সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে লড়াই করতে হবে।
আলোকিত বার্তা:সরকারের কড়া সমালোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেছেন,সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে লড়াই করতে হবে।ঐক্যবদ্ধ এ লড়াইয়ের জন্য সবাইকে অপেক্ষা করতে বলেন তিনি।শনিবার(২৫ জানুয়ারি)বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ‘২৫ জানুয়ারি বাকশাল প্রতিষ্ঠার দিন’ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গড়া ‘বাকশাল’র মতোই ১১ বছর ধরে বাংলাদেশে একদলীয় শাসন চলছে- এমন মন্তব্য করে মওদুদ আরও বলেন, ‘দেশে এখন কার্যকর কোনো সংসদ নেই। আইনের শাসন নেই। বলতে গেলে ১৯৭৫ সালে দেশে বাকশাল কায়েমের পর যেভাবে কোনো রাজনীতি ছিল না, এখনও সেভাবে কোনো রাজনীতি নেই। আজ খালেদা জিয়াকে একটি মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে নিষ্ঠুর ও অমানবিকভাবে কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি আজ একই সূত্রে গাঁথা। আজকের এ দিনে জাতির প্রত্যয় হলো, দেশে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা পুনর্বহালের জন্য সব গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল-মত-শ্রেণি, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, শ্রমজীবী, ছাত্র-যুবক সব শ্রেণির মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করতে হবে।সেই ঐক্যবদ্ধ লড়াই কবে শুরু হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে।মওদুদ বলেন,আজ দেশে যা চলছে, তার জন্য মূলত দায়ী ১৯৭৫ সালের একদলীয় শাসন ‘বাকশাল’। আজে যা চলছে, তা ওই ১৯৭৫ সালের একদলীয় শাসনের চিন্তা-চেতনা,ধ্যান-ধারণার প্রতিফলন। বাকশাল গঠন করে স্বাধীনতার চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা— সবকিছু তারা ধূলিসাৎ করে দিয়েছিল। বাকশালের মতোই ১১ বছর ধরে দেশে একদলীয় শাসন চলছে।
তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালের এদিনে লাখো শহীদের রক্ত দিয়ে লেখা ১৯৭২ সালের সংবিধানকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে আওয়ামী লীগ দেশে একদলীয়, এক নায়কত্ব, কর্তৃত্ববাদী ও ফ্যাসিবাদী একটি সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিল। এটা ছিল জাতির সঙ্গে সরাসরি বিশ্বাসঘাতকতা। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক সংকটের জন্য দায়ী হলো ১৯৭৫ সালের বাকশাল।সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান সৃষ্টির পর টানা ২৪ বছর এ দেশের কোটি কোটি মানুষ সংগ্রাম করেছে, ত্যাগ স্বীকার করেছে, জুলুম-অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছে। অবশেষে ঔপনিবেশিক শাসন থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করার জন্য ১৯৫২ সালে মাতৃভাষার জন্য রফিক, শফিক, সালাম, বরকত, জব্বার জীবন দেন। সেদিন থেকে বাঙালির অধিকার আদায়ের আন্দোলন শুরু হয়।তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৫৪ সালে ঐক্যবদ্ধ বাঙালিরা তিন জাতীয় নেতা শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা সম্বলিত ২১ দফা দাবির পক্ষে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীকে পরাজিত করে বিরাট বিজয় অর্জন করে। এরপর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ৬৮ সালে আগরতলা মামলার মধ্য দিয়ে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান— এসবই ছিল সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন।মওদুদ বলেন, এ দেশের মানুষ হাজার প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও কোনো দিন আপস করেনি। ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে এ দেশের মানুষ গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য পূর্ব পাকিস্তানের ১৫৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭ আসনে জয়যুক্ত করে সারা পাকিস্তানে জাতীয় সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে সাহায্য করে। কিন্তু এ বিজয় পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী মেনে নিতে পারেনি। তারা বন্দুকের নল দিয়ে জনগণের রায়কে ছিনিয়ে নিতে চেয়েছিল। অবশেষে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।কিন্তু স্বাধীনতার মাত্র চার বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সংসদে একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল কায়েম করে স্বাধীনতার মূল যে চেতনা বহুদলীয় গণতন্ত্র— সেটাকে পুরোপুরি ধ্বংস করে ফেলা হয়। আজ সেই ২৫ জানুয়ারি। দিনটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। আজ যারা তরুণ, তাদের কাছে হয়তো বিষয়টি সেভাবে আমরা তুলে ধরতে পারিনি। বিষয়টিকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতেই আজকের এ সংবাদ সম্মেলন’— বলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু, শামসুজ্জামান দুদু ও শওকত মাহমুদ।