সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা যায় না শুধু ভালোবাসা দিয়ে
আলোকিত বার্তা:ভালোবাসা এক অদ্ভুত শক্তি, যার কারণে পুরো পৃথিবী টিকে আছে। সেটা হতে পারে মা-বাবার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা, প্রেমিকের প্রতি প্রেমিকার ভালোবাসা, বন্ধুর প্রতি ভালোবাসা, সৃষ্টিকর্তার প্রতি ভালোবাসা প্রভৃতি।ভালোবাসা হলো এক রকম বিক্রিয়া, যা অনুভূতি তৈরি করে। সেই অনুভূতি সেই মুহূর্তকে ভালো লাগায়, সেই ভালো লাগা মানুষ বার বার পেতে চায়।
ভালোবাসার মূল কথা বোঝানো সম্ভব নয়। কারোজন্য অপেক্ষা, কারোহাত শক্ত করে ধরে থাকা, ছায়াসঙ্গীর মতো থাকতে পারা সবই তো ভালোবাসা।ভালোলাগা থেকেই একটি সম্পর্কের শুরু, যার রেশ টেনে যায় ভালোবাসায়, আর সমাপ্তি বিয়ে পর্যন্ত। সম্পর্ক মানুষকে অনেকটাই বদলে দেয়। নতুন সম্পর্কে আচরণে পরিবর্তন আসে। অনেক বদঅভ্যাসও দূর হয়। এমনকি মাদকাসক্তরাও আসক্তিমুক্ত হতে পারে।
সম্পর্কের নির্দিষ্ট কোনো নাম নেই। এটি তার নিজের শব্দের মাঝের বিশাল। আপনি যে নামের সাথেই একে জুড়ে দেবেন তাকেই সে পূর্ণতা দেবে। তবে ভালোবাসার ক্ষেত্রে সম্পর্কের এই যাদুর কাঁঠি সবচেয়ে বেশি কার্যকর। আপনি আপনার ভবিষ্যৎকে ঠিক কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছেন তা সম্পূর্ণ নির্ভর করে এই সম্পর্কের ওপর। তাই এই সম্পর্কে থাকা উচিৎ গভীরতা আর একে অপরকে বুঝতে পারার ক্ষমতা।আপনার মনে হতে পারে… নাহ! এভাবে আর চলছে না। মনে হচ্ছে সবকিছুই শেষ। আর হয়তো এগিয়ে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না সম্পর্কটাকে। একসঙ্গে চলা যাচ্ছেনা জীবনের পথে। কিন্তু কেন? ঠিক এমনটাই মনে হতে পারে আপনার। খুব বেশি ভালোবাসা নিয়েও হয়তো একটা সময় দাম্পত্য জীবন হয়ে যায় একেবারেই অশান্তির।আপনার পাশেই থাকা পুরনো কিছু সম্পর্ককে দেখুন। যুগ যুগ ধরে টিকে রয়েছে সেগুলো। তাহলে কীসের কমতি রয়ে গেল আপনার ভালোবাসার সম্পর্কে? আপনি আপনার সম্পর্ককে যদি টিকিয়ে রাখতে চান তাহলে এভাবেও একটু ভেবে দেখতে পারেন।
অতীতকে অতীতে থাকতে দিন
অতীত একজন মানুষের ভবিষ্যতে চলার পথে সহায়ক হিসেবে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করলেও সেটা অনেক সময় বেদনাদায়ক। আর আপনি চেষ্টা করলেও যেহেতু অতীতকে পাল্টাতে পারবেননা তাই অতীতকে ভুলে যান। সঙ্গীকে নিয়ে নতুন জীবন শুরু করুন। এ জন্যে কিছু ত্যাগ করতে হলেও সেটা করুন। তবে অযথাই নিজের রাগকে মনে পুষে রেখে বর্তমানকে নষ্ট করবেন না। এতে করে আপনার অতীতকে নিজের হাতেই বেদানাদায়ক করে তুলবেন আপনি।
শ্রদ্ধা
