মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের মানববন্ধন মুক্তিযোদ্ধাদের সুরক্ষার দাবিতে
আলোকিত বার্তা:বীর মুক্তিযোদ্ধা হত্যাকারী ও তাদের পরিবারের উপর হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবিতে মানববন্ধন এবং প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।সোমবার(২ সেপ্টেম্বর)ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুনের সঞ্চালনায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক এবং মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের আহবায়ক অধ্যাপক ড. আকম জামাল উদ্দীন।প্রতিবাদ সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন-মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের যুগ্ন-আহবায়ক মিজানুর রহমান লিটন,সনেট মাহমুদ,শের সম্রাট,ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি রেজাউল করিম রেজা,মহানগর উত্তরের সভাপতি আহমেদ হাসনাইন, সাধারণ সম্পাদক সোহেল মিয়া প্রমুখ।
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক মো: আল মামুন বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধারা দেশ ও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, যাদের বীরত্ব ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে আমরা ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে এনেছি, পেয়েছি লাল সবুজের পতাকায় শোভিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। কিন্তু আজ তারা রক্তাক্ত। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ গভীর দুঃখ হতাশা সাথে লক্ষ্য করছে যে, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উপর স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি একের পর এক হামলা চালিয়ে তাদের রক্তাক্ত করছে।১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যারা হত্যা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করার চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছিল সেই স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী অপশক্তি আবার চক্রান্ত করে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের হত্যা, হামলা, অপমান, নির্যাতন করছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠন গুলোতে এবং প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে একাত্তরে পরাজিত স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি ও দোসররা অত্যন্ত সুকৌশলে জায়গা করে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক-বাহকদের টার্গেট করে একের পর এক হত্যা-হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।’
আল মামুন আরো বলেন, ‘অতীব দুঃখের বিষয় বান্দরবন জেলার লামা উপজেলার আজিজ নগর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সাত্তারে উপর হামলা করে রক্তাক্ত করা হয়েছে, গত ১৫ আগস্ট কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বীরমুক্তিযোদ্ধা মোখলেসুর রহমানের ওপর সন্ত্রাসীরা হামলা করে মারাত্মকভাবে আহত করেছে, কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌস আহমেদকে চকরিয়া থানার ভিতরে থানার ওসির সামনে চড় মেরেছে সাহারবিল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহসিন বাবুল। পরে স্থানীয় পৌরসভার মেয়র আলমগীর এবং চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন সেই কুলাঙ্গার ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়ে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।
তিনি আরো বলেন, দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার রেয়াজনগর মহল্লার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম মণ্ডলকে ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে মারাত্মকভাবে আহত করা হয়েছে। টাঙ্গাইলে বীর মুক্তিযোদ্ধা আওয়ামী লীগ নেতা ফারুককে হত্যা করা হয়, হত্যাকারীর বিচার আজও হয়নি । উপরন্তু, হত্যাকারীরা জামিনে বের হয়ে এখন বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক সাহেবের পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে। সিলেটে বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান চৌধুরীকে হত্যা করা হয়েছে। নেত্রকোনার দুর্গাপুরে গত ১৮ আগস্ট শহীদ মকবুল হোসেনের পরিবারের উপর হামলা করে তার মুক্তিযোদ্ধা পুত্রকে রক্তাক্ত করা হয়েছে। গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে বঙ্গবন্ধু নিয়ে গল্প বলার অপরাধে মুক্তিযোদ্ধা নূরন্নবী সরদারের উপর নগ্নভাবে হামলা করা হয়েছে। এভাবে প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন জায়গায় বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের হত্যা, হামলা, নির্যাতন করা হচ্ছে যা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় অত্যন্ত লজ্জাজনক। রাষ্ট্র কখনোই এসব হত্যা, হামলার দায়ভার এড়াতে পারে না। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইন যদি প্রণয়ন করা হতো তাহলে এসব নিষ্ঠুর অপরাধ কখনোই ঘটতো না। চোখের সামনে মুক্তিযোদ্ধার শরীর রক্তাক্ত দেখতে হতো না। একের পর এক অপরাধমূলক ঘটনার বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিতে আমরা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এখনো দেখতে পাইনি। কিছুদিন পূর্বে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই একজন মুক্তিযোদ্ধাকে দাফন করা হয়েছে। মুক্তাগাছা উপজেলার ইউএনও এবং ওসি কখনোই এর দায়ভার এড়াতে পারে না। আজও পর্যন্ত সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এসব ঘটনার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছে।’
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের আহবায়ক অধ্যাপক ড. আকম জামাল উদ্দীন সরকারের কাছে দুই দফা দাবি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান।
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের দাবি সমূহ –
১। অবিলম্বে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা হোক।২।দেশের বিভিন্ন জায়গায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের হত্যাকারী,হামলাকারী এবং দলীয় মদদদাতা- আশ্রয়দাতাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক।