা প্রতিহত করতে হবে।

একটা শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। যাতে মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে এবং দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। তিনি জাতির পিতার আত্মত্যাগ ও সংগ্রামের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘একটা কথা মনে রাখতে হবে, জাতির পিতা তার ছাত্রজীবন থেকে এদেশের মানুষের জন্য সংগ্রাম করেছেন। এই দেশ ও দেশের জনগণের স্বার্থে জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময়গুলো তিনি কারাগারে কাটিয়েছেন।

Top