মির্জাগঞ্জে আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর কাজ দুই বছরেও শেষ হয়নি
মোঃ ফারুক খান,মির্জাগঞ্জ(পটুয়াখালী:পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলায় ‘যার জমি আছে ঘর নেই’গৃহ নির্মান আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এরআওতায় ২৮২ টি ঘর নির্মানে কাজ দুই বছরেও শেষ হয়নি। এছাড়াও অনিয়ম ও নি¤œ মানের সামগ্রীদিয়ে ঘর নির্মান এবং দুঃস্থদের কাজ থেকে অর্থ উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে সাব-ঠিকাদারের
বিরুদ্ধে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিসসহকারি কাম-কম্পিউটার অপারেটর মোঃ মিরাজুল ইসলামের যোগসাজসে দুইজন সাব-ঠিকাদারেরসাথে চুক্তিপত্র করেন।অনেক ভুক্তভোগীরা ত্রানের ঘরগুলো ভেঙ্গে নতুন করে ইটের তৈরী পাকা ঘর নির্মানকরেছেন। অর্থের বিনিময় অনেক স্বচ্ছল ব্যাক্তিরা ত্রানের ঘর পেয়েছেন এবং একই পরিবারের নামে দুইটি ঘরপাওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এখন পর্যন্ত অনেক ঘরের কাজ বাকী আছে বলে এক ইউপি চেয়ারম্যান জানান।
অথচ কাজ সম্পন্ন না করে সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে এ প্রকল্পের ২৮২টি ঘরের প্রায়ই পুরো টাকাউত্তোলন করে নিয়েছে ঠিকাদার ও ইউপি চেয়ারম্যনরা।জানা যায়,২০১৭-১৮ অর্থ বছরে মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর বিশেষ প্রকল্প ‘যার জমি আছে ঘর নেই’আশ্রয়নপ্রকল্প-২ এর আওতায় মির্জাগঞ্জে ২৮২ টি ঘর এর বিপরীতে ত্রান ও পূর্নবাসন মন্ত্রানালয় থেকে ২ কোটি৮২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ওই অর্থ বছরে জুন ক্লোজিং এর নামে অর্থ ফেরৎ যাওয়ার অজুহাত দেখিয়েতৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা যোগসাজসে সমুদয়টাকা উত্তোলন করে টাকাগুলো নিজেদের একটি নতুন একাউন্ডে রাখেন। ওই বছরের আগস্ট মাসে ঘরউত্তোলনের কাজ শুরু করেন।
২৮২টি ঘরের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী বারেক মেম্বারের ১০৩টি ও মাহবুবুর রহমান
মালেক ১০৭টি ঘর নির্মানের চুক্তি করেন। বাকী ৭২টি ঘরগুলো স্ব-স্ব ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যানরা।এসব ঘরের কাজ এখনও শেষ হয়নি। এছাড়াও পিআইও ও নির্বাহী অফিসারের অফিস সহকারি কাম-কম্পিউটার অপারেটর মোঃ মিরাজুল ইসলাম দুইজনেই ঠিকাদার ও ইউপি চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে প্রতি
ঘরে ১০ হাজার টাকা করে মোট ২৮ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ঠিকাদারদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন বলেএমনও অভিযোগ উঠেছে। ঘর নির্মান শুরুতেই অনিয়ম ও নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগতুলেন ভুক্তিভোগীরা। কিন্তু সরকারি নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে হতদরিদ্র ও অসহায় উপকারভোগীদের
নিকট থেকে ঘর নির্মানের মালামালের পরিবহন খরচ বাবদ ৫-৬ হাজার টাকা করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেনস্থানীয় সাব-ঠিকাদাররা। এসব অর্থ দিতে হিমসিম খেতে হয়েছে উপকারভোগীদের। এদের মধ্যে কেউকেউ ভিক্ষা করেও সংসার চালায়। তারাও পরিবহন খরচ থেকে বাদ যায়নি অভিযোগভুুক্তভোগীদের। অথচ এসব