ভালোবাসার সম্পর্কে কেবল ভালোবাসা দেখানোটাই সবচাইতে বড় ব্যাপার নয়। ভালোবাসার পাশাপাশি আরেকটি বিষয়, যেটি খুব বড় স্থান জুড়ে থাকে একটি সম্পর্কে, সেটি হল শ্রদ্ধা। একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ। শুধু ভালোবাসার সম্পর্ক কেন, যে কোন সম্পর্কের ক্ষেত্রেই এটা সত্যি। তবে অন্য সব সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি নিজ থেকে চলে আসলেও অনেকে ভালোবাসার মানুষটির ক্ষেত্রে এই শ্রদ্ধাবোধ দেখানোর কথা ভুলে যান। যেটি কিনা বেশ দূর্বল করে তোলে একটি সম্পর্ককে। তাই একে অন্যের সব সিদ্ধান্ত ও দৃষ্টিভঙ্গীর প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করুন।
একসঙ্গে হাসুন
প্রতিদিন একটু সময়ের জন্যে হলেও একসঙ্গে হাসুন। নিজেদের সঙ্গে কথা বলুন। কেবল নিজেকে ভালো রাখার জন্যে নয়, সঙ্গীকে ভালো রেখে, তার মনকে খুশী রেখে তাকে হাসানোর চেষ্টা করুন।
বিশ্বাস
সম্পর্কের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হচ্ছে বিশ্বাস। বিশ্বাস হচ্ছে সেই নিরাপত্তা বলয় যেটা কিনা দুজন মানুষকে পৃথিবীর আর সব সমস্যা ও বিপদ থেকে নিরাপদ রাখে। আর এই বিশ্বাস যদি কখনো একটু হলেও হালকা হয়ে যায় তাহলে যতটাই আপনি ভালোবাসুন না কেন আপনি আপনার সঙ্গীকে, সম্পর্কের শেষ দাগটা নির্ধারণ করা হয়ে যায় তখনই। তাই একে অন্যকে বিশ্বাস করুন আর কিছুটা সময় সঙ্গীকে নিজের মতন করে কাটাতে দিন।
একে অন্যকে সমর্থন
পৃথিবীর আর সবার চাইতে আপনি আপনার সঙ্গীর কাছে আলাদা কেউ কেন? কারণ এই যে, সে বিশ্বাস করে যে সবকিছু লন্ডভন্ড হয়ে পৃথিবী অন্যদিকে চলে গেলেও আপনি তাকে ছেড়ে যাবেন না। তার পাশে থাকবেন। তাকে সমর্থন করবেন। আর এই বিশ্বাসটুকুই আপনাকে আপনার সঙ্গীর চোখে আলাদা করে তোলে। করে তোলে অনন্য। তাই সেই বিশ্বাসের মর্যাদা দিয়ে সঙ্গীর পাশে থাকুন সবসময়।
বদলানোর চেষ্টা না করা
আপনি আপনার সঙ্গীকে কেমনটা ভালোবেসেছিলেন? সে এখন যেমন আছে তেমনভাবেই তো? তাহলে হঠাৎ করে কেন আপনার মনে হচ্ছে যে সে বদলে গেলে ভালো হত? হতে পারে আপনার দৃষ্টিভঙ্গী বা আশা-আকাঙ্ক্ষার পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু আপনার সঙ্গীর সেটা নাও হতে পারে। তার সাথে ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা করুন। সে যেমন আছে তেমনই তাকে প্রশংসা করুন। সে যদি পাল্টাতে না চায় তাহলে জোর করতে যাবেন না। সেটা হতে পারে পোশাক কিংবা আচরন। কারণ, এটির ফলাফল কখনোই শুভ হবে না আপনার সুন্দর সম্পর্কটির পক্ষে।
আপাত দৃষ্টিতে আপনার চোখে না পড়লেও বাস্তবে আরো অনেকের মতনই সম্পর্কের কিছু খুঁটিনাটি বিষয়কে হয়তো আপনিও এড়িয়ে যাচ্ছেন। ব্যাপারগুলো ঠিক চোখে পড়ার মতন না হলেও এই একেককটি ছোট্ট ছোট্ট ঘটনায় আপনার সম্পর্ককে করে তুলতে পারে সজীব আর প্রাণবন্ত।
