রাষ্ট্রপতিকে টেলিনরের উকিল নোটিশ জিপির বিরুদ্ধে অডিট আপত্তি - Alokitobarta
আজ : বৃহস্পতিবার, ২০শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাষ্ট্রপতিকে টেলিনরের উকিল নোটিশ জিপির বিরুদ্ধে অডিট আপত্তি


আলোকিত বার্তা:নিরীক্ষা আপত্তির সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকার বিষয়ে ‘সালিশে’ (আর্বিট্রেশন) যাওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতিকে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছে মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের মালিক কোম্পানি টেলিনর।নোটিশে বলা হয়েছে যদি এর পরও বিষয়টির সমাধান না হয় তাহলে তারা আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করবে।ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে টেলিকম বিটে কর্মরত সংবাদিকদের সংগঠন টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের (টিআরএনবি) সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে এ খবর জানান।

সংগঠনের সভাপতি মুজিব মাসুদের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল আনোয়ার খান শিপু, সাবেক সভাপতি শাহেদ সিদ্দিকী, সজল জাহিদ, রাশেদ মেহেদী প্রমুখ।মন্ত্রী বলেন, “জিপি সিঙ্গাপুরের একটি ল’ ফার্মের মাধ্যমে আমাদের রাষ্ট্রপতিকে উকিল নোটিশ দিয়েছে আর্বিট্রেশনে যাওয়ার জন্য। আমি মনে করি এটি খুব দুঃখজনক। বাংলাদেশে ব্যবসা করবে একটি প্রতিষ্ঠান, সেই প্রতিষ্ঠানটি আমাদের রাষ্ট্রপতিকে উকিল নোটিশ দিয়ে আর্বিট্রেশনের জন্য চাপ দেবে, এটা বোধহয় খুব সহজে গ্রহণ করার মতো অবস্থা না।” তিনি বলেন, আসল কথা হল কোনো ধরনের হুমকি-ধমকি দিয়ে চাপে ফেলে কোনো কিছু আদায় করা সম্ভব নয়।

তবে টেলিনরের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এটা একান্তই তাদের পদক্ষেপ, গ্রামীণফোনের সঙ্গে এর সম্পৃক্ততা নেই। টেলিনর গ্রুপের এশিয়া কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক ক্যাথরিন স্ট্যাং লান্ড এক বিবৃতিতে বলেন, “বাংলাদেশে টেলিনর গ্রুপের সম্পদের সুরক্ষা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিরোধ মীমাংসার জন্যই টেলিনর একটি নোটিশ পাঠিয়েছে এবং সেখানে বাংলাদেশ সরকারকে আলোচনার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, যাতে একটি গঠনমূলক সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হয়।”

নিরীক্ষা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গ্রামীণফোনের কাছে ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা পাওনা চেয়ে গত এপ্রিল মাসে চিঠি দিয়েছিল টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।তাতে কাজ না হওয়ায় আরোপ করা হয় কড়াকড়ি। গ্রামীণফোনের পাশাপাশি ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাওনার দাবিতে আরেক অপারেটর রবির ক্ষেত্রেও বিটিআরসি একই পদক্ষেপ নেয়। বিটিআরসি সালিশের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তিতে রাজি না হওয়ায় দুই অপারেটর আদালতে যায়।টিআরএনবি সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়ে টেলিযোগাযোগমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এটা বুঝি, ব্যবসা যদি কেউ করে, তাহলে ব্যবসার ক্ষেত্রে নানা ধরনের সমস্যা থাকবে, আমাদের দায়িত্ব ফেসিলেটেট করা, আমরা তাদের করব।’গ্রামীণফোনের উকিল নোটিশের বিষয়ে সরকার কী পদক্ষেপ নেবে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “যে নোটিশ দেয়া হয়েছে, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত অবহিত করা আছে।

সবাই বিষয়টাকে জানেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের আদালতে মামলা করে বসে থাকে, আদালতের বাইরে আর্বিট্রেশন করার ?সুযোগ নাই। আদালত যদি হুকুম দেন আর্বিট্রেশন করার, তাহলে করতে পারব।যে দেশে বিজনেস করে সে দেশের আইন আদালত অমান্য করে দুনিয়ার কোনো জায়গায় গিয়ে অন্য বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা নাই। আমরা সঠিক পথে আছি, আদালত তার দৃষ্টিভঙ্গি চমৎকারভাবে করেছে।গ্রামীণফোন আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে কিনা। উত্তরে মন্ত্রী বলেন, “নোটিশে তারা এরকম একটি ধারণা দিয়েছে যদি আর্বিট্রেশন না হয় তাহলে আন্তর্জাতিক আদালতে যাবে। তবে আমার যেটা অবজারভেশন, বাংলাদেশের আদালতে হেরে গিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে কিছু একটা করা যাবে আমি এটা বিশ্বাস করি না। তার মতে অংকটা খুবই সহজ, ব্যবসাটা বাংলাদেশেই করতে হবে, বাংলাদেশের আইনকানুন না মেনে আন্তর্জাতিক আদালত বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা করে দেবে না।এই বিরোধ নিয়ে সরকারের অবস্থান তুলে ধরে মোস্তাফা জব্বার বলেন, “আমরা সহানুভূতিশীল, আলোচনায় বসতে ইচ্ছুক। আমরা সমস্যার সমাধান করার জন্য সব ধরনের উদ্যোগ নিতে প্রস্তুত। কিন্তু এর মধ্যে থেকে কেউ জাতীয় স্বার্থ বিপন্ন করতে চাইলে আমরা সেটি করতে পারি না।

বাংলাদেশের সুপ্রিমকোর্ট গ্রামীণফোনের বিষয়ে যে নির্দেশনা দিয়েছে, তা মেনে চলা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “রবি ইতিমধ্যে প্রস্তাব দিয়েছে মামলা তুলে নিতে চায়। আমরা বলেছি আমরা তো মামলায় যাইনি, ওরা যদি মামলা তুলে আলোচনায় বসতে কোনো আপত্তি নেই। তবে মামলা চলাকালীন আলোচনা করতে পারি না, কারণ সেটি আদালত অবমাননা হয়ে যাবে।”

আর গ্রামীণফোন যতক্ষণ না আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী দুই হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করছে, ততক্ষণ তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনায় বসা সম্ভব না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এ টাকা দেয়ার পর আদালত নির্ধারণ করবেন পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে।

রবি যদি মামলা প্রত্যাহার করে আসে, তাহলে আলোচনায় বসতে রাজি আছি।” সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্ক এখন ভয়াবহ পর্যায়ে চলে গেছে।তারা কোনো ধরনের কোয়ালিটি সার্ভিস দিতে পারছে না। মন্ত্রী নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, তার বাসা থেকে অফিসে আসার পথে ৮ বার কল ড্রপ হয়। তাদের যে পরিমাণ গ্রাহক আছে সে অনুযায়ী ৩০ শতাংশ নেটওয়ার্ক নেই। গ্রামীণফোন গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। এসব বিষয়ে গ্রামীণের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে গেলেই তারা আদালতে চলে যায়।

Top