টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এখন থেকে আর ঢালাও প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হচ্ছে না।
আলোকিত বার্তা:টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এখন থেকে আর ঢালাও প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হচ্ছে না।নতুন প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি করা ছাড়াও তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করেছে পরিকল্পনা কমিশন।এরই অংশ হিসেবে চলতি(২০১৯-২০)অর্থবছর ৪৭৭টি প্রকল্পকে উচ্চ অগ্রাধিকারের তালিকায় স্থান দেয়া হয়েছে।সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকের পর মধ্যম অগ্রাধিকারের তালিকায় স্থান পেয়েছে ২৮৮টি প্রকল্প এবং নিম্ন অগ্রাধিকারে ২৮০টি।সম্প্রতি দ্বি-পক্ষীয় সিরিজ বৈঠকের পর অগ্রাধিকারের এ ক্রম ঠিক করা হয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দহীন অননুমোদিত নতুন এক হাজার ৪৫টি প্রকল্প বাছাই করে এই তিন ক্যাটাগরিতে ফেলা হয়েছে।
জানতে চাইলে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মো. নূরুল আমিন শনিবার বলেন,পাইপলাইনে থাকা নতুন প্রকল্পগুলো থেকে অগ্রাধিকার তালিকা ধরে অনুমোদন দেয়া হবে।সব মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসে কথা বলেছি।এছাড়া এসডিজির বাস্তবায়ন,তৈরি হতে যাওয়া অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা,নির্বাচনী ইশতেহার এবং নতুন এমপিদের চাহিদা গুরুত্ব দেয়া হয়েছে প্রকল্পের গুরুত্ব নির্ধারণে।কেননা সব প্রকল্প তো একবারে অনুমোদন দেয়া সম্ভব নয়।
আমরা চাচ্ছি জনগুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরি বিবেচনা করে প্রকল্পগুলো অনুমোদন দিতে।এতে সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার যেমন নিশ্চিত হবে,তেমনি জনগণ দ্রুত সুফল ভোগ করবে এরকম প্রকল্পগুলোই আগে চলে এসেছে।পরিকল্পনা কমিশন বলছে,সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে থাকা ৪৭৭টি প্রকল্পের মধ্যে ৪৬টি প্রকল্পই সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের।এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেছেন,সরকার যোগাযোগ,অবকাঠামো খাতে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।এ ক্ষেত্রে দেশের সব মহাসড়ক পর্যায়ক্রমে চার লেন করা হবে।তাছাড়া বিদ্যমান সড়ক ও মহাসড়ক সংস্কার ও প্রশস্তকরণের উদ্যোগ থাকবে।তাই এখন বেশি বেশি সড়কের প্রকল্প দেখতে পাবেন।
উচ্চ অগ্রাধিকার তালিকায় আরও রয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের ৩৭টি প্রকল্প।এ ছাড়া পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ৩৯টি,পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাতটি, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তিনটি, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের পাঁচটি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দুটি, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ১০টি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ১৭টি, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তিনটি, স্থানীয় সরকার বিভাগের ৪১টি, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের ছয়টি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পাঁচটি, ভূমি মন্ত্রণালয়ের তিনটি, শিল্প মন্ত্রণালয়ের ১৩টি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তিনটি, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের ১৩টি, বিদ্যুৎ বিভাগের তিনটি, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের তিনটি, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ১৫টি, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ছয়টি, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ১২টি এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের পাঁচটি প্রকল্প রয়েছে। এছাড়াও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুটি, আইন ও বিচার বিভাগের পাঁচটি, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের একটি, পরিকল্পনা বিভাগের পাঁচটি, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সাতটি, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ২৪টি, জননিরাপত্তা বিভাগের ১১টি, সুরক্ষা সেবা বিভাগের আটটি, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের চারটি, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চারটি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একটি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুটি, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পাঁচটি, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের তিনটি, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ১০টি, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ১৩টি, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ১৮টি, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সাতটি, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের পাঁচটি, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তিনটি, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ১২টি, তথ্য মন্ত্রণালয়ের পাঁচটি, বাস্তবায়ন-পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের একটি, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের একটি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ১০টি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ছয়টি, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ছয়টি এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের চারটি প্রকল্প রয়েছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের তালিকায়।
তালিকা তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মো. খলিলুর রহমান বলেন,আমাদের আর্থিক সামর্থ্য ও বাস্তবায়ন সক্ষমতার মধ্যে ঘাটতি আছে।সে কারণে সব প্রকল্প হয়তো চলতি অর্থবছর অনুমোদন দেয়া নাও হতে পারে। তাই উৎপাদনশীল এবং টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ- এরকম প্রকল্পগুলোর অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রথমবারের মতো এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
উচ্চ অগ্রাধিকারে থাকা প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে-চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্প,বাংলাদেশ (রহনপুর)-ভারত (ঝাড়খণ্ড) ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন নির্মাণ এবং প্রধান বিদ্যুৎ পরিদর্শকের দফতরের ডিজিটালাইজেশন প্রকল্প। এছাড়া বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে সাবওয়ে নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা কার্যক্রম। নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা হয়ে জয়দেবপুর পর্যন্ত ইলেকট্রিক ট্র্যাকশন ওভারহেড ক্যাটেনারি সাব-স্টেশনসহ প্রবর্তনের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা।
রেলওয়ের দক্ষিণাঞ্চলে একটি ওয়ার্কশপ নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা।গোবরা হতে পিরোজপুর পর্যন্ত ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণ এবং বাগেরহাটে রেলসংযোগ স্থাপনের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বিশদ ডিজাইন।রেলওয়ের জন্য ২১টি এমজি লোকোমোটিভ নবরূপ বা পুনর্বাসন। বাংলাদেশ রেলওয়ের রোলিংস্টক অপারেশন উন্নয়ন (কারিগরি সহায়তা)। কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর রেল সেতু নির্মাণ।ঢাকা-চট্টগ্রাম ভায়া কুমিল্লা/লাকসাম দ্রুতগতির রেলপথ নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা এবং বিশদ ডিজাইন। রেলওয়ের কংক্রিট স্লিপার প্লান্ট আধুনিকায়নের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বিশদ ডিজাইন।রেলওয়ের ১১টি মিটার গেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ পুনর্বাসন। বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রেনিং একাডেমি আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষাসহ বিশদ নকশা প্রণয়ন এবং ঢাকা-মানিকগঞ্জ-পাটুরিয়া রেলপথ নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বিশদ ডিজাইন ইত্যাদি।