প্রশাসক নিয়োগের ঘোষণা,জেলা পরিষদ প্রশাসক পদে বিতর্কিতদের নাম
মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া :শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের পদ। নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত কাজ চালিয়ে নিতে প্রশাসক নিয়োগের ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। প্রথমে মনে করা হয়েছিল প্রশাসক পদে বসবেন সরকারি কর্মকর্তারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নেতারাই আসছেন এই পদে। প্রশাসক পদের জন্য প্রস্তাবিতদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। বিভিন্ন বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্বে থাকা নেতারা করছেন এই তালিকা। ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে বরিশালের ৬ জেলার তালিকা তৈরি। প্রশাসক পদে ১৪-১৫ জনের একটি তালিকা হাইকমান্ডের কাছে জমা দিয়েছেন বরিশাল বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্বে থাকা নেতারা। তালিকায় নাম থাকা অনেকেই বিতর্কিত বলে উঠেছে অভিযোগ। প্রস্তাবিত তালিকায় বরিশালের সদ্য সাবেক ৬ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের মধ্যে ৫ জনের নাম থাকলেও বাদ পড়েছেন পিরোজপুরের মহিউদ্দিন মহারাজ।
বরিশাল বিভাগ থেকে তালিকা যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. আফজাল হোসেন।তিনি বলেন,নির্দেশনা অনুযায়ী একটি তালিকা তৈরি করে হাইকমান্ডের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। অনেক যাচাই-বাছাইয়ের পর তৈরি হয়েছে এই তালিকা।’ আওয়ামী লীগের নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, ৬ জেলার মধ্যে একমাত্র পিরোজপুর ছাড়া বাকি ৫ জেলারই সদ্য সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের নাম রয়েছে তালিকায়। তারা হলেন বরিশালের মাইদুল ইসলাম, ঝালকাঠির শাহ আলম সরদার, বরগুনার দেলোয়ার হোসেন, পটুয়াখালীর খলিলুর রহমান মোহন এবং ভোলার আ. মমিন টুলু।বাদ পড়েছেন কেবল পিরোজপুরের মহিউদ্দিন মহারাজ।সূত্রমতে, প্রথমে করা খসড়া তালিকায় নাম ছিল মহারাজের।সে সময় মহারাজের পাশাপাশি তালিকায় ছিল পিরোজপুর সদর আসনের সাবেক এমপি শাহ আলম এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড.আব্দুল হাকিমের নাম। কিন্তু ঢাকায় চূড়ান্ত তালিকা জমা হওয়ার পর দেখা যায় মহারাজের নাম বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক এমপি একেএমএ আউয়ালের নাম।
এদিকে তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তাদের বেশ কয়েকজন বেশ বিতর্কিত নিজ নির্বাচনি এলাকায়। নানা অভিযোগে বছরজুড়ে গণমাধ্যমের শিরোনামে থাকার পর গত জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাননি সাবেক এমপি একেএমএ আউয়াল। মনোনয়নবঞ্চিত আউয়ালের বিরুদ্ধে গত কয়েক বছরে দায়ের হয়েছে দুর্নীতির বেশ কয়েকটি মামলা। দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা এসব মামলায় আউয়ালের পাশাপাশি আসামি করা হয়েছে তার স্ত্রী লায়লা ইরাদকে। তাদের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা বাবু চণ্ডীচরণ পাল বলেন, ‘ভালো লোক হলে তো আউয়ালকে সংসদ সদস্যের পদ হারাতে হতো না।তাছাড়া তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির একাধিক মামলা বিচারাধীন।’ বিষয়টি সম্পর্কে সাবেক এমপি আউয়াল বলেন, ‘আমি তো জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হতে চাই না।আমার লক্ষ্য এমপি নির্বাচন করা। তারপরও যদি নেত্রী দায়িত্ব দেন তাহলে পালন করা ছাড়া তো কোনো উপায় নেই।’ দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সব আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। একদিন প্রমাণ হবে আমি দুর্নীতিবাজ নই।’ তালিকায় নাম থাকা বরগুনার সদ্য সাবেক জেলা চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধেও রয়েছে নানা অভিযোগ। জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে নৌকা ডোবানো দেলোয়ার সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও বরগুনায় একাধিক ইউনিয়নে করেছেন নৌকা প্রতীকের বিরোধিতা। চেয়ারম্যান থাকাকালে কোটি কোটি টাকার অনিয়ম দুর্নীতিরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. মজিবুল হক কিসলু বলেন, কাজ না করে প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতেরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সব মিথ্যা বলে দাবি করেন দেলোয়ার হোসেন। এদের পাশাপাশি নারী কেলেঙ্কারির ভিডিও ভাইরাল হওয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে ঝালকাঠির সদ্য সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সরদার শাহ আলমের বিরুদ্ধে। অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।
এদের বাইরে জেলা পরিষদের প্রশাসক পদে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. তালুকদার মো. ইউনুস, পটুয়াখালীতে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি কাজী আলমগীর ও সাধারন সম্পাদক ভিপি আঃ মান্নান, ভোলায় জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ফজলুল কাদের মজনু মোল্লা, ঝালকাঠিতে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি খান সাইফুল্লাহ পনির এবং বরগুনায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবিরের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে।