বিক্ষোভে উত্তাল,পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলি,২৮ গুলিবিদ্ধসহ আহত দুই শতাধিক,নিহত ১
মোহাম্মাদ মুরাদ হোসেন:রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল বিক্ষোভে উত্তাল,পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলি,২৮ গুলিবিদ্ধসহ আহত দুই শতাধিক,নিহত ১,পুলিশ বক্স, গাড়ি ও আ.লীগ-ছাত্রলীগের কার্যালয় ভাঙচুর।বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে শনিবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে। বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সংস্কৃতিকর্মী, কবি-সাহিত্যিক থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ। রাজধানীর আফতাবনগর, বাড্ডা, রামপুরা, বনশ্রী, মিরপুর-১০ ও সায়েন্সল্যাবসহ বিভিন্ন পয়েন্টে সকাল থেকে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে অনেক এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহিদ মিনারে জড়ো হতে থাকেন তারা। বেলা ৩টার দিকে ছাত্র-জনতার ঢল নামে সেখানে। এছাড়া গাজীপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট, নোয়াখালী বরিশাল, বগুড়া, রাজশাহী ও ফরিদপুরেও বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। এর মধ্যে অনেক জায়গায় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এসব ঘটনায় এক ব্যবসায়ী নিহত ও ২৮ গুলিবিদ্ধসহ দুই শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। গাজীপুরের শ্রীপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে ওই ব্যবসায়ী মারা যান। সেখানে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো এলাকা। এ সময় ২৩ গুলিবিদ্ধসহ শতাধিক লোক আহত হয়েছেন। বিক্ষোভকারীরা এ সময় হাইওয়ে থানায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। কুমিল্লায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলায় ৫ শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন ৩০ জন। চট্টগ্রামে মিছিল থেকে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও সিটি করপোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসভবনে হামলা হয়েছে। রাতে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ তিন বিএনপি নেতার বাসার গ্যারেজে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।এদিকে বিভিন্ন স্থানে পুলিশ বক্স ও আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের কার্যালয়ে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করেছেন আন্দোলনকারীরা। এছাড়া অনেক জায়গায় শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-শ্রীপুরে সংঘর্ষে নিহত ১, গুলিবিদ্ধ ২৩, হাইওয়ে থানা, ৪টি পুলিশ বক্স ও ৫টি গাড়িতে আগুন-ভাঙচুর : আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বেলা ১১টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনা চৌরাস্তা উড়াল সেতুর নিচে গেলে তাদের সম্মিলিতভাবে বাধা দেয় পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ সময় আন্দোলনকারীদের ধাওয়া খেয়ে পিছু হটে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। পরে দুপুর ১২টার দিকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ এসে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। এ সময় ৯ আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এদের মধ্যে ৬ জনকে মুমূর্ষু অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সংঘর্ষকালে শিক্ষার্থীরা মাওনা চৌরাস্তা উড়াল সেতুর নিচে অবস্থিত ৪টি পুলিশ বক্স ভাঙচুর করে এবং ২টি বক্সে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে আন্দোলনকারীরা মাওনা চৌরাস্তার শ্রীপুর রুটে পুলিশের তিনটি গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন দেয়। একই সময় স্থানীয় ভাই ভাই সিটি কমপ্লেক্সে শ্রীপুর পৌর মেয়রের গাড়ি ভাঙচুর করে। এরপর শিক্ষার্থীরা শ্রীপুর থানা ঘেরাওয়ের উদ্দেশে রওয়ানা দেন। এ সময় মাওনা শ্রীপুর সড়কের পাশে মাওনা হাইওয়ে থানার বহুতল ভবনে ভাঙচুর চালিয়ে পুলিশদের অবরুদ্ধ করে রাখেন আন্দোলনকারীরা। খবর পেয়ে শ্রীপুর থানা ও জেলা পুলিশের বিপুলসংখ্যক পুলিশ এসে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে আন্দোলনকারীদের ছাত্রভঙ্গ করে পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে শ্রীপুর থানায় নিয়ে যায়। এ সময় পুলিশের গুলিতে জাহাঙ্গীর মুন্সী নামের এক লেপ-তোশক ব্যবসায়ী ঘটনাস্থলে নিহত এবং ১৪ জন আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। নিহত জাহাঙ্গীর মুন্সীর বাড়ি সাতক্ষীরা জেলায়। তিনি শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তা এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে থেকে ব্যবসা করতেন। ব্যবসায়ী নিহতের খবরে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ওই থানা ভবন দখলে নিয়ে আগুন দেয় এবং পুলিশের দুটি গাড়িতে আগুন দেয়। এদিকে দফায় দফায় এসব সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ছাড়াও শতাধিক লোক আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুই স্থানীয় দুই সাংবাদিকও রয়েছেন। মাওনা চৌরাস্তায় তাদের মারধর করেছে আন্দোলনকারীরা। আহতরা স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
