কমিটি ভেঙে দিতে নির্দেশ!শোভন-রাব্বানীতে ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী
আলোকিত বার্তা:নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে মেয়াদ শেষের আগেই কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাতে দলের স্থানীয় সরকার ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভায় তিনি এ নির্দেশ দেন।সভায় উপস্থিত আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বিবার্তাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।সূত্র জানায়,জাতীয় সংসদের রংপুর-৩ আসনে উপনির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করতে আয়োজিত এ বৈঠকে ছাত্রলীগের প্রসঙ্গ তোলেন স্বয়ং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এসময় শুধু ছাত্রলীগ নিয়ে কমপক্ষে ১০ মিনিট আলোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন,ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। বিশেষ করে তারা দুপুরের আগে ঘুম থেকে ওঠে না।এ সময় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলনে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানে পৌঁছানোর পর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক অনুষ্ঠানে যান। সিনিয়র নেতা তোফায়েল আহমেদকেও তারা বসিয়ে রেখেছেন।
এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ইডেন কলেজের সম্মেলনের দুই মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও কমিটি দিতে না পারা,কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি করার বিষয়ে অর্থনৈতিক লেনদেনের অভিযোগ আসা,কেন্দ্রীয় কমিটিতে অনেক বিতর্কিত, বিবাহিত ও জামায়াত-বিএনপি সংশ্লিষ্টদের পদায়ন করার বিষয়ে এ সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।একইসঙ্গে কমিটি থেকে বাদ পড়াদের সংখ্যা উল্লেখ করে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পরও তারা কারা, সেটি স্পষ্ট না করা ও পরে বাদ দেয়ার ঘোষণা কার্যকর না করা, পাশাপাশি অনেক ত্যাগীকে বাদ দেয়ার বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসে।
এদিকে সভা শেষে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্য ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গণভবনে অপেক্ষা করেন বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের দুজন জ্যেষ্ঠ নেতা তাদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা না করার পরামর্শ দিলেও তারা যাননি। পরে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাদের চলে যেতে বললে তারা গণভবন থেকে চলে আসেন।ছাত্রলীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গণভবন ত্যাগ করে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী হাতিরপুলের রাব্বানীর বাসায় গিয়ে ওঠেন এবং সেখানে তারা বৈঠকে বসেন।সার্বিক বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা রিসিভি করেননি।
গত বছর ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের সম্মেলন হওয়ার পর ৩১ জুলাই আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতিতে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।তারপর দ্রুত সময়ের মধ্যে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার কথা থাকলেও প্রায় ১০ মাস পর চলতি বছরের ১৩ মে ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়।এ কমিটি ঘোষণার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন করে অসন্তোষ জানান পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া নেতারা। তারা কমিটিতে বিবাহিত, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী, চাকরিজীবী ও বিভিন্ন মামলার আসামি রয়েছে দাবি করে তা পুনর্গঠনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।এ নিয়ে পদবঞ্চিতরা দুইবার হামলার শিকার হন। এরপরও কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার একপর্যায়ে ২৯ মে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কেন্দ্রীয় কমিটির ১৯টি পদ শূন্য ঘোষণা করেন। কিন্তু এ পদগুলোতে কারা বাদ গেছেন, তা প্রকাশ করা হয়নি। এরপর থেকে সংগঠনটিতে অস্থিরতা আরো বাড়তে থাকে।