লণ্ডভণ্ড দেশের অর্থনীতি,দুর্গতদের পাশে নেই রাজনৈতিক দলগুলো
আলোকিত বার্তা:করোনাভাইরাসের থাবায় লণ্ডভণ্ড দেশের অর্থনীতি।নিদারুণ কষ্টে দিন কাটছে খেটে খাওয়া মানুষের।এর মধ্যেই দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ বন্যা।পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ।খাদ্যের অভাবে ক্ষুধার যন্ত্রণায় মানবেতর দিন পার করছেন তারা। একদিকে করোনা অন্যদিকে বন্যা- এমন পরিস্থিতিতে দিশাহারা মানুষগুলো কী করবে বুঝে উঠতে পারছে না। কিন্তু এই অসহায় মানুষের পাশে নেই রাজনৈতিক দলগুলো। করোনায় কাজ হারানো মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের লোক দেখানো ফটোসেশন দেখা গেছে।কিন্তু বানভাসিদের সহায়তা দেয়ার ফটোসেশনও দেখা যাচ্ছে না। শুধু আওয়ামী লীগ, বিএনপি নয়; বাম, ইসলামী বা প্রগতিশীল কোনো দলই অসহায়দের পাশে নেই। গঠন করা হয়নি কেন্দ্রীয় কোনো ত্রাণ কমিটিও।রাজনৈতিক দলগুলো নীরব থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সংশ্লিষ্টদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সোমবার মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে তিনি এ নির্দেশ দেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, মন্ত্রিসভায় বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে, বন্যা নিয়ে সবাইকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। কোনোভাবেই মানুষের যেন কোনো ক্ষতি না হয় এবং রিলিফের যেন কোনো ঘাটতি না হয় প্রধানমন্ত্রী সেই নির্দেশনা দিয়েছেন।
জানতে চাইলে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন,করোনার মহামারীর মধ্যেই দেশের বড় একটি অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। সেখানকার গরিব ও অসহায় মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। কিন্তু এসব মানুষের পাশে রাজনৈতিক দলগুলো নেই। রাজনৈতিক দলগুলো মুখে মানুষের কথা বললেও বাস্তবে এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলেও সবার উচিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো। রাষ্ট্রের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান, এনজিওগুলোকে বন্যার্তদের পাশে এগিয়ে আসতে হবে।উত্তরাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল ও সিলেটসহ ২০টি জেলা বন্যাকবলিত। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। যেসব এলাকায় পানি কমছে সেখানে নানা রোগ, চরম খাদ্য সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে। অনেক এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র নদীভাঙন। সবজি ক্ষেত ও বীজতলা পানির নিচে। এমন পরিস্থিতিতে চোখে অন্ধকার দেখছেন দুর্গতরা। সরকারিভাবে যে ত্রাণ দেয়া হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।
অন্যান্য বছরে বন্যা-দুর্যোগের সময় শিল্পপতি ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে দলগতভাবে বিভিন্ন কার্যক্রম দেখা গেছে।কিন্তু এবার তা অনুপস্থিত।শুধু রাজনৈতিক দল নয়,এনজিওগুলোও নীরব। নাগরিক সমাজ, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও দর্শকের ভূমিকায়। দুর্গত এলাকার রাজনৈতিক নেতা এবং জনপ্রতিনিধিরা অনেকেই এলাকা ছেড়ে শহরে আশ্রয় নিয়েছেন। অসহায় মানুষের পাশে না দাঁড়ালেও সরকারের বিরোধিতা কিংবা নানা পরামর্শ দেয়ায় ব্যস্ত অনেকে।ঢাকায় বসে ভার্চুয়াল মাধ্যমে ব্যস্ত কাদা ছোড়াছুড়িতে তারা। এর আগে করোনা শুরুর পরও একই চিত্র দেখা গেছে। ২৬ মার্চ থেকে সারা দেশে এক প্রকার অঘোষিত লকডাউন চলে। যারা দিন আনে দিনে খায় তাদের কোনো কাজ ছিল না। সবাই ছিল ঘরে আবদ্ধ। কিন্তু এসব অসহায়, ছিন্নমূল মানুষের পাশে রাজনীতিবিদদের তেমন দেখা যায়নি। এনজিওগুলোর তৎপরতাও ছিল খুব কম। সরকারি এবং ব্যক্তি উদ্যোগে যে ত্রাণ দেয়া হয় তা ছিল চাহিদার তুলনায় খুবই কম।জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে সরকারের এখনও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে বিএনপির স্থানীয় নেতাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া করোনা মনিটরিংয়ের জন্য যেসব বিভাগীয় টিম গঠন করা হয়েছে তাদেরও বানভাসিদের পাশে দাঁড়াতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি খুব শিগগিরই কেন্দ্রীয় টিম গঠন করা হবে। ত্রাণসামগ্রী নিয়ে তারা দ্রুত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবে।নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন,বন্যার্তদের পাশে রাজনৈতিক দলগুলোর এগিয়ে আসা উচিত। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় বড় পরিসরে তা করার সুযোগ অনেক দলের নেই। এক্ষেত্রে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত। সারা দেশে তিন শতাধিক সংসদ সদস্য রয়েছে।তারা যেভাবেই নির্বাচিত হোক সেই বিতর্কে যাচ্ছি না। তারা টাকাওয়ালা এবং টাকা দিয়েই নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের পাশাপাশি রয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। তাদের অবশ্যই এগিয়ে আসা উচিত।