বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্ভব সমুদ্র সম্পদ ব্যবহার করে
আলোকিত বার্তা:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সমুদ্র সম্পদ ব্যবহার করে আমরা দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য, জ্বালানি ও নিরাপত্তাসহ বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারি। তাই একীভূত টেকসই সুনীল অর্থনীতির সর্বোচ্চ সুফল পেতে অংশীজনদের মধ্যে সহযোগিতা ও সমন্বয়ের কোনও বিকল্প নেই বলে মনে করেন শেখ হাসিনা।বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১০টার দিকে ওসেন রিম অ্যাসোসিয়েশন- আইওআরএ মিনিস্ট্রিয়াল ব্লু ইকোনমি কনফারেন্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সম্মেলনে আমরা যদি সম্মিলিতভাবে সমুদ্র সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ট ১৪ অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে পারি, তবে ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ৯ বিলিয়ন মানুষের জীবন ধারনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে এই সুনীল অর্থনীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করতে গিয়ে যেন সমুদ্রের সুষ্ঠু পরিবেশ বিঘ্নিত না হয়।শেখ হাসিনা বলেন, সমুদ্র সম্পদের গুরুত্ব উপলব্ধি করেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে সর্ব প্রথম সমুদ্র অঞ্চলে সীমা নির্ধারণ, সমুদ্র সীমানায় বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা এবং সমুদ্র সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণের জন্য ‘দ্য টেরিটরিয়াল ওয়াটারস এন্ড মেরিটাইম জোনস এ্যাক্ট ১৯৭৪’ প্রণয়ন করেন।
তিনি বলেন, সাগর ও মহাসাগর হলো মানব জাতির অবারিত সম্পদ ও অপার সম্ভাবনার উৎস। সভ্যতা গড়ে উঠেছে সাগর পাড়কে ঘিরে। এর অনেকাংশই এখনও অনাবিষ্কৃত রয়েছে। সমুদ্রকে কেন্দ্র করে গড়ে শিল্পগুলো যেমন- পণ্য পরিবহন, মৎস শিল্প, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সমুদ্র বন্দর, পর্যটন ইত্যাদি বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতিতে সমৃদ্ধির মূল চালিকা শক্তি হিসেবে অবদান রাখছে।
প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের দূষণসহ মানবসৃষ্ট নানা কারণের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অপ্রিয় হলেও সত্যি যে মনুষ্য-সৃষ্ট নানা কারণে আমাদের সাগর আজ ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন।তিনি বলেন, মাত্রাতিরিক্ত সম্পদ আহরণ, পরিবেশ দূষণ, তেল নিঃসরণ, প্লাস্টিক বর্জ্য দ্বারা দূষণ, শব্দ দূষণ ও সর্বোপরি জলবায়ু পরিবর্তন এসবের অন্যতম কারণ। এরফলে সাগর/মহাসাগরের উষ্ণতা বাড়ছে এবং জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে।
শুধু তাই নয়,বেশিরভাগ আইওআরএ (IORA) সদস্যভুক্ত দেশগুলো সুনামি ও সাইক্লোনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দ্বারাও আক্রান্ত হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পরিবেশ দূষণের কারণে আমাদের জীববৈচিত্র্য আজ হুমকির মুখে। জলবায়ু পরিবর্তন মানবজাতিকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই বিপর্যয় মোকাবিলায় আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’ তিনি বলেন ‘মহাসাগরের সম্পদ রক্ষায় আমরা যত বেশি পদক্ষেপ নেবো, তা আমাদের জন্য তত ভালো ফল বয়ে আনবে।শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই সম্মেলন শেষে ঢাকা ঘোষণা হবে। আমরা সবার জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তুলবো’ এ অঙ্গীকার এ ঘোষণায় থাকবে। আশা করি, সবার জন্য কল্যাণকর সিদ্ধান্ত নেয়ার মাধ্যমে সম্মেলন সফল হবে।ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সম্ভাবনাগুলোর সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে টেকসই সমুদ্র অর্থনীতিকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ব্লু ইকোনমি মিনিস্টেরিয়াল কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়েছে। ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশন (আইওআরএ) এ কনফারেন্সের আয়োজন করেছে। বিশ্বের ৩১ দেশের মন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সচিবসহ উচ্চপর্যায়ের শতাধিক প্রতিনিধি এতে অংশ নিচ্ছেন।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জোট আইওআরএ’র এটি তৃতীয় আঞ্চলিক সম্মেলন। সম্মেলনের সার্বিক আয়োজনের দায়িত্বে রয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম ইউনিট। এটি ঢাকায় গত বছরের ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনের পর মন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিতীয় বড় আয়োজন। এতে ২২ সদস্য রাষ্ট্র এবং ৯টি ডায়ালগ পার্টনারসহ মোট ৩১ রাষ্ট্রের প্রতিনিধি যোগ দিচ্ছেন।