আত্মহত্যা রোধে পটুয়াখালীতে বসুন্ধরা শুভসংঘের সমাবেশ
পটুয়াখালী জেলা: বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় পটুয়াখালী শের ই বাংলা গার্লস স্কুলের মিলনায়তনে বসুন্ধরা শুভসংঘ পটুয়াখালী জেলা শাখার উদ্যোগে এ সমাবেশ হয়।বসুন্ধরা শুভসংঘ পটুয়াখালী জেলা শাখার সভাপতি জহিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করেন পটুয়াখালী জেলা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার জিয়াউর রহমান।তিনি বলেন, আত্মহত্যার পূর্বাভাস কৈশোরেই পাওয়া যায়। সেটা সম্ভব হয় কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা আছে কি না তা বোঝার মাধ্যমে। আত্মহত্যার চিন্তা, পরিকল্পনা এবং চেষ্টা এ তিনটি বিষয়ের কোনও একটি যদি কারও মধ্যে বিদ্যমান থাকে, তাহলে তার আত্মহত্যার প্রবণতা আছে বলে ধরে নেওয়া যায়।তিনি আরও বলেন, আত্মহত্যায় প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন মানুষ পৃথিবী থেকে বিদায় নিচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর বিশ্বে আত্মহত্যা করছেন সাত লাখেরও বেশি মানুষ। করোনাকালে এক বছরে বাংলাদেশে আত্মহত্যা করেছে ১৪ হাজারেরও বেশি মানুষ। ডব্লিউএইচও এর তথ্যমতে, বিশ্বে মোট আত্মহত্যার ৭৭ শতাংশ ঘটছে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। তাদের মধ্যে আছে সব বয়স ও শ্রেণিপেশার মানুষ। যাদের মধ্যে তরুণের সংখ্যাই বেশি। গবেষকদের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে অন্তত প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজন কিশোর ও কিশোরীর মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আত্মহত্যাকে ১০ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মৃত্যুর দ্বিতীয় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। যেসব কারণে মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়, এর অন্যতম হচ্ছে বুলিং। চরম হতাশা ও অসহায় বোধ থেকে কিশোর-কিশোরীরা এ পথে পা বাড়ায়। মাদকাসক্তের মতো সমাজবিরোধী আচরণও আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ায়।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে যেসব পারিবারিক, সামাজিক ও আর্থিক কারণে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যায়, সেগুলো হলো-সাইবার ক্রাইমের শিকার, যৌতুক প্রথা, মা-বাবার মধ্যে সুসম্পর্ক না থাকা, পারিবারিক কলহ, পরকীয়া, প্রেমে ব্যর্থতা, চাকরি হারানো, দীর্ঘদিনের বেকারত্ব, দারিদ্র্য, প্রতারণার শিকার, ব্যবসায় লোকসান, প্রিয়জনের মৃত্যু, পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল না পাওয়া, সন্তানের প্রতি মা-বাবার তাচ্ছিল্য, মূল্যবোধের অবক্ষয়, পারিবারিক, ধর্মীয় ও সামাজিক দায়িত্ববোধের অভাব, যৌন সহিংসতা এবং নির্যাতনের শিকার হওয়া ইত্যাদি।এ ছাড়াও আত্মহত্যার প্রবণতার অন্যতম কারণ বিষণ্ণতা, ইনসমনিয়া ও সিজোফ্রেনিয়ার মতো মানসিক অসুস্থতা। বঞ্চনা, ক্ষোভ, একাকিত্ব, সামাজিক বিচ্ছিন্নতাও আত্মহত্যার ঝুঁকি বাড়ায়। বর্তমানে সাইবার বুলিংয়ের কারণে আত্মহত্যা সংশ্লিষ্ট আচরণ বাড়ছে।শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে আরও বলেন, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের তথ্যমতে, বাংলাদেশে ১০ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। তবে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই। কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে বেশি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।
সেই সঙ্গে ইকোলজিক্যাল সিস্টেমের কারণে পারিবারিক পরিবেশ, নিজেদের বেড়ে ওঠা, শিক্ষা, চারপাশ এবং সর্বোপরি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অনেক বিষয়ও এ শ্রেণিকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে। আত্মহত্যায় পরীক্ষা পদ্ধতি, স্কুলিং, রেজাল্ট, এসবও প্রভাব ফেলে, যোগ করেন বক্তারা।অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাহিমা মিনি, সহকারী প্রধান শিক্ষক আবদুস সালাম, বসুন্ধরা শুভসংঘের জেলা সমন্বয়কারী সাইমুন রহমান এলিট, পটুয়াখালী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আবু আফফান, সহসভাপতি আফরোজা আক্তার, সহসাংগঠনিক সম্পাদক সাফিন নাছরুল্লাহ্, কর্মসূচি সম্পাদক মেহেদী হাসান রিফাত, অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মারুফ ইসলাম, আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক ফারিহা জাহান রিয়া, শিক্ষা ও পাঠ্যচক্র বিষয়ক সম্পাদক সুমাইয়া আক্তার মেঘলা, স্বাস্থ্য ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক সুমাইয়া তানজিন স্নেহা, ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক জুবাইর হক জুলহাস, কার্যকরী সদস্য মাহামুদুল হাসান রনি ও মো. ফাহাদসহ অনেকে। অনুষ্ঠান শেষে স্কুলের দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীকে শপথ করানো হয়- আত্মহত্যা করবো না, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলবো।