বরিশাল গনপূর্ত অধিদপ্তর থেকে বিগত দশ বছরে কয়েকশ কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে দুই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। - Alokitobarta
আজ : শনিবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বরিশাল গনপূর্ত অধিদপ্তর থেকে বিগত দশ বছরে কয়েকশ কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে দুই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে।


রফিকুল ইসলাম:বরিশাল গনপূর্ত অধিদপ্তর থেকে বিগত দশ বছরে কয়েকশ কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে দুই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে।বিএনপি ও জামায়াত সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি লাইসেন্স দিয়েই তারা কাজ বাগিয়ে নিয়ে থাকেন।যদিও তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা কামিয়ে নিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্তাবাবুরা।এ দপ্তরে নতুন কর্তাবাবু আসলেও ওই দুই ঠিকাদারেরই লোক হয়ে যান।এসকল বিষয় নিয়ে অন্য ঠিকাদারদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।যদিও অন্য ঠিকাদাররা তাদের অস্তিত্ব ধরে রাখার জন্য প্রতিবাদ করেন না।কারন তারা ওই প্রতিষ্ঠানের ছোট ছোট দুএক টি কাজ করে থাকেন।যদি প্রতিবাদ করতে যায় তাহলে ওই ছোট কাজগুলোর বিল আটকে দেয়া,বিভিন্ন সময় লাঞ্চিত ও হয়রানিসহ নানা সমস্যায় পড়তে হয়।

সূত্র বলছে,বরিশাল গণপূর্ত বিভাগের বড় বড় সকল কাজই ক্ষমতার প্রভাব ও মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে মিজান খান ওরফে(কাশি মিজান)ও সুমন বাগিয়ে নিচ্ছেন।বরিশালে বিভিন্ন সময় গণপূর্ত বিভাগের কর্তাবাবুদের ঘুষ দিয়ে ম্যানেজ করে কাজগুলো বাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।অনেক সময় তারা কাজ পাওয়ার জন্য জি কে শামিমকেও ব্যবহার করতেন বলে জানা গেছে। যে কারণে অনেকেই বলছেন জি কে শমিমের বরিশালের প্রতিনিধি ছিলো মিজান খান ওরফে(কাশি মিজান)ও সুমন।জি কে শামিমের প্রভাব খাটিয়েই বরিশালে তারা বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে কাজ করে থাকেন।সূত্র বলছে,কাশি মিজানের পিতা বরিশাল নথুল্লাবাদ বাস মালিক সমিতির স্থানীয় বাস গাড়ীর ড্রাইভার ছিলো।অন্যদিকে তার সন্তান কাশি মিজান বর্তমানে চলাফেরা করে কোটি টাকা মূল্যের প্রাইভেট গাড়িতে।আর সুমন যেন আঙ্গুল ফুলে বনে গেছেন কলাগাছ।যদিও সুমনের চালাফেরায় বোঝা যায়না যে তিনি রাতারাতি কয়েকশ কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।তিনি পুরনো একটি মোটরসাইকেলে চলাচল করে থাকেন।ফলে বেশভূষা দেখে অনেকেই বুঝতে পারেন না যে তিনি রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন।

অভিযোগ রয়েছে, ঝালকাঠির সাবেক সংসদ সদস্য আজিজ গাজীর ভগ্নিপতি খান বিল্ডার্সের স্বত্বাধিকারী নাসির খানের লাইসেন্সের সাথে জে কে বিল্ডার্সের জেভি করে এবং শুধু খান বিল্ডার্সের নামে ৫০০ কোটি টকার উপরে কাজ বাগিয়ে নেয় বরিশার মহানগরীর ৩০নং ওয়ার্ডের সাবেক যুবদলের সভাপতি মিজান খাঁ ওরফে (কাশি মিজান)।বিভিন্ন স্থানের সরকারি কাজ পেতে মিজান বিভিন্ন সময় মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে আওয়ামীলীগ,যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের প্রভাবশালী নেতাদের ব্যাবহার করে থাকেন। তার বিরুদ্ধে প্রধান নির্বাহীর রুমে ক্যাডার নিয়ে ঢুকে সাধারন ঠিকাদারের উপর হামলার অভিযোগও রয়েছে।বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক সাংসদ মজিবর রহমান সরোয়ারের প্রধান ডোনার হিসেবে ব্যপক পরিচিতি রয়েছে এই কাশি মিজানের।বিএনপির সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন ২৭,২৯ ও৩০ নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পরিবারের উপর হামলার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।অপরদিকে বরিশাল জেলা জামায়াতের আমির আত্মিয় আকবরউজ্জামানের লাইসেন্স পলি ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশনের নামে কাজ করে থাকেন ঠিকাদার সুমন। যদিও এই লাইসেন্স ব্যবহারের বিনিময়ে দিতে হয় মোটা অঙ্কের টাকা।সুমনের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে লাইসেন্সের নবায়ন না করেই কয়েকশ কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন। যেখানে অন্যান্য ঠিকাদারদের লাইসেন্স নবায়ন করা থাকা স্বত্তেও তারা কাজ পাননি। সেখানে সুমন কিভাবে কাজ পায়?

