গণ-অভ্যুত্থানের রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতির অঙ্গীকার
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক,আলোকিত বার্তা :ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদানের অঙ্গীকার করে ঐতিহাসিক ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ জাতির সামনে তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট অর্জিত গণ-অভ্যুত্থানে বিজয়ী বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসাবে এই বহুল প্রত্যাশিত ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করা হলো, যা পরবর্তী নির্বাচিত সরকার সংবিধানের তফশিলে সন্নিবেশিত করবে। এছাড়া ২৮ দফার ঘোষণাপত্রে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সব শহীদকে জাতীয় বীর হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে শহীদদের পরিবার, আহত যোদ্ধা এবং আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে প্রয়োজনীয় সব আইনি সুরক্ষা দেওয়া হবে বলে ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়।মঙ্গলবার রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে ‘৩৬ জুলাই উদযাপন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ঘোষণাপত্রে উল্লেখযোগ্য অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে- পাকিস্তানের ২৩ বছরের বঞ্চনা, শোষণ ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ, ২৬ মার্চসহ বাংলাদেশের মানুষের অতীতের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম থেকে শুরু করে জুলাই অভ্যুত্থান পটভূমির বর্ণনা। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার শাসনামলে গুম-খুন, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধসহ সব ধরনের নির্যাতন-নিপীড়ন ও রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুণ্ঠনের দ্রুত উপযুক্ত বিচার, আইনের শাসন ও মানবাধিকার, দুর্নীতি, শোষণমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে।
এদিকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে নিয়ে এ ঘোষণাপত্র পাঠ করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এসময় মঞ্চে নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর এবং জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়কারী টিপু বিশ্বাস, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান এবং গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। এছাড়া জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ মাহমুদুর রহমান সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ সাবন্তীও পাশে উপস্থিত ছিলেন।এর আগে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর সবাই দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। গণ-অভ্যুত্থানে দু-চোখ হারানো জুলাই যোদ্ধা মো. আল আমিনের ওপর নির্মিত ‘আলো ফিরে পাব কি?’ শিরোনামে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয় অনুষ্ঠানে। এরপর সূচনা বক্তব্য রাখেন জুলাই শহীদ মাহমুদুর রহমান সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ।যেভাবে শুরু করেন প্রধান উপদেষ্টা : জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করার সময় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। ঘোষণাপত্র পাঠ করার শুরুতে ডায়াসে দাঁড়িয়ে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সবার উদ্দেশে বলেন, আমাদের জন্য রহমত বর্ষিত হচ্ছে, আল্লাহর রহমত নিয়ে আমি এই ঘোষণাপত্র পাঠ করব। এরপর বিকাল ৫টা ২২ মিনিটে তিনি ঘোষণাপত্র পাঠ করা শুরু করেন।
জুলাই ঘোষণাপত্রে যা আছে
১. যেহেতু উপনিবেশবিরোধী লড়াইয়ের সুদীর্ঘকালের ধারাবাহিকতায় এই ভূখণ্ডে মানুষ দীর্ঘ ২৩ বছর পাকিস্তানের স্বৈরশাসকদের বঞ্চনা ও শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল এবং নির্বিচার গণহত্যার বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করে জাতীয় মুক্তির লক্ষ্যে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিল; এবং
২. যেহেতু, বাংলাদেশের আপামর জনগণ দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই ভূখণ্ডে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বিবৃত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের ভিত্তিতে উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়নের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছে; এবং
৩. যেহেতু স্বাধীন বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়ন পদ্ধতি, এর কাঠামোগত দুর্বলতা ও অপপ্রয়োগের ফলে স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধের জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়েছিল এবং গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা ক্ষুণ্ন করেছিল; এবং
৪. যেহেতু স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার স্বাধীনতার মূলমন্ত্র গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার বিপরীতে বাকশালের নামে সাংবিধানিকভাবে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করে এবং মতপ্রকাশ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করে, যার প্রতিক্রিয়ায় ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর দেশে সিপাহি-জনতার ঐক্যবদ্ধ বিপ্লব সংঘটিত হয় এবং পরবর্তী সময়ে একদলীয় বাকশাল পদ্ধতির পরিবর্তে বহুদলীয় গণতন্ত্র, মতপ্রকাশ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা পুনঃপ্রবর্তনের পথ সুগম হয়, এবং
৫. যেহেতু আশির দশকে সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় বছর ছাত্র-জনতার অবিরাম সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয় এবং ১৯৯১ সালে পুনরায় সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। এবং
৬. যেহেতু দেশি-বিদেশি চক্রান্তে সরকার পরিবর্তনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ায় ১/১১-এর ষড়যন্ত্রমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার একচ্ছত্র ক্ষমতা, আধিপত্য ও ফ্যাসিবাদের পথ সুগম করা হয়; এবং
৭. যেহেতু বিগত দীর্ঘ ষোলো বছরের ফ্যাসিবাদী, অগণতান্ত্রিক এবং গণবিরোধী শাসনব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে এবং একদলীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অতি উগ্র বাসনা চরিতার্থ করার অভিপ্রায়ে সংবিধানের অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক পরিবর্তন করা হয় এবং যার ফলে একদলীয় একচ্ছত্র ক্ষমতা ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়; এবং
৮. যেহেতু শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসন, গুম-খুন, আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ এবং একদলীয় স্বার্থে সংবিধান সংশোধন ও পরিবর্তন বাংলাদেশের সব রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে; এবং
৯. যেহেতু, হাসিনা সরকারের আমলে তারই নেতৃত্বে একটি চরম গণবিরোধী, একনায়কতান্ত্রিক ও মানবাধিকার হরণকারী শক্তি বাংলাদেশকে একটি ফ্যাসিবাদী, মাফিয়া এবং ব্যর্থ রাষ্ট্রের রূপ দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে; এবং
১০. যেহেতু, তথাকথিত উন্নয়নের নামে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী নেতৃত্বে সীমাহীন দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের মধ্য দিয়ে বিগত পতিত দুর্নীতিবাজ আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশ ও এর অমিত অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে বিপর্যস্ত করে তোলে এবং এর পরিবেশ, প্রাণবৈচিত্র্য ও জলবায়ুকে বিপন্ন করে; এবং
১১. যেহেতু শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দল, ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনসহ সমাজের সর্বস্তরের জনগণ গত প্রায় ষোলো বছর যাবৎ নিরন্তর গণতান্ত্রিক সংগ্রাম করে জেল-জুলুম, হামলা-মামলা, গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়; এবং
১২. যেহেতু বাংলাদেশে বিদেশি রাষ্ট্রের অন্যায় প্রভুত্ব, শোষণ ও খবরদারিত্বের বিরুদ্ধে এদেশের মানুষের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে বহিঃশক্তির তাঁবেদার আওয়ামী লীগ সরকার নিষ্ঠুর শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে দমন করে; এবং
১৩. যেহেতু অবৈধভাবে ক্ষমতা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগ সরকার তিনটি প্রহসনের নির্বাচনে (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪-এর জাতীয় সংসদ নির্বাচন) এদেশের মানুষকে ভোটাধিকার ও প্রতিনিধিত্ব থেকে বঞ্চিত করে; এবং
১৪. যেহেতু, আওয়ামী লীগ আমলে ভিন্নমতের রাজনৈতিক নেতাকর্মী, শিক্ষার্থী ও তরুণদের নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করা হয় এবং সরকারি চাকরিতে একচেটিয়া দলীয় নিয়োগ ও কোটাভিত্তিক বৈষম্যের কারণে ছাত্র, চাকরিপ্রত্যাশী ও নাগরিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভের জন্ম হয়; এবং
১৫. যেহেতু বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের ওপর চরম নিপীড়নের ফলে দীর্ঘদিন ধরে জনরোষের সৃষ্টি হয় এবং জনগণ সব বৈধ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াই চালিয়ে যায়; এবং
১৬. যেহেতু সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটাব্যবস্থার বিলোপ ও দুর্নীতি প্রতিরোধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক ব্যাপক দমন-পীড়ন, বর্বর অত্যাচার ও মানবতাবিরোধী হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। যার ফলে সারা দেশে দলমতনির্বিশেষে ছাত্র-জনতার উত্তাল গণবিক্ষোভ গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়; এবং
১৭. যেহেতু ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে অদম্য ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক দল, ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী, শ্রমিক সংগঠনসহ সমাজের সব স্তরের মানুষ যোগদান করে এবং আওয়ামী ফ্যাসিবাদী বাহিনী রাজপথে নারী-শিশুসহ প্রায় এক হাজার মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে, অগণিত মানুষ পঙ্গুত্ব ও অন্ধত্ববরণ করে এবং আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা জনগণের গণতান্ত্রিক লড়াইকে সমর্থন প্রদান করে; এবং
১৮. যেহেতু, অবৈধ শেখ হাসিনা সরকারের পতন, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের লক্ষ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে জনগণ অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে, পরবর্তী সময়ে ৫ আগস্ট ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ পরিচালনা করে এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনরত সব রাজনৈতিক দল, ছাত্র-জনতা তথা সর্বস্তরের সব শ্রেণি-পেশার আপামর জনসাধারণের তীব্র আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে গণভবনমুখী জনতার উত্তাল যাত্রার মুখে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়; এবং
১৯. যেহেতু বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকট মোকাবিলায় গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত জনগণের সার্বভৌমত্বের প্রত্যয় ও প্রয়োগ রাজনৈতিক ও আইনি উভয়দিক থেকে যুক্তিসংগত, বৈধ ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত; এবং
২০. যেহেতু জনগণের দাবি অনুযায়ী এরপর অবৈধ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া হয় এবং সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিমকোর্টের মতামতের আলোকে সাংবিধানিকভাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়; এবং
২১. যেহেতু, বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের ফ্যাসিবাদবিরোধী তীব্র আকাঙ্ক্ষা এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদ, বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণের অভিপ্রায় প্রকাশিত হয়; এবং
২২. সেহেতু, বাংলাদেশের জনগণ সুশাসন ও সুষ্ঠু নির্বাচন, ফ্যাসিবাদী শাসনের পুনরাবৃত্তি রোধ, আইনের শাসন এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে বিদ্যমান সংবিধান ও সকল রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের গণতান্ত্রিক সংস্কার সাধনের অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে; এবং
২৩. সেহেতু, বাংলাদেশের জনগণ বিগত ষোলো বছরের দীর্ঘ ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামকালে এবং ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালীন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক সংঘটিত গুম-খুন, হত্যা, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও সব ধরনের নির্যাতন, নিপীড়ন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুণ্ঠনের অপরাধগুলোর দ্রুত উপযুক্ত বিচারের দৃঢ় অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে; এবং
২৪. সেহেতু, বাংলাদেশের জনগণ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সব শহীদকে জাতীয় বীর হিসাবে ঘোষণা করে শহীদদের পরিবার, আহত যোদ্ধা এবং আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে প্রয়োজনীয় সব আইনি সুরক্ষা দেওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে। এবং
২৫. সেহেতু, বাংলাদেশের জনগণ যুক্তিসংগত সময়ে আয়োজিতব্য অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত জাতীয় সংসদে প্রতিশ্রুত প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে দেশের মানুষের প্রত্যাশা, বিশেষত তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আইনের শাসন ও মানবাধিকার, দুর্নীতি, শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন ও মূল্যবোধসম্পন্ন সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে; এবং
২৬. সেহেতু বাংলাদেশের জনগণ এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছে যে-একটি পরিবেশ ও জলবায়ুসহিষ্ণু অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়ন কৌশলের মাধ্যমে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অধিকার সংরক্ষিত হবে; এবং
২৭. বাংলাদেশের জনগণ এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে যে, ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪-এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে এবং পরবর্তী নির্বাচনে নির্বাচিত সরকারের সংস্কারকৃত সংবিধানের তফশিলে এ ঘোষণাপত্র সন্নিবেশিত থাকবে; এবং
২৮। ৫ আগস্ট ২০২৪ সালে গণ-অভ্যুত্থানে বিজয়ী বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসাবে এই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করা হলো।
ঘোষণাপত্র পাঠ শেষে উপস্থিত রাজনৈতিক দলের প্রধানদের সঙ্গে কোলাকুলি করেন প্রধান উপদেষ্টা। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, শিল্পকলা একাডেমি ও সংসদ সচিবালয় যৌথভাবে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানমালা ছিল সবার জন্য উন্মুক্ত। এদিকে জুলাই অভ্যুত্থান দিবসের উদযাপন উপলক্ষ্যে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ পরিণত হয় মানুষের মিলনমেলায়। স্বৈরাচার সরকারের পতনের বর্ষপূর্তির খুশি উদযাপন নিজ চোখে দেখতেই সমবেত হন তারা। সেখানে দিনভর গান, কনসার্ট, ড্রোন শোসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।