ব্যাংকের ঋণে সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক আজই (রোববার) সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেবে। - Alokitobarta
আজ : শুক্রবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ব্যাংকের ঋণে সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক আজই (রোববার) সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেবে।


আলোকিত বার্তা:ব্যাংকের ঋণে সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক আজই (রোববার) সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেবে। কমিটি এ বিষয়ে পর্যালোচনা করে সাতদিন পর প্রতিবেদন দাখিল করবে। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। এছাড়া সুদহারে সিঙ্গেল ডিজিট জানুয়ারিতে (২০২০) কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।রোববার (১ ডিসেম্বর) পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সঙ্গে বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন,আমাদের দেশে বেকারত্ব দিন দিন বাড়ছে।এ বেকারত্ব কমাতে হলে উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগের কোনো বিকল্প নেই।উৎপাদনশীল খাতকে বাঁচাতে ব্যাংক ঋণের সুদ হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত সুদহার এক অঙ্কে নেমে আসেনি কেন এবং খেলাপি ঋণ দিন দিন কী কারণে বাড়ছে সেটা তদারকির জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে। আগামী ৭ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাবে কমিটি। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী ১ জানুয়ারি থেকে এ কার্যক্রম শুরু হবে।কমিটিতে কারা থাকবে এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, কমিটিতে একজন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান অর্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত হবে। কমিটির সদস্য সংখ্যা হতে পারে মোট সাতজন।

দেশের খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে স্বীকার করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ পুনঃতফসিলের সুবিধা দেয়া হয়েছিল কিন্তু হাইকোর্ট সেটাতে স্থগিতাদেশ দেয়ায় ব্যবসায়ীরা এ সুবিধা নিতে পারেনি। তাই এ কোয়ার্টারে খেলাপি বেড়েছে। তবে বর্তমানে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাই ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ অবশ্যই কমবে।মোস্তফা কামাল বলেন, খেলাপি ঋণ কমাতে শুরু থেকেই আমরা শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে পারিনি। এ কারণেই সুদহার বৃদ্ধি পেয়েছে। সুদহার বৃদ্ধি পেলে একটি দেশের উৎপাদনশীল খাত, শিল্প খাত উন্নত হতে পারে না। এ মুহূর্তে যেকোনোভাবে এ খাতকে এগিয়ে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর জিডিপি কমলেও আমাদের দেশের জিডিপি কমার কোনো ভয় নেই। কারণ, আমাদের দেশের উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা কখনো কমবে না, বরং বাড়বে।এসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির কাছে খেলাপি ঋণ বিক্রির বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, এসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির কাছে খেলাপি ঋণ বিক্রিসহ কয়েকটি প্রক্রিয়া বিবেচনাধীন রয়েছে। যেগুলো ক্যাবিনেটে আলোচনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে। এসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির কাছে খেলাপি ঋণ বিক্রির বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখা হচ্ছে।
ব্যাংক মালিকরা ঋণের সুদহার এক অঙ্কে (সিঙ্গেল ডিজিট) নামিয়ে আনতে গত বছরের আগস্টে প্রধানমন্ত্রীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ওই প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে ব্যাংক মালিকরা সরকারের কাছ থেকে একের পর এক সুবিধা নিয়েছেন। কিন্তু ঋণে সিঙ্গেল ডিজিট বা এক অঙ্কের সুদহার বাস্তবায়ন এখনও অধরাই রয়ে গেছে।বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১৬ মাসে প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া এ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছে সরকারি-বেসরকারি মিলে মাত্র ১১টি ব্যাংক। এখনও বেসরকারি খাতের ৩৭টি ব্যাংকের ঋণের সুদহার ১২-২০ শতাংশের ঘরে।

সূত্র জানায়, ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যাংক মালিকরা সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখা, বাণিজ্যিক ব্যাংক কর্তৃক কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সংরক্ষিত নগদ জমা বা সিআরআর সংরক্ষণের হার কমানো এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে স্বল্পমেয়াদী ধারের নীতি নির্ধারণী ব্যবস্থা রেপোর সুদহার কমিয়ে নিয়েছে।এসব সুবিধা দেয়ার লক্ষ্যই ছিল সুলভ বিনিয়োগ পরিবেশ নিশ্চিতের মাধ্যমে বিনিয়োগ উৎসাহিত করা। নানা সুবিধা পাওয়ার পর ব্যাংকের উদ্যোক্তারা গত বছরের জুনে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণের ঘোষণা দেন এবং একই বছরের ১ জুলাই থেকে এটি কার্যকর হওয়ার কথা জানান। তবে গত ১৬ মাসে বেসরকারি ৪১ ব্যাংকের মধ্যে মাত্র তিনটি ব্যাংক এক অঙ্কের ঋণের সুদহার কার্যকর করেছে। গত বছরই সরকারি খাতের আটটি ব্যাংক ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনে।এদিকে সর্বশেষ গত ৫ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও ব্যাংক ঋণের সুদহার এক অঙ্কের ঘরে নামিয়ে আনার নির্দেশ দেন।

Top