মনোনয়নে দ্বিধাবিভক্ত জাপা নেতারা এরশাদের আসনে
আলোকিত বার্তা:জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে শূন্য রংপুর-৩ আসনে দলীয় মনোনয়নকে কেন্দ্র করে দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়েছে পার্টির সিনিয়র নেতারা।পার্টির জ্যৈষ্ঠ নেতা ও এরশাদের সহধর্মিণী রওশন এরশাদ তার ছেলে শাদ এরশাদকে সেখান থেকে এমপি বানাতে চান।কিন্তু পার্টির অনেক সিনিয়র নেতা ও স্থানীয় জাপার নেতাকর্মীরা তা মানতে নারাজ।তারা চান রংপুরের তৃণমূলকে প্রাধান্য দিয়ে প্রার্থী নির্বাচিত হোক।এদিকে, রংপুর-৩ আসনের প্রার্থীতা চূড়ান্ত করতে শনিবার গঠিত পার্টির পার্লামেন্টারি বোর্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।তারা বলছেন, পার্টির গঠনতন্ত্রে বিভাগ অনুযায়ী সিনিয়র নেতাদের নিয়ে বোর্ড গঠন করার কথা থাকলেও তা মানা হয়নি।
জানা যায়, এরশাদ পরিবারই এখনও রংপুর-৩ আসনে মনোনয়নের বিষয়ে একমত হতে পারেননি। পরিবার থেকে মনোনয়ন দৌড়ে এরশাদপুত্র রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদ ছাড়াও ভাতিজা (ছোট ভাইয়ের ছেলে) সাবেক এমপি আসিফ শাহরিয়ার, ভাতিজা (মামাতো ভাইয়ের ছেলে) মেজর (অব.) খালেদ আখতার, ভাগনি (মেরিনা রহমানের মেয়ে) মেহেজেবুন্নেছা রহমান টুম্পাও মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।
পরিবারের বাইরে রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সেক্রেটারি এস এম ইয়াসিরকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানিয়ে ইতিমধ্যে আল্টিমেটাম দিয়েছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। জাতীয় পার্টির দুর্গখ্যাত এ আসনে মনোনয়ন পেলেই বিজয়ী হবেন এমনটা ধরে নিয়ে লবিং-তদবির বাড়িয়ে দিয়েছেন প্রার্থীরা। অনেকেই পার্টির চেয়ারম্যান মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতাদের কাছে ধর্না দিচ্ছেন।বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৩ আসন থেকে নির্বাচন করার আগ্রহ রয়েছে প্রয়াত এরশাদের সহোদর ও পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের।সেক্ষেত্রে এ আসনে অনেক হিসাব-নিকাশ করে মনোনয়ন দিতে চান তিনি।জানা যায়, গত ২০ আগস্ট মঙ্গলবার রওশন এরশাদের গুলশানের বাসভবনে যান জিএম কাদের। এ সময় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাও উপস্থিত ছিলেন। সেখানে পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলের নেতা নিয়ে নিজেদের মাঝে সমাঝোতা হয়। কিন্তু শনিবার হঠাৎ করেই জ্যৈষ্ঠতা না মেনে পার্লামেন্টারি বোর্ড গঠন করায় সে সমাঝোতা ভেস্তে যেতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। বোর্ডে যাদের রাখা হয়ে তাদের অনেকেই পার্টিতে নবীন। অনেক সিনিয়র ও অভিজ্ঞ নেতাদের রাখা হয়নি। যাদের নাম রাখা হয়েছে তাদের সিংহভাগই সর্বশেষ প্রেসিডিয়াম ও এমপিদের যৌথসভায় জিএম কাদেরকে পার্টির চেয়ারম্যানের পাশাপাশি বিরোধীদলের নেতা বানানোরও দাবি জানান।
জানতে চাইলে পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের জন্য একটি বোর্ড গঠন করে দিয়েছি। তারাই এ বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। বোর্ড গঠনে পার্টির গঠনতন্ত্র অনুয়ায়ী সিনিয়রিটি মানা হয়নি এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, সিনিয়রদের নিয়েই করতে হবে এমটি অত্যাবশাকীয় নয়। প্রয়োজনে গঠনতন্ত্রও পরিবর্তন হতে পারে।জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন বলেন,পার্টির যৌথ সভায় আলোচনা হয়েছে। তৃণমূল থেকে চারটি নাম চাওয়া হয়েছে। চারটি নাম থেকেই পার্লামেন্টারি বোর্ড একজনকে চূড়ান্ত করবেন।নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক জাপার এক প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, এরশাদ পরিবার বা পরিবারের বাইরে যাকেই মনোনয়ন দেয়া হোক না কোনো রংপুরের তৃণমূলের সিদ্ধান্তকেই প্রাধান্য দেয়া হবে।
এ বিষয়ে রংপুর মহানগর জাপার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন বলেন, রংপুরের মানুষ এরশাদের পরে তার পরিবারে জিএম কাদের ছাড়া আমরা চিন্তা করতে পারি না।রংপুর জাপা সূত্র জানায়, এরশাদ মৃত্যুর আগে সর্বশেষ মার্চের ৩ তারিখ রংপুরে যান। ৪ তারিখে রংপুর গ্র্যান্ড প্যালেস হোটেলে জেলা ও মহানগরীর যৌথ সভায় আবেগজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘এরিক আমার একমাত্র সন্তান। রংপুরের সবাই আমার সন্তান সমতুল্য। আমার মৃত্যুর পর পল্লীনিবাসে আমাকে শায়িত করবে। তোমরা আমার এরিখকে দেখে রাখবে।’এ সময় উপস্থিত নেতাকর্মীরাও কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এ সময় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা, প্রেসিডিয়াম সদস্য মেজর অব. খালেদ আখতার, মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার সহধর্মীনি মিসেস মোস্তফা, এস এম ইয়াসির, লোকমান হোসেন, ছাত্র সমাজের আহবায়ক আসিফসহ বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।সামগ্রিক বিষয়ে কথা বলার জন্য পার্লামেন্টারি বোর্ডের সদস্য ও পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি ও শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।