টি ২০তে ভারতের বিপক্ষে নয় ম্যাচে এটি বাংলাদেশের প্রথম জয়।
আলোকিত বার্তা:ভারতের মাটিতে ভারতের সঙ্গে লড়াই ক্রিকেটের সবচেয়ে কঠিন কাজগুলোর একটি।বাংলাদেশের জন্য এবার চ্যালেঞ্জটা ছিল আরও কঠিন। দলে নেই বড় দুই ভরসা সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল।ভারত সফরের ঠিক আগে নিষেধাজ্ঞার খড়গে আচমকা সাকিবকে হারানোর ধাক্কা দেশের ক্রিকেটের ভিতই নাড়িয়ে দিয়েছিল।কিন্তু সেই শোককেই শক্তিতে পরিণত করে খর্ব শক্তি ও ভাঙা মনোবল নিয়ে প্রায় অসাধ্য সাধন করল বাংলাদেশ।টি ২০তে প্রথমবারের মতো হারিয়ে দিল ভারতকে।আন্তর্জাতিক টি ২০ ইতিহাসের এক হাজারতম ম্যাচে এই সংস্করণে নিজেদের অন্যতম সেরা জয় পেল টাইগাররা।
দেশের ক্রিকেটের ঘোর দুঃসময়ে ম্যাচসেরা মুশফিকুর রহিমের মহাকাব্যিক ফিফটি দলকে এনে দিয়েছে বহুল কাঙ্ক্ষিত এই জয়।রোববার দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি ২০তে স্বাগতিক ভারতকে সাত উইকেটে হারিয়ে দুঃসময়কে দারুণভাবে পাল্টা জবাব দিল বাংলাদেশ।এ জয়ে রাষ্ট্রপতি মো.আবদুল হামিদ,প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।রাষ্ট্রপতি বলেন,আমাদের খেলোয়াড়দের টিম স্প্রিট ও তাদের অসাধারণ নৈপুণ্য দেখে গোটা জাতি গর্বিত।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ভবিষ্যতেও বিজয়ের এ ধারা অব্যাহত রাখবে বলে শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেন। এছাড়াও অভিনন্দন জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল।উজ্জীবিত বোলিংয়ে ভারতকে ছয় উইকেটে ১৪৮ রানে বেঁধে ফেলে অর্ধেক কাজ সেরে রেখেছিলেন বোলাররা। এরপর মুশফিকের ৪৩ বলে ৬০* রানের অনবদ্য ইনিংসে তিন বল বাকি থাকতেই জয়ের ঠিকানায় পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
ছয় মেরে জয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ।টি ২০তে ভারতের বিপক্ষে নয় ম্যাচে এটি বাংলাদেশের প্রথম জয়। প্রথম জয় ধরা দিতে পারত ২০১৬ টি ২০ বিশ্বকাপে। সেবার বাঙ্গালোরে শেষ ওভারে মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহর ভুলে নিশ্চিত জেতা ম্যাচ এক রানে হেরে গিয়েছিল।
কাল সেই ট্রাজেডির মধুর প্রতিশোধই নিলেন দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দুই ব্যাটসম্যান।১৪৯ রানের লক্ষ্য তাড়ায় প্রথম ওভারে লিটন দাসকে হারানোর ধাক্কা সামলে দলকে এগিয়ে নেন অভিষিক্ত মোহাম্মদ নাইম ও সৌম্য সরকার।২৮ বলে ২৬ রান করা নাইমের বিদায়ের পর তৃতীয় উইকেটে ৬০ রান যোগ করে দলকে কক্ষপথে রাখেন সৌম্য ও মুশফিক।৩৫ বলে ৩৯ রান করা সৌম্য বিদায় নেন ১৭তম ওভারে। কিন্তু ভারতকে ম্যাচে ফেরার সুযোগ দেননি মুশফিক। শেষ দুই ওভারে দরকার ছিল ২২ রান।খলিল আহমেদের করা ১৯তম ওভার থেকে ১৮ রান তুলে নিয়ে সব রোমাঞ্চে জল ঢেলে দেন মুশফিক।