ফরিদপুরে সংঘর্ষে আহত ১৫ : স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে জড়ো হন। এ সময় সেখানে আরও কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা একাত্মতা প্রকাশ করে সমবেত হন। সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক দিয়ে শহরের গোয়ালচামট পুরাতন বাসস্ট্যান্ড হয়ে ভাঙ্গা রাস্তার মোড়ের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে। গোয়ালচামট মডেল মসজিদের সামনে ভাঙা রাস্তার মোড়ে পুলিশ তাদের বাধা দেয় এবং আন্দোলনকারীদের থামানোর চেষ্টা করে। এরপর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে রাবার বুলেট, টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়া শুরু করে পুলিশ। জবাবে বিক্ষোভকারীরাও ইটপাটকেল মারতে শুরু করেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে লাঠিসোঁটা ও পাইপ হাতে যোগ দেন শ্রমিকলীগ নেতাকর্মীরাও। তারাও শিক্ষার্থীদের ওপর ইটপাটকেল মারতে থাকেন। পুলিশ সাঁজোয়া যান নিয়ে এগোতে থাকে। পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। প্রায় আধা ঘণ্টা ধাওয়া-পালটাধাওয়া চলে। পরে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দিয়ে পশ্চিম খাবাসপুর এলাকায় ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর বিক্ষোভকারীরা মেডিকেল কলেজ এলাকায় ঢুকে পড়েন। সেখানেও তাদের বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। সংঘর্ষে আজকের পত্রিকার ফরিদপুর প্রতিনিধি শ্রাবণ হাসান, দৈনিক ফতেহাবাদের জাকির হোসেন ও ঢাকা পোস্টের ফরিদপুর প্রতিনিধি জহির উদ্দিনসহ কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত সঞ্জয় বৈরাগী নামে এক নার্সিং শিক্ষার্থীকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। তার শরীরে ১৮টি রাবার বুলেটের আঘাত রয়েছে বলে জানিয়েছেন একজন সিনিয়র নার্স। আন্দোলনকারী আহাদুজ্জামান বলেন, শান্তিপূর্ণ মিছিলটি ভাঙ্গা রাস্তার মোড়ে অবস্থান করতে চাইলে পুলিশ ও ছাত্রলীগ আমাদের ওপর গুলিবর্ষণ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। আমাদের ১৫ জন আহত হয়েছেন।
ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসানুজ্জামান বলেন, আহত হয়েছে শুনেছি। কত রাউন্ড গুলি বা টিয়ারশেল নিক্ষেপ হয়েছে তার তথ্য এখনই বলা সম্ভব নয়।
বিক্ষোভে উত্তাল রাজশাহী, আহত ৩ : সকাল ১০টার দিকে আন্দোলনকারীরা রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) প্রধান ফটকের সামনে সমবেত হন। পরে তারা রুয়েটের সামনের সড়ক অবরোধ করেন। একই সময় নগরীর নর্দান মোড় থেকে আন্দোলনকারীদের আরেকটি দল মিছিল নিয়ে এসে অবরোধকারীদের সঙ্গে যোগ দেয়। পরে সবাই একসঙ্গে মিছিল নিয়ে তালাইমারি হয়ে নর্দানের মোড়ে যান। সেখান থেকে ঘুরে একই স্থানে এসে আবারও বিক্ষোভ করেন তারা। এসময় বিক্ষোভকারীরা তালাইমারি পুলিশ বক্সে ভাঙচুর চালান। এছাড়া পার্শ্ববর্তী ছাত্রলীগের কার্যালয়ে ভাঙচুর ও আগুন দেন তারা। পরে তারা তালাইমারি মোড়, ভদ্রা হয়ে রেলগেট শহিদ এএইচএম কামরুজ্জামান চত্বর পর্যন্ত যান। ভদ্রা অতিক্রম করার সময় তারা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের একটি কার্যালয় ভাঙচুর করেন। এ সময় কার্যালয়টিতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এরপর তারা রেলগেট এলাকায় পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ফেলেন। এ সময় তারা রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। পরে রেলগেটে তারা একটি ট্রাফিক পুলিশ বক্স ভাঙচুর করেন। এ সময় পুলিশের ব্যবহৃত আসবাবপত্রে আগুন ধরিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে রেলগেট এলাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে রাজশাহী মহানগর পুলিশের বিশেষ শাখার (সিটি এসবি) সদস্য সাইফুল ইসলামকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন শিক্ষার্থীরা। তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া প্রায় চার থেকে পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীর হাতে লোহার পাইপ এবং বাঁশের লাঠি দেখা গেছে। এছাড়া বিক্ষোভকারীদের হামলায় শহিদ কামারুজ্জামান চত্বরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘বিতর্কিত’ সমন্বয়ক অর্ণব আহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন রাজশাহী শাখার সাধারণ সম্পাদক সামাদ খান।
জাবির হল খুলে দেওয়ার আলটিমেটাম, মহাসড়ক অবরোধ : দুপুর ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহুয়া চত্বরে সমবেত হতে থাকেন। পরে সাড়ে ১২টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবস্থান নেন। দুপুর ২টা পর্যন্ত এ অবরোধ কর্মসূচি চলে। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন। মিছিল থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়ার আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের নৃশংস হামলার ঘটনায় প্রশাসনের নীরব ভূমিকার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে চার দফা দাবি জানিয়েছে ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকসমাজ’।
বগুড়ায় পুলিশ বক্সে আগুন, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর : প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিপুলসংখ্যক আন্দোলনকারী বৃষ্টি উপেক্ষা করে বেলা ৩টার দিকে শহরের জলেশ্বরীতলা, কাটনারপাড়া, পিটিআই মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় সমবেত হয়। তাদের সঙ্গে বিপুলসংখ্যক ছাত্রী ও অভিভাবক ছিলেন। সরকারি আজিজুল হক কলেজের শিক্ষকদেরও দেখা যায়। মিছিল নিয়ে তারা শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথায় সমবেত হয়। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ, রোববার থেকে অসহযোগ আন্দোলন সফল করাসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন। আন্দোলনকারীদের অবস্থানের কারণে সাতমাথার সাতটি সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিকাল ৪টার দিকে সাতমাথায় জিলা স্কুলের সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক প্রহরায় ছিলেন। আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ভুয়া ভুয়া স্লোগান দেন। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল, জুতা স্যান্ডেল ও পানির বোতল নিক্ষেপ করতে থাকে। পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।
আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন মার্কেটের ছাদে লাগানো আওয়ামী লীগ নেতাদের শুভেচ্ছা ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে। সাতমাথায় পুলিশ বক্সে অগ্নিসংযোগ, অগ্রণী ব্যাংকের সাইনবোর্ড ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সিসি ক্যামেরা ভেঙে ফেলেন। মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর, মুজিব মঞ্চে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল রঙ দিয়ে বিকৃত করার পর জুতার মালা দেওয়া হয়। তারা রোড ডিভাইডার ও সৌন্দর্যবর্ধক গাছগুলো উপড়ে ফেলে। পুরো শহরের রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে দেয়। হামলাকারীরা সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়। ছবি তোলায় যমুনা টিভির ভিডিও ক্যামেরাপারসন আবদুল মোমিন, দীপ্ত টিভির রিপোর্টার আবু সাঈদ ও ইনডিপেনডেন্ট টিভির ভিডিও ক্যামেরপারসন আলী হায়দারকে মারধর করে।
বরিশালে মহাসড়ক অবরোধ : প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে বেলা ১১টায় বিএম কলেজের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা। মিছিল নিয়ে সাড়ে ১১টায় নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের সামনে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। টার্মিনালের সামনে দেড়টা পর্যন্ত অবস্থান করে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মহাসড়কের হাতেম আলী কলেজ সংলগ্ন মহাসড়কে যায় শিক্ষার্থীরা। সেখানে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন। এ সময় সারা দেশে শিক্ষার্থী নিহত ও আহতের ঘটনার বিচার ও সরকারের পদত্যাগ দাবি করেন তারা। এদিকে অবরোধ কর্মসূচি শেষে ফেরার পথে মহাসড়কের হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা এলাকায় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) গাড়ি ও পুলিশ বক্স ভাঙচুর করেছে শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় ৪ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তবে ভাঙচুরের ঘটনায় কোনো শিক্ষার্থী জড়িত নয় বলে জানিয়েছেন ছাত্র আন্দোলনের একাধিক সংগঠক। তাদের আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে দুষ্কৃতকারীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে দাবি তাদের।
জামালপুরে সংঘর্ষে আহত ১০ : দুপুরে জামালপুর-টাঙ্গাইল সড়কের পুরাতন বাইপাস মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে মির্জা আজম চত্বরে গিয়ে সড়ক অবরোধ করে ছাত্র-জনতা। পরে তারা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ প্রদক্ষিণ করে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের দিকে অগ্রসর হয়। এ সময় মিছিল থেকে রাস্তার দুপাশে থাকা ১৫ আগস্ট উপলক্ষ্যে টাঙানো ব্যানার ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলে আন্দোলনকারীরা। এছাড়াও সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজে জাতির পিতার ম্যুরালে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে তারা। পরে মিছিলটি শহরের নতুন হাইস্কল মোড়ে পৌঁছলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় শিক্ষার্থী ও সরকারি দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া-পালটাধাওয়া এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ সময় ১০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
শরীয়তপুরে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া ছাত্রলীগের : বেলা ১১টায় ভেদরগঞ্জ উপজেলার জেডএইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের করে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকরাও মিছিলে যোগ দেন। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া দেয়। এতে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
নওগাঁয় সংঘর্ষে আহত ১৩ : শহরের কাজির মোড়ে দুপুর ১২টার দিকে জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের মুক্তির মোড় হয়ে সরিষাহাটির মোড়ে আওয়ামী লীগের অফিসের সামনে পৌঁছলে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করে। এরপর শিক্ষার্থীরাও ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। এ সময় পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে উভয়পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সংঘর্ষে ইটের আঘাতে নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান, অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগো নিউজের নওগাঁ প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম শামীমসহ অন্তত ১৩ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের পর শিক্ষার্থীরা আবার জমায়েত হয়ে মুক্তির মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে সড়ক অবরোধ করে রাখেন তারা। দুপুর দেড়টার দিকে পরবর্তী দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা চলে যান।
সিলেটে পুলিশসহ আহত অর্ধশতাধিক : সকাল থেকে নগরীর রাজপথ ছিল আন্দোলনকারীদের দখলে। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পালটা ধাওয়া হয়েছে। বিক্ষোভকারী ছাত্র-জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এ সময় ৫ পুলিশ সদস্য ও অর্ধশতাধিক আন্দোলনকারী আহত হয়েছেন। ৪ আন্দোলনকারীকে আটক করেছে পুলিশ।
নোয়াখালীতে থানা লক্ষ্য করে গুলি : নোয়াখালী ও বেগমগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দুই দফা হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে। একই সাথে সুধারাম মডেল থানায় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও গুলি করার অভিযোগ করেছে জেলা পুলিশ। শনিবার বিকেল সোয়া ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত মাইজদীর টাউন হল মোড় এলাকায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দুই দফায় হামলা চালানো হয়। এ সময় ২ জন সাংবাদিকসহ ৮ জন আহত হয়েছে। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, বিক্ষোভকারীরা সুধারাম থানা লক্ষ্য করে গুলি করলে ভবনের তৃতীয় তলার একটি জানালার কাচে গিয়ে লাগে। তবে কোনো পুলিশ সদস্য আহত হয়নি।
ইবিতে ছাত্রলীগের কার্যালয় ভাঙচুর : শনিবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ডায়না চত্বর থেকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পৃথক বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। শিক্ষার্থীদের মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে প্রধান ফটকে এসে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে। এর আগে ক্যাম্পাসের জিয়া হল মোড়ে ছাত্রলীগের একটি কার্যলয় ভাঙচুর করে তারা। পরে শিক্ষকরা সংহতি জানিয়ে তাদের সঙ্গে মিলিত হয়। এ সময় তারা অনতিবিলম্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করেন।
জুড়ীতে শিক্ষার্থীদের মিছিলে ছাত্রলীগের ধাওয়া : জুড়ীতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মিছিলে ছাত্রলীগের ধাওয়ায় ৩ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। বিকাল ৪টায় জুড়ী শহরের কলেজ রোড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জে অবরোধ : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত মহাসড়কের সানারপাড় এলাকায় এ বিক্ষোভ করেন তারা।