দেখা যায়, কোনো কোনো সম্পর্ক বহুবছর টিকে রয়েছে। মনোমালিন্য হলেও ভেঙে যায়নি। আবার এও দেখা যায় কোনো কোনো সম্পর্ক খুব কম সময়ের পরেই ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। এই ভেঙে যাওয়া সম্পর্কগুলোর দিকে আঙুল তুলে অনেকে বলেন, ওটা ভাঙারই ছিল, তাই ভেঙে গিয়েছে। কিন্তু কেউ কি ভেবে দেখেছেন এর পিছনের আসল কারণটা কী?সম্পর্ক টেকা না টেকার আসল কারণটা হচ্ছে বন্ডিং। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, যে সমস্ত সম্পর্কে দুজনের ভালোলাগা খারাপ লাগা, পছন্দ অপছন্দ এক, তাদের সম্পর্ক বহুদিন টিকে থাকে। আর যে সম্পর্কের মধ্যে এটা নেই সেই সম্পর্ক তাসের ঘরের মতো হয়। একটু হাওয়া দিলেই ভেঙে যায়।
আসলে সম্পর্কের দুজন মানুষ একে অপরের সঙ্গে থাকতে চায়। তাই তাদের মধ্যে মানসিক মিলটা খুব জরুরি হয়ে পড়ে। সেই একাত্মতায় যখন অপছন্দের কিছু আসে তখনই সমস্যা দেখা দেয়। আর তা ভেঙে যায়। তাই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য এমন মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করা উচিত যার সঙ্গে মনের মিল আছে। যার সঙ্গে পছন্দ-অপছন্দগুলো মেলে।
আপনার সম্পর্কের মূলমন্ত্র কী? চিরদিন সুখী হয়ে একসঙ্গে বাঁচা নাকি ভাঙনের ভয়ে একে অপরের থেকে গা বাঁচিয়ে কোনোভাবে সম্পর্ক বয়ে চলা? কোনো বিষয় নিয়ে বিবাদ হলেই ব্রেক-আপের কথা মাথায় আনবেন না, নিতান্তই যদি বাধ্য না হোন। কথায় কথায় ব্রেক-আপের ভয় দেখাবেন না, এতে স্বাভাবিক আস্থা ও বিশ্বাসের অবক্ষয় হয়, যা সম্পর্ককে ঢিলে করে দেয়। ব্রেক-আপের ভয়কে সামনে রেখে কোনো সম্পর্ক সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে পারে না। একে অপরকে বোঝান- আপনারা একসঙ্গে থাকবেন বলেই একই পথে চলছেন, তাই নিজেদের সব সমস্যাগুলোকে নিজেদেরই সামলে উঠতে হবে। ব্রেক-আপ করলে হয়তো একটি সম্পর্কের অবসান হবে, কিন্তু আদতে কি সুখী হওয়া সম্ভব?জীবনে প্রেম-ভালোবাসা থাকবেই। ভালোবাসার সম্পর্ক নারী-পুরুষকে অনেক বেশি চাঙ্গা করে রাখে। বলা হয়, সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে ভালোবাসার চেয়ে ভালো উপাদান আর নেই। কিন্তু শুধুমাত্র ভালোবাসা দিয়ে কোনো সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা যায় না।নারী-পুরুষ উভয়েরই স্বাধীনতাবোধ রয়েছে। স্বাধীন চিন্তা ও নিজের একটি স্বতন্ত্র জগত রয়েছে প্রতিটি মানুষেরই। ভালোবাসার সম্পর্ক এমনই হওয়া উচিত যা পরস্পরের স্বাধীনতা, মূল্যবোধ ও সম্মানের স্থানগুলোকে অক্ষত ও সুরক্ষিত রাখবে।