আট বছরে হলেন মুক্তিযোদ্ধা - Alokitobarta
আজ : শুক্রবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আট বছরে হলেন মুক্তিযোদ্ধা


এবি সিদ্দীক ভূইঁয়া :বরগুনার আমতলীতে সৈয়দ মাসুমের বিরুদ্ধে জাল-জালিয়াতি মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তার বেসামরিক গেজেট নং ৪২৩ । অভিযোগ রয়েছে তিনি জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা সেজে গত ১৫ বছর ধরে সরকারী কোষাগার থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন একাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধারা। তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন তারা ।জানা গেছে, আমতলী উপজেলার ৫ নং ওয়ার্ডের তিনি ১৯৮০ সালে চিলা হাঃ বিঃ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এসএসসি পাশের সনদ অনুসারে তার জন্ম ১৯৬২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর । স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তার বয়স আট বছর ৯ মাস ১৫ দিন। তখন তিনি প্রাইমারী স্কুলের ছাত্র।

অভিযোগ রয়েছে সাবেক আমতলী মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার একেএম সামসুদ্দিন শানুর মাধ্যমে অষ্টম শ্রেনী পাশ দেখিয়ে জাল জালিয়াতি করে তাকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় গেজেটভুক্ত করেন। তার গেজেট নং- বেসামরিক ৪২৩। ওই গেজেট অনুসারে তিনি ২০০৯ সালে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা প্রাপ্ত হন। গত ১৫ বছর তিনি অবৈধভাবে সরকারী কোষাগার থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আরো অভিযোগ রয়েছে সৈয়দ মাসুম তার এসএসসি পরীক্ষার সনদ দেখিয়ে সবুজবাগ মুক্তিযুদ্ধা সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়ে চাকুরী নেয়। ওই চাকুরী থেকে তিনি ২২/১১/২০০৫ সালে অবসর যান। অবসরের পরে তিনি মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করেন।

এসএসসির প্রত্যায়ন পত্রে তার পাশের সন ১৯৮০ রয়েছে, সেখানে তার জন্ম সাল ১৯৬২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর উল্লেখ রয়েছে।এক জন বীর মুক্তিযোদ্ধা আরো অভিযোগ করেন, এসএসসি পরীক্ষা পাশ থাকা সত্বেও তিনি কিভাবে মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন? একেএম সামসুদ্দিন শানু ২০০৫ সালে আমতলী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হন। ওই সময় তিনি প্রভাব খাটিয়ে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন। আরো অভিযোগ রয়েছে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ তৈরি করেছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সৈয়দ মাসুম ১৯৮০ সালে আমতলী উপজেলার চিলা হাঃ বিঃ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগে কৃতকার্য হন। তার এসএসসি পরীক্ষা পাশের রোল নং- ৩৯৫ নিবন্ধন নং-১৮৮১২ ও শিক্ষাবর্ষ ১৯৭৭/৭৮। তার জন্ম তারিখ-১৫/০২/১৯৬২ ইং।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ১৯৭১ সালে মাসুম প্রাইমারী স্কুলে লেখাপড়া করতেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন শিশু। সৈয়দ মাসুম চাকুরী থেকে অবসরে আসার কিছুদিন পর শুনতে পাই তিনি মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন। কিভাবে মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন তা আমাদের বুঝে আসে না। এ বিষয়টি তদন্ত করলেই আসল রহস্য বেড়িয়ে আসবে।

এ ব্যাপারে মো মাসুম বলেন, আমি চিলা হাঃ বিঃ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেনী পাশের সনদ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হয়েছি। তবে কিভাবে আপনি ভাতা তুলছেন এমন প্রশ্নের জবাব তিনি এরিয়ে যান।

আমতলী উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার একেএম সামসুদ্দিন শানু বলেন, যারা যাচাই বাছাই করেছেন তারা বলতে পারবেন কিভাবে সৈয়দ মাসুম মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন? তবে আপনিতো তার পক্ষে প্রত্যায়ন দিয়েছেন তা দিলেন কিভাবে এমন প্রশ্নের জবাব তিনি এড়িয়ে যান।

চিলা হাঃ বিঃ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন,১৯৭৮ সালে এ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তার জন্ম তারিখ ১৯৬২ সালের ২ এপ্রিল।

এবিষয়ে আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বরগুনা জেলা প্রশাসক বলেন, জালিয়াতির কোন বিষয় প্রমানিত হলে তাকে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি এবং তার মুক্তিযোদ্ধা গেজেট বাতিল করা হবে। আর এই বিষয় আরো সুস্পষ্ট তথ্যের জন্যে সাংবাদিকদের সহোযোগিতার অনুরোধ করেন।

মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মোঃ এনায়েত হোসেন জানান জালিয়াতির কোন বিষয় প্রমানিত হলে তাকে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি এবং তার মুক্তিযোদ্ধা গেজেট বাতিল করা হবে। আর এই বিষয় আরো সুস্পষ্ট তথ্যের দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করবেন।

Top