তার ৬০*রানের ইনিংসে আটটি চার ও একটি ছক্কা।অন্যপ্রান্তে সাত বলে ১৫ রানে অপরাজিত থাকেন মাহমুদউল্লাহ।বৃহস্পতিবার রাজকোটে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ।এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ছয় উইকেটে ১৪৮ রান তুলেছিল ভারত।সেটাও সম্ভব হয়েছে শেষের ঝড়ে।শেষ দুই ওভারে ৩০ রান না দিলে আরও সহজ লক্ষ্য পেত বাংলাদেশ।ভারতের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪১ রান ওপেনার শিখর ধাওয়ানের। তবে ভারতকে দেড়শ’র কাছাকাছি নিয়ে যেতে সবচেয়ে বড় অবদান ওয়াশিংটন সুন্দর(পাঁচ বলে ১৪*)ও ক্রুনাল পান্ডিয়ার (আট বলে ১৫*)।বাংলাদেশের পক্ষে শফিউল ইসলাম ও আমিনুল ইসলাম দুটি করে এবং আফিফ হোসেন নেন এক উইকেট। বল করেছেন আটজন।এর আগে দিল্লির তীব্র বায়ুদূষণের মধ্যে রাতে শিশিরের প্রভাবের কথা মাথায় রেখে টস জিতে ফিল্ডিং নিতে দু’বার ভাবেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ।
প্রথম ওভারেই ভারতকে কাঁপিয়ে দিয়ে অধিনায়কের সিদ্ধান্তকে যথার্থ প্রমাণ করেন শফিউল ইসলাম।দুটি বাউন্ডারি হজমের পর ওভারের শেষ বলে শফিউল তুলে নেন রোহিত শর্মাকে।
রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি ভারত অধিনায়ক।পাঁচ বলে নয় রানের পথেই অবশ্য আন্তর্জাতিক টি ২০তে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটি নিজের করে নেন রোহিত।প্রথম স্পেলে উইকেট না পেলেও পাওয়ার প্লেতে দারুণ বোলিং করেছেন তিন বছর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা আল-আমিন হোসেন। প্রথম দুই ওভারে মাত্র ছয় রান দেন তিনি।বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে পাওয়ার প্লেতে পাওয়ার ক্রিকেট খেলতে পারেননি স্বাগতিকরা। প্রথম ছয় ওভারে এক উইকেটে মাত্র ৩৫ রান তুলতে পারে ভারত।সপ্তম ওভারে আক্রমণে এসে ভারতকে দ্বিতীয় ধাক্কা দেন তরুণ লেগ-স্পিনার আমিনুল ইসলাম। ১৭ বলে ১৫ রান করে আমিনুলের প্রথম শিকারে পরিণত হন লোকেশ রাহুল।রানের গতি বাড়াতে প্রতি-আক্রমণের রাস্তা বেছে নেন শ্রেয়াস আইয়ার। দুই ওভারে দুটি ছক্কা মারেন আমিনুলকে। শেষ পর্যন্ত ১১তম ওভারে আমিনুলই ফেরান ১৩ বলে ২২ রান করা শ্রেয়াসকে।
একপ্রান্ত আগলে রাখা শিখর ধাওয়ান ১৫তম ওভারে রানআউটে কাটা পড়লে আরও চাপে পড়ে যায় ভারত। ৪২ বলে ৪১ রান করেন ধাওয়ান। ১৫ ওভার শেষে ভারতের সংগ্রহ ছিল চার উইকেটে ৯৫ রান।পরের ওভারে অভিষিক্ত শিভাম দুবেকে এক রানেই থামিয়ে দেন আফিফ হোসেন। ২৬ বলে ২৭ রান করা ঋষভ পন্তকে ফেরান শফিউল। তারপরও শেষের ঝড়ে ছয় উইকেটে ১৪৮ রানের লড়াকু পুঁজি পেয়ে যায় ভারত।ক্রুনাল পান্ডিয়া (আট বলে ১৫*) ও ওয়াশিংটন সুন্দরের (পাঁচ বলে ১৪*) খুনে ব্যাটিংয়ে শেষ দুই ওভারে ভারত তুলেছে ৩০ রান।