সুত্র বলছে, খান বিল্ডার্স ও পলি ইন্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন এ জেভি করে শুধু বরিশাল নয় পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা, ঝালকাঠী ও পিরোজপুরের প্রায় ৯০% কাজ বাগিয়ে নেন কাশি মিজান ও সুমন। বরিশাল বিভাগের বাইরেও কাজ বাগিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। তারা নওগাঁতেও ১শ কোটি টাকার একটি কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কোন কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই তারা কাজ শুরু করেন বলেও জানা গেছে। আবার অনেক সময় মন্ত্রনালয়ে সুপারিশ করে তারা কাজ এনে তা নিজেরাই করে থাকেন।

পলি ইঞ্জিনিয়ারিং এর স্বত্বাধিকারী আকবরউজ্জামান জামাতের জেলা আমির মোয়াজ্জেম হোসেন হেলালের বেয়াই।পিপিআর অনুযায়ী সর্বনিম্ন ৩ কোটি টাকার কাজ এলটিএম করার কথা থাকলেও অফিসের যোগ সাজগে ওটিএম পদ্ধিতির মাধ্যেমে তাদের নিজস্ব দুটি লাইসেন্স এর মাধ্যমে বরিশাল বিভাগের সমস্ত বড় বড় কাজ বাগিয়ে নিয়ে পরবর্তীতে তারা সেগুলো ১৫/২০% কমিশনে বিক্রি করে দেন।তাদের বাগিয়ে নেয়া কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, বরিশাল জেলা দায়রা জজ আদালত,আব্দুর রব সেরনিয়াবাত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ,মেরিন একাডেমী ভবন,নতুন কয়েকটি ভূমি অফিস,আর আর এফ,পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়,বরিশালের বেশ কয়েকটি মডেল মসজিদ।অভিযোগ রয়েছে তাদের প্রায় কাজ গুলোই হয় নিম্নমানের এ যেনো দুর্নীতির সাগর।

এ সকল বিষয়ে জানাতে পলি ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশনের ঠিকাদার সুমন জানান,কোন দপ্তরেই লটারির মাধ্যমে কাজের নিয়ম নেই।যার যত বড় লাইসেন্স সে তত বড় কাজ পাবে।লাইসেন্স নবায়ন না করেই কাজ বাগিয়ে নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইে তিনি বলেন,একটি ট্রেড লাইসেন্স থাকলেই কাজ করা যায় ঠিকাদারি লাইসেন্সের দরকার হয় না।টেন্ডার প্রক্রিয়ার আগেই কাজ শুরু করার বিষয়ে তিনি বলেন,আমরা এ ধরনের কোন কাজ করিনা। কাজ পেলেই কাজ করি। তার পরেও যদি কর্তৃপক্ষ করতে বলে তাহলেতো করতে হয়।নিয়মে টেন্ডার ক্যাপাসিটি উল্লেখ থাকলেও তা না মেনে কাজ বাগিয়ে নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,সবার বেলায় টেন্ডার ক্যাপাসিটি লাগেনা।কাজ পেতে যোগ্যতা লাগে। জামায়াত নেতার আত্মিয়ের লাইসেন্সে কাজ বাগিয়ে নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন,লাইসেন্স যে কারও নামেই হতে পারে,সেটা কোন অন্যায় না। এক জামায়াত নেতার আত্মিয়ের লাইসেন্স সেতো আর জামায়াত না।এটা কোন বিষয় হলো।এ বিষয়ে জানতে মিজান খান ওরফে(কাশি মিজান)এর কাছে তার ব্যবহৃত (০১৭১১২..৩৩৫) নম্বরে বার বার ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিব করেননি।

এ বিষয়ে একাধিক সাধারণ ঠিকাদাররা বলেন,মেসার্স খান বিল্ডার্স,মের্সাস পলি ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন ও জিকে বিল্ডার্স নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর খোঁজ নিলেই জানা যাবে গত দশ বছরে গণপূর্ত বিভাগ থেকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তারা কতশ কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন। ঠিকাদাররা আরও বলেন,দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক)ও র‌্যাবের উর্ধতন কর্মকর্তারা উল্লেখিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনুসন্ধান করলেই ভয়াভহ দুর্নীতির চিত্র বেরিয়ে আসবে।এদিকে গত ২৫ সেপ্টেম্বর বরিশালের এক অনুষ্ঠানে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ.ম রেজাউল করিম হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিলেন- দুর্নীতি ও অনিয়মের সাথে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।কারণ আমি নিজে অনিয়ম করি না,আর কাউকে অনিয়ম করতেও দেব না।এরপরেও যদি কেউ দুর্নীতিতে জড়ায় তা বরদাশত করা হবেনা।বরং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।তিনি আরো বলেছিলেন,মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এ ব্যাপারে কাজ করা হচ্ছে।

Top