পরিবহন খরচ সরকারি ভাবে ঠিকাদারের বহন করার কথা। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকেউপকারভোগীরা পরিবহন খরচের টাকা নেয়ার বিষয়ে বারবার বলা সত্তে¡ও তিনি তাতে কোন কর্নপাতকরেননি। ঠিকাদাররা তাদের ইচ্ছে মতো নি¤œ মানের নির্মান সামগ্রী দিয়ে ঘর নির্মান করেছেন।সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঘর নির্মানের দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো অনেক ঘর নির্মান কাজ শেষহয়নি। মির্জাগঞ্জ গ্রামের লাল মিয়া গোলদার,ছৈলাবুনিয়া গ্রামের রাসেল মল্লিক,মোঃ হযরত আলীহাওলাদার নামে ত্রানের ঘর বরাদ্ধ হলেও এখনও ঘর নির্মান কাজ শেষ হয়নি। ভুক্তবোগীরা বলেন, এমন নি¤œমানেরইট,কাঠ ,সিমেন্টের খুঁটি দিয়েছে, তা দাঁড়া করাতেই তা ভেঙ্গে গেছে। নি¤œ মানের কাঠ দেয়ায়
তা ব্যবহারের অনুপোযোগী হওয়ায় হতদরিদ্ররা নিজেরদের অর্থ দিয়ে কাঠ কিনেছেন বলে জানান। দক্ষিনমির্জাগঞ্জ গ্রামের উপকারভোগী দুলু বেগম বলেন,ঘর পেয়ে খুশি হয়েছিলাম। ইউপি সদস্য মোঃইসমাইল হোসেন আমার কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা নিয়েছে ঘর পাইয়ে দেয়ার জন্য এবং পরিবহন খরচঠিকাদার নিয়েছে ৬ হাজার টাকা। টাকা দেয়ার পরে ১ লাখ টাকার ঘরে কি মালামাল দিয়ে ঘর নির্মানকরেছে তা আপনারা স্ব-চক্ষে দেখেন। বাসন্ডা গ্রামের ভিক্ষুক সাধনা রানী বলেন,আমার স্বামী ও আমি
দু’জনেই ভিক্ষা করি। নুন আন্তে পান্তা ফুরায়। অথচ ঠিকাদারকে পরিবহন খরচ বাবদ ভিক্ষার টাকা দিয়ে ৬হাজার টাকা দিয়েছি। ‘মোগো এত খারাপ মানের কাঠ-খুটি-ইট-বালু দিয়ে ঘর নির্মান করে দিবে
তা হলে এ ঘর মোগো লাগতো না’।
এভাবেই প্রতিটি উপকারভোগীর একই অভিযোগ রয়েছে। সাবঠিকাদার মোঃ আবদুল বারি(বারেক) ও আবদুল মালেক বলেন,প্রতিটি ঘরে বরাদ্ধ কম থাকার কারনে উপকারভোগীদের কাছ থেকে পরিবহন খরচ নেয়া হয়েছে। এটা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা স্যারআমাদের নিতে বলেছেন। ইউএনও স্যারের অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মোঃ মিরাজুল ইসলামবলেন,তৎকালীন ইউএনও স্যার ও পিআইও স্যারের কাছে ঘর নির্মানের ফাইল রাখা আছে। সাব-ঠিকাদারা ও
ইউপি চেয়ারম্যানরা ঘর নির্মানের জন্য এক মাসের সময় নিয়েছে ইউএনও স্যারের কাছ থেকে। এ
ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম(অঃদাঃ) বলেন, ‘যার জমি আছে ঘরনেই’আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর নির্মান কাজ শেষ হওয়ার কথা অনেক আগেই। তবে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের কাজদুই বছরেও কেন শেষ হয়নি তা আমি জানি না। এমনকি এ প্রকল্পের ফাইলটি আমার অফিসে পাওয়া
যায়নি। তবে শুনেছি এ প্রকল্পের ফাইলটি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটারমোঃ মিরাজুল ইসলামের কাছে রয়েছে। এ প্রকল্পের কাজ শেষ করতে ঠিকাদার ও ইউপি চেয়ারম্যানদেরনির্দেশ দিয়েছি। আশা করছি আগামী এক মাসের মধ্যে ঘরের কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে এবং ঘরনির্মানে কোন অনিয়ম হয়ে থাকলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা নির্বাহীঅফিসার মোঃ সরোয়ার হোসেন বলেন, এ প্রকল্পটি মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর একান্ত ব্যাক্তিগত প্রকল্প। এপ্রকল্পে যে সব ঘর এখনও অসাপ্ত রয়েছে তা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে তালিকা তৈরী করে অতিদ্রæত ঘর নির্মান কাজ শেষ করা জন্য নিদের্শ দেয়া হয়েছে।