সহযোগী সংগঠনের নেতাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে বিব্রত আওয়ামী লীগ।
আলোকিত বার্তা:সহযোগী সংগঠনের নেতাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে বিব্রত আওয়ামী লীগ।এ বিষয়ে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর মনোভাবকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা।একই সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগের মতো আওয়ামী লীগেও শুদ্ধি অভিযানের পক্ষে তারা।কষমতাসীন দলের এসব নীতিনির্ধারক প্রায় একই সুরে বৃহস্পতিবার বলেন,জাতীয় সম্মেলনের আগে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোয় গুণগত পরিবর্তন আনতে কঠোর অবস্থানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ-টেন্ডারবাজসহ অপকর্মের সঙ্গে যুক্তদের দলে জায়গা হবে না বলে হুশিয়ারিও উচ্চারণ করেছেন তিনি। তার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির অংশ হিসেবে ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই পদ থেকে শোভন-রাব্বানীকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
আইনি ব্যবস্থা নেয়া শুরু হয়েছে যুবলীগের ‘বিতর্কিত’ নেতাদের বিরুদ্ধেও। দলের আসন্ন সম্মেলনে কমিটির সব স্তরে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি এবং জনপ্রিয় নেতাদের দিয়ে একটি শক্তিশালী ও গ্রহণযোগ্য দল গড়তেই এই সিদ্ধান্ত। এই অবস্থান থেকে পিছু হটার কোনো সুযোগ নেই।আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান বৃহস্পতিবার বিকালে বলেন,এটা নতুন কিছু নয়। অতীতেও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বর, ক্যাবিনেট সদস্য, দলীয় সংসদ সদস্যসহ অনেকের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
আমরা গণতন্ত্র ও সুশাসনের কথা বলেছি এবং তা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এছাড়া কোনো নেতা যখনই সংগঠনবিরোধী কাজ করেছে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।এই ধারাবাহিকতায় ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এটিকে হঠাৎ করে ‘যুদ্ধ অভিযান’ বলা যাবে না। তিনি আরও বলেন, দলে শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং দলকে শক্তিশালী করার পক্রিয়ার অংশ হিসেবেই এটা হচ্ছে।
একই বিষয়ে দলের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড.আবদুর রাজ্জাক বলেন,আমি খুবই বিব্রতবোধ করি। এটা কোনো দিনই আমরা আশা করি না- দলের নেতাকর্মীরা এই ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হবে।তিনি আরও বলেন,কার্পেট দিয়ে ঢেকে রাখলেই তো আর ধুলা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না। তাই নেত্রী (শেখ হাসিনা) যে সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন, এটা সবার জন্য ভালো।সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতারা কোথায় কী করছেন, তা দলের বিভিন্ন সূত্র এবং একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে নিয়মিত মনিটরিং করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।তাদের অনেকের আমলনামা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছেন তিনি। এ ব্যাপারে বিতর্কিতদের একাধিকবার সতর্ক করেছিলেন, অনেকেই নিজেদের শুধরে নিচ্ছেন। তবে অনেকেই বেপরোয়া জীবনযাপনই করছেন। সে কারণেই তিনি এখন ‘অ্যাকশন’ শুরু করেছেন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এখানে কে কোন দল করে বা না করে, তার ওপর ভিত্তি করে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।দলের নাম ভাঙ্গিয়ে বা পরিচয়ে এটা হয়তো বিস্তার করছে। কিন্তু সরকার বা আওয়ামী লীগ এটিকে কখনোই প্রশ্রয় দেয় না। তিনি আরও বলেন, এখান থেকে পিছু হটার কোনো সুযোগ নেই।কারণ এখান থেকে পিছু হটলে সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। সরকারের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। আর নিজের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, সেরকম কোনো কাজ তো সরকার করবে না।
এদিকে এ বিষয়ে বুধবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগে অপকর্ম হয়নি, কেউ করেনি এটা বলি না। অপকর্ম হলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিই। এটা অন্তত আওয়ামী লীগে হয়, অন্য কোনো দল ব্যবস্থা নেয় না। বিএনপিও ব্যবস্থা নেয় না।দলীয় সূত্রমতে, আওয়ামী লীগপ্রধান শেখ হাসিনা দলের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে সরিয়ে দেয়ার কথা বলার পর আওয়ামী লীগের দু-একজন নেতা প্রথমে তাদের পক্ষে কথা বলার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পরে তার (শেখ হাসিনার) কঠোর মনোভাবের কথা বুঝতে পেরে সে পথ থেকে সরে আসেন ওই নেতারাও। একই অবস্থা হয়েছে যুবলীগের ক্ষেত্রে। আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে যুবলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর বিষোদ্গারের পরে এ নিয়ে কোনো কথাই বলেছেন না কেউ।
সর্বশেষ যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতারের পর যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এসময় গণমাধ্যম ও প্রশাসনের ওপর ক্ষোপ প্রকাশ করলেও দলীয় সিদ্ধান্তের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।ওমর ফারুক চৌধুরী বলেছেন,গোয়েন্দারা এখন যদি এতই তৎপর,পত্রিকার সাংবাদিকরা যদি এতই তথ্য পান,তাহলে কেন এতদিন বলেননি? কেন লেখেননি?আপনি অতীতে জানতেন?বিষয়টি লুকিয়ে রেখেছিলেন?যদি সেদিন থেকেও ব্যবস্থা নিতেন,তাহলে এতদূর পর্যন্ত আসত না। তিনি বলেন,আমি আমার ব্যর্থতা অস্বীকার করছি না,আমি আমার প্রতিটি কর্মে হাততালি পাব,তা বলছি না।দুঃষ্কর্মের জন্য নিগৃহীত হব না, এটা হতে পারে না। হঠাৎ এমন অভিযোগ কেন? দলকে নিষ্ক্রিয় করতে আসছেন? বিরাজনীতিকরণের কাজ করছেন? সংগঠনকে নিষ্ক্রিয় করার ষড়যন্ত্র করতে আসছেন?এদিকে বুধবার রাজধানীর বেশ কয়েকটি‘ক্যাসিনোতে’অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনী।খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া এবং যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ছাড়াও এসব ক্যাসিনোর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়ে গণমাধ্যমে নাম আসে আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে।
তাদের মধ্যে রয়েছেন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।তিনি ক্যাসিনো চালানো ইয়াংমেন্স ক্লাবের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান।এছাড়া ক্যাসিনো ব্যবসার অভিযোগে অভিযান চালানো আরেক ক্লাব ওয়ান্ডারার্সের সভাপতি আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট মোল্লা আবু কাওছার।এছাড়া ওই এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর মমিনুল হক সাইদের বিরুদ্ধে এই ক্যাসিনোর সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে।