এজাহারভুক্ত সব পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্তের নোটিশ - Alokitobarta
আজ : বুধবার, ১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এজাহারভুক্ত সব পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্তের নোটিশ


জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক,আলোকিত বার্তা:পতিত আওয়ামী সরকারের ১৫ বছর বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের হত্যা, গুম ও নির্যাতন চালিয়ে পদোন্নতি, পোষ্টিং ও পুলিশ পদক ভাগিয়ে নিয়েছিলেন এসব অতিলোভি অপেশাদার পুলিশ কর্মকর্তারা।ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারকে রক্ষায় মরিয়া হয়ে ছাত্র-জনতার উপর গুলি ও নির্যাতন চালানোর সাথে সম্পৃক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের অনেকেই এখনো পুলিশ প্রশাসনের নীতি নির্ধারক।জুলাই-আগস্ট-২০২৪ গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের প্রথম দিকে ৯৫২জন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যার চেষ্টা ও নির্যাতনের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করা হয় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায়। এদের মধ্যে গুটি কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেফতার হয়েছেন,কেউ কেউ পলাতক থাকলেও অধিকাংশই এখনো চাকরিতে রয়েছেন বহাল তবিয়তে। মামলার আসামি হয়েও ঢাকার বাইরে কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তারা বিভিন্ন ট্রেনিংয়ের নামে ঢাকায় এসে গোপন বৈঠক করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।এরই মধ্যে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘটনায় করা হত্যা মামলায় এজাহারভুক্ত সব পুলিশ কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করতে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বরাবর এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সোমবার ন্যাশনাল লইয়ার্স কাউন্সিলের (এনএলসি) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এস এম জুলফিকার আলী জুনু এ নোটিশ পাঠিয়েছেন। নোটিশে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এজাহারভুক্ত সব পুলিশ কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ চাওয়া হয়েছে।

পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, এজাহারনামীয় আসামী বেশ কয়েকজন ডিআইজি এখনো পুলিশ হেডকোয়ার্টারে পদায়িত এবং বহাল তবিয়তে হাসিনার গুপ্ত বাহিনীর এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে। পুলিশ সদর দফতর, সিআইডি, পিবিআই, এটিইঊ, এপিবিএন হেডকোয়ার্টারে সরকারি টাকায় সরকারি বাড়ি-গাড়ি ব্যবহার করে সরকারের পতনে নেপথ্যে কাজ করে যাচ্ছে হাসিনার পদক পাওয়া ডিআইজিরা। একই সাথে অতিরিক্ত ডিআইজি, এসপি, অতিরিক্ত এসপি ও এএসপিরাও সরকারের প্রভাবশালী লোকজনকে ম্যানেজ করে মামলার আসামি হয়েও নিজেদের আড়াল করে রেখেছেন। পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে থেকে পলাতক পুলিশ কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে সরকারের নানা তথ্য আগাম জানিয়ে দিচ্ছেন। ফলে অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের গ্রেফতার অভিযান ব্যর্থ হচ্ছে এবং ছাত্র-জনতার খুনীরাও রয়েছে ধরা ছোয়ার বাইরে।

পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্র আরও জানায়, মামলার আসামি হয়েও ডিআইজি ইমতিয়াজ হাইওয়ে পুলিশ ও মাহফুজুর রহমান পুলিশ সদর দফতরে কর্মরত রয়েছেন। অতিরিক্ত ডিআইজি নাসিয়ান ওয়াজেদ রয়েছেন পুলিশ স্টাফ কলেজে। এসপি রাজিব পারহান এসবি, এসপি নুরুল আমিন নোয়াখালী পুলিশ ট্্েরনিং সেন্টার, অতিরিক্ত ডিআইজি নুরু নবী নোয়াখালী ট্রেনিং সেন্টার। এসপি মাজফুজুর রহমান আল মামুন পুলিশ সদর দফতর, অতিরিক্ত এসপি রফিকুল ইসলাম এপিবিএন সদর দফতর, এএসপি রিফাত এপিবিএন কক্সবাজার, অতিরিক্ত এসপি মামুন মোস্তফা ক´বাজার এপিবিএন, অতিরিক্ত এসপি মৃঞ্জুজয় দে সজল কক্সবাজার এপিবিএন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহীদুল সিআইডি এবং অতিরিক্ত এসপি আফরুজুল মকুল এসবিতে রয়েছেন।

অ্যাডভোকেট এস এম জুলফিকার আলী জুনু বলেন, যদি এ বিষয়ে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয়, তবে আমি বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হব। নোটিশে বলা হয়েছে, জুলাই-আগস্ট মাসের নৃশংস ঘটনায় করা সাত শতাধিক হত্যা মামলায় বহু পুলিশ অফিসার এজাহারভুক্ত আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। আইনের মৌলিক নীতি হলো, কোনো মামলার এজাহারভুক্ত আসামি যদি দায়িত্বশীল পদে বহাল থাকেন, তবে মামলার তদন্ত কার্যক্রম, সাক্ষ্যগ্রহণ ও বিচারপ্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ার সুস্পষ্ট আশঙ্কা থাকে। ওই আসামিরা বর্তমানে পুলিশ বাহিনীর দায়িত্বশীল পদে বহাল থাকায় তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতে তাদের চাকরিতে বহাল থাকা অনুচিত ও অগ্রহণযোগ্য।

বাংলাদেশ সার্ভিস রুলসে বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধের তদন্ত চলাকালীন অবস্থায় তাকে জনস্বার্থে সাময়িক বরখাস্ত করা যেতে পারে। পুলিশ রেগুলেশনে বলা আছে, যদি কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধের অভিযোগ আনা হয় বা মামলা দায়ের হয়, তবে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনবোধে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে দায়িত্ব থেকে বিরত রাখতে পারে। আইন অনুযায়ী, পরিষ্কারভাবে প্রতীয়মান হয় যে এজাহারভুক্ত পুলিশ অফিসারদের পদে বহাল রাখা আইন, ন্যায়বিচার ও জনস্বার্থের পরিপন্থী। তাই অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

Top