যে কোনো সময় চিরুনি অভিযান
মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, অপরাধী অপরাধীই, তা সে যে দলেরই হোক রাজনৈতিক অথবা অন্য কোনো পরিচয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। কোনো অপরাধীকেই পুলিশ প্রশ্রয় দেবে না। চিহ্নিত অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের ধরতে যে কোনো সময় শুরু হচ্ছে বিশেষ অভিযান। গতকাল রোববার দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ১১তম সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, খুন, চুরি, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, সন্ত্রাস, অপহরণ, নারী নির্যাতন, মব সহিংসতা, মাদক চোরাচালানসহ সব ধরনের অপরাধমূলক কর্মকা-ের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার যেকোনো সময় চিহ্নিত অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের ধরতে বিশেষ বা চিরুনি অভিযান পরিচালনা করতে পারে। এ ক্ষেত্রে সাধারণ জনগণসহ সকলের সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য। সরকার জনশৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা বিঘœকারী যেকোনো কার্যক্রম কঠোর হস্তে দমন করবে।তিনি বলেন, রাজধানীর মিটফোর্ডে ব্যবসায়ীকে নারকীয় হত্যাকান্ডের ঘটনাসহ দেশব্যাপী সাম্প্রতিককালে যেসব হত্যাকা- ঘটেছে- এসব হত্যাকা-ে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বদ্ধপরিকর। এসব ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতকরণে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অত্যন্ত তৎপর ও ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশনে যাচ্ছে ও অপরাধীদেরকে গ্রেপ্তার করছে। মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে হত্যাকা-ের বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে খুলনার হত্যাকা-ের ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মিটফোর্ডের নৃশংস হত্যাকা-ের ঘটনাটিকে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে বলে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, এ হত্যাকা-ের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণী (এফআইআর)-তে উল্লিখিত ১৯ জনের মধ্যে ইতোমধ্যে সাত জনকে র্যাব, সেনাবাহিনী ও পুলিশের পক্ষ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢাকার বাইরে গোয়েন্দা দল বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে অবশিষ্ট আসামিদের গ্রেপ্তারে কাজ করে যাচ্ছে। বুধবার সন্ধ্যায় ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ কর্তৃক মঈন ও সেনাবাহিনী কর্তৃক তারেক নামের দুইজনকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শুক্রবার বিকালে আরও দু-জনকে, শুক্রবার রাতে একজনকে এবং শনিবার রাতে এ ঘটনায় ডিবি আরো দুইজনসহ মোট ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে। যাদের মধ্যে ছয়জনকে ভিডিও ফুটেজে শনাক্ত করা হয়েছে। তদন্তে আরো আসামি পাওয়া গেলে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে।
সামাজিক অস্থিরতা, অসহিষ্ণুতা, নৈতিক স্খলন, প্রভৃতি কারণে সমাজে অপরাধপ্রবণতা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশ ও সমাজ থেকে অপরাধ কমিয়ে আনার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি আমাদের সকলের। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, মিডিয়া, রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, অভিভাবক, ছাত্র, শিক্ষক, সাধারণ জনতাসহ সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। আর কেউ যেন আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়- এ বিষয়ে জনসচেতনতা জরুরি। জননিরাপত্তা বিঘœকারী কোন ঘটনা বা অপরাধ ঘটলে সেটা যেন যত দ্রুতসম্ভব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
