বরিশাল সিটি কলেজে চলছে অধ্যক্ষ সুজিত ও নিম্নমান সহকারী আউয়ালের লুটতরাজ - Alokitobarta
আজ : বৃহস্পতিবার, ২০শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বরিশাল সিটি কলেজে চলছে অধ্যক্ষ সুজিত ও নিম্নমান সহকারী আউয়ালের লুটতরাজ


নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ বরিশাল সিটি কলেজে দিন দিন অনিয়ম-দুর্নীতির মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলছে অধ্যক্ষ সুজিত ও নিম্নমান সহকারী আউয়ালের লুটতরাজ।অভিভাবকহীন হয়ে পড়ছে প্রতিষ্ঠানটি। দিন দিন শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ছে। কলেজটির দিকে নজর দিচ্ছে না কেউ। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে শিক্ষার্থীর কাছ থেকে আস্থা হারাচ্ছে। নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে ভরপুর হয়ে উঠছে নগরীর অন্যতম এই কলেজটি।সূত্র জানায়, কলেজের প্রধান সহকারী আউয়াল হোসেন পিয়ন থেকে ২০১০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করেন এবং গভানিং বডি তার পদত্যাগ পত্র গ্রহন করেন। চাকুরী ছেড়ে ধারাবাহিক ভাবে একই কলেজে ২০১০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর প্রধান সহকারী হিসাবে যোগদান করেন। নিয়ম অনুযায়ী নিয়োগ হয় নাই মর্মে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পত্র স্বারক নং ৭জি/১৩৩ ৯ক-৩)/৮/৫১৯৬/২ তারিখ ২৩/০৫/২০১১ এম,পিও, নামঞ্জুর করা হয়। পরবর্তীতে ২০১১ সালের ২১ জুলাই নিম্মমান সহকারী কাম কম্পোউটার অপারেটর পদে যোগদান করে পিয়ন পদের ৬০৫৯৯৭ নং ইনডেক্রে দিয়ে চাকুরী করেন আউয়াল হোসেন। গত ২০১১ সালের ৭ এপ্রিল গভানিং বডির সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে কোন অনুমতি ছাড়াই অবৈধ ভাবে প্রায় ২ বছরের সরকারী বেতন ভাতা তুলে নেন তিনি । সরকারী টাকা অবৈধ ভাবে তোলার অভিযোগে সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাহানারা বেগম বাদী হয়ে বরিশাল চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রট আদালতে এমপি ২৩/২০১৮ মামলা দায়ের করেন। যাহার সি আর নং৩৬৮/১৯ মামলাটি চলমান রয়েছে। চাকুরী নেয়ার মধ্যেও ছিল তার আরও একধাপ দুর্নীতি। ১৬ বছর বয়সেই অবৈধভাবে তিনি পিয়ন পদে চাকুরী নিয়ে বেতন নেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়,তিনি শোলনা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৯২ সনে যশোর বোর্ডে এস.এস.সি পরীক্ষা দিয়ে দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করে। রোজিঃ নং ৮০৪৯৬/১৯৯০-৯১ রোল বরিশাল নম্বর ২৫২৬ জন্ম তারিখ ০৪ জুন ১৯৭৭। তিনি স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী পিয়ন পদে আবেদন করেন।

নিয়োগ পেয়ে ১৯৯৩ সালের ২ ডিসেম্বর পিয়ন পদে যোগদান করেন। তখন তার বয়স মাত্র ১৬ বছর ০৫ মাস ২৮ দিন। আর তিনি এমপিও ভুক্ত হয় ০১/০১/১৯৯৫ থেকে যাহার ইনডেক্রে নং ৬০৫৯৯৭ (ফেব্রুয়ারী-৯৫ কলেজের ১ম এমপিও) বেতন নেয়ার সময় তার বয়স ১৭ বছর ৬ মাস ২৭ দিন। এমপিও সিটের উপরে সু-স্পস্ট উল্লেখ আছে কোন শিক্ষক কর্মচারীর বেতন শুদ্ধ রূপে না হলে তার বেতন ভাতা করা যাবে না। অথচ আউয়াল হোসেন ধারা বাহিক ভাবে একই ইনডেক্রে চাকুরী করে যাচ্ছেন এবং বেতন ভাতা নিচ্ছেন। আউয়াল হোসেনের নিয়োগ সংক্রান্ত ব্যাপারে সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুর রশীদ খানের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন ১৮ বছরের আগে সরকারী বা বেসরকারী কলেজে পিয়ন থেকে অধ্যক্ষ পর্যন্ত চাকুরীর কোন সুযোগ নাই।অথচ আউয়ালের ক্ষেত্রে এ ঘটনা ঘটলেও তিনি জন্ম তারিখ ঘষামাজা করে আবেদন করেছেন। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন থাকলেও কতৃপক্ষ অজ্ঞাত কারণে নিশ্চুপ রয়েছে। এই আউয়ালকে দিয়েই অবৈধ ভাবে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুজিত কুমার দেবনাথ। তিনি গভানিং বডির সিদ্ধান্ত ও কোন টেন্ডার ছাড়াই কলেজের উত্তর পাশের টিনসেট ভবনটি আমানতগঞ্জ এলাকার জনৈক জাফর ও জামাল এর কাছে ১০ লাখ টাকায় বিক্রি করে। যাহার মধ্যে মাত্র আড়াই লাখ টাকা কলেজের হিসাবে জমা করেন। নাম না বলার শর্তে ২/৩ জন শিক্ষক জানায় ভারপাপ্ত অধ্যক্ষ সুজিত কুমার দেবনাথ তার ব্যক্তিগত পরিচালিত ফকিরবাড়ী রোড মাতৃছায়া কিন্ডার গার্ডেনে তার রুম এসি টাইস দিয়ে সংস্কার করেন এবং আউয়াল হোসেন এর পরিচালিত ছোয়া কিন্ডার গার্ডেন সংস্কার করেন বলে সুত্র জানায়। এ ছাড়াও ভারপাপ্ত অধ্যক্ষ সুজিত কুমার দেবনাথের ছত্র ছায়ায় আউয়াল কলেজ থেকে ২টি আলমারি , লোহার বড় গেট ও ১০টি ফ্যান, ২/৩ হাজার ইট ও ২০-২৫ বস্তা খোয়া নিয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করেছে। এছাড়াও বরিশাল সিটি কলেজের গভার্নিং বডির মেয়াদ ২০১৮ সালের ২১ জানুয়ারী শেষ হলে একই বছরের ১৩ মে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কলেজে চিঠি প্রেরণ করা হয়। সেখানে গভার্নিং বডির সভাপতি করা হয় জেলা প্রশাসককে। কিন্তু সেই চিঠি পাওয়ার সাথে সাথে দুর্নীতির বটবৃক্ষ অবৈধ অধ্যক্ষ সুজিত দেবনাথ তা গায়েব করে দেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যনেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্ব দেয়া চিঠি বিষয় কাউকে কিছু না বলে সাবেক কমিটির সভাপতিকে কাজে লাগাতে থাকেন। প্রতি মাসের বেতন থেকে শুরু করে কলেজের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রে সাবেক গভার্নিং বডির সভাপতি জেবুন্নেছা আফরোজ এমপির স্বাক্ষর আনে সুজিত । ওই চিঠি প্রাপ্তির বিষয়টি সদর আসনের এমপি জেবুন্নেছাকেও জানানো হয়নি। জেবুন্নেছা না জেনেই অধ্যক্ষ সুজিতের কথা বিশ্বাস করে চেক হতে সকল গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রে স্বাক্ষর করে দেন। এ সুযোগে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যাংক থেকে তুলে আত্মসার্থ করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুজিত। বরিশাল সদর আসনের সাবেক এমপি ও সিটি কলেজের গভার্নিং বডির সাবেক সভাপতি জেবুন্নেছা আফরোজ বলেন ,জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সভাপতি করে আনা চিঠির বিষয়ে আমাকে কেউ কিছু জানায় নি। জানলে স্বাক্ষর করতাম না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুসারে কলেজে সাধারন হিসাব নম্বরে সর্বনিম্ন ৫ লাখ টাকা থাকার বিধান । অপর দিকে যে খাতে আয় সে খাতে ব্যয় হওয়ার কথা থাকলেও তিনি তার ইচ্ছা মত ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ব্যক্তিগত কাজে খরচ করেন। কলেজের ক্লাশরুম ভাড়া দিয়ে ব্যাংকে জমা দেন না বরং বিদ্যুৎ বিল কলেজ তহবিল থেকে পরিশোধ করেন। এ ব্যাপারে কলেজের ক্যাশিয়ারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের আমলের কোন আয় ব্যয় সংক্রান্ত কিছুই জানি না এবং আমাকে জানায় না।সুজিত বরিশাল সিটি কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করার পর থেকে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায়কৃত অর্থের নেই কোন হিসেব নিকাশ। সূত্র মতে ২০১৬-২০১৭, ২০১৭-২০১৮ ও ২০১৮-২০১৯ সনের উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেনীতে ভর্তি কৃত ছাত্র-ছাত্রীর জমাকৃত টাকার কোন হিসাব-নিকাশ নাই । উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা ২০১৭ সনের ৬৪ জন , ২০১৮ সনের ৫৫ জন, ২০১৯ সনের ৪৩ জন পরীক্ষার্থীর ফরম ফিলাপের সয়ম আদায়কৃত অর্থে একটি টাকাও ব্যাংকে জমা দেয় নাই। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা ২০১৯ সনের ফরম পূরন কমিটির আহবায়ক সহকারী অধ্যাপক মোঃ আবু জাফর জানান ফরম পূরনের সময় ২০৬ জন ফরম পূরন করেছে কিন্তু পরীক্ষার সময় পরীক্ষা দিয়েছে ২৫১ জন পরীক্ষার্থী ৪৩ জন কি ভাবে ফরম পূরন করেছে তা কেবল আ্উয়াল ও সুজিত কুমার দেবনাথ জানেন। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা ২০১৭ সনের ৬৪ জনের ব্যাপারে কলেজের একজন কর্মচারী লিখিত আকারে গভার্নিং বডির সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য জেবুন্নেচ্ছা আফরোজ এর কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছিলেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ হয়নি । উপবৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর বাবদ উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে টিউশন ফি অগ্রনী ব্যাংক লিমিটেড বটতলা শাখায় জমা হয় প্রায় আড়াই লাখ টাকা। যাহা শিক্ষক কর্মচারীদের মধ্যে বন্টন হবে। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুজিত কুমার দেবনাথ ব্যাংক থেকে তুলে আত্মসাত করেন। চাকুরী নেয়ার ব্যাপারে বরিশাল সিটি কলেজের নিম্নমান সহকারী আউয়াল হোসেন বলেন, নিয়োগ কমিটি আমার কাগজপত্র দেখেই নিয়োগ দিয়েছেন। অবৈধ ভাবে বেতন নেয়ার ব্যাপারে বলেন, আমার বেতন উত্তোলনের ক্ষমতা নেই। ততকালীন কলেজ কতৃপক্ষ উত্তোলন করে দিয়েছে। দুর্নীতির ব্যাপারে কলেজ অধ্যক্ষ সুজিত কুমার দেবনাথ বলেন,আমি কোন দুর্নীতির সাথে যুক্ত নয়।কলেজে আসলে কাগজ পত্র দেখতে পারবেন। সত্যতা যাচাইয়ে কলেজে গেলে তার মিটিং আছে বলে জানিয়ে চলে যায়।

Top