বাংলাদেশি নাগরিকদের পাচার করা টাকার তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ
আলোকিত বার্তা:সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে (সুইস ব্যাংক) বাংলাদেশি নাগরিকদের পাচার করা টাকার তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফআইইউ) পক্ষ থেকে সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ সংস্থা ‘মানি লন্ডারিং রিপোর্টিং অফিস, সুইজারল্যান্ড’ (এমআরওএস) এর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভারতীয় মডেল অনুসরণ করছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।২৫ জুন প্রকাশিত সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৯ সালে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকে বাংলাদেশি নাগরিকদের জমা অর্থের পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা। বিশ্বের অন্যান্য দেশের নাগরিকদের সুইস ব্যাংকে টাকা জমা রাখার প্রবণতা যখন কমছে, তখনও বাংলাদেশি নাগরিকদের জমা টাকার পরিমাণ বেড়েই চলেছে।১৯৯৬ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমার পরিমাণ ছিল ৩৩৭ কোটি টাকা। ২৪ বছরে জমার পরিমাণ বেড়েছে ১৬ গুণের বেশি। এসব অর্থের বেশির ভাগই পাচার করা। কেননা বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা নিয়ে বিনিয়োগ করতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এ ধরনের কোনো অনুমোদন কাউকে দেয়া হয়নি। ফলে সুইস ব্যাংকে জমা ওইসব অর্থ পাচার হিসেবেই ধরে নেয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কিছু অর্থ রয়েছে তাদের, যারা সুইজারল্যান্ডে বা অন্যান্য দেশে চাকরি করেন। সুইস ব্যাংকগুলোয় টাকা রাখলে তেমন কোনো মুনাফা পাওয়া যায় না। বরং ব্যাংকের সার্ভিস চার্জ ও সরকারের নানা করের কারণে টাকার পরিমাণ কমে যায়। ফলে চাকরিজীবীরা সুইস ব্যাংকগুলোয় দৈনন্দিন কার্যক্রম ছাড়া সঞ্চয় হিসাবে কোনো অর্থ রাখেন না।দেশ থেকে দুর্নীতির অর্থ নিরাপদে রাখার জন্যই অনেকে টাকা ওই দেশে নিয়ে যাচ্ছেন। ওই দেশে টাকা জমা রাখা যেমন সহজ, তেমনি আমানতকারীদের তথ্যের গোপনীয় কঠোরভাবে মেনে চলায় বিনিয়োগকারীদের বড় ধরনের আস্থা রয়েছে সুইস ব্যাংকগুলোর প্রতি। যে কারণে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।যে কারণে ২০১৪ সাল থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংক সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করে আসছে। এমনকি তাদের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করার জন্য একাধিকবার চিঠি দিয়েছে। কিন্তু কোনো সাড়া মেলেনি। তবে সুনির্দিষ্টভাবে কতিপয় ব্যক্তি সম্পর্কে সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে তথ্য চেয়ে সে ব্যাপারে তাদের সাড়া পেয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএফআইইউর প্রধান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি নাগরিকদের জমা টাকার ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহের জন্য সুইস মানি লন্ডারিং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে যোগাযোগের ধরন হচ্ছে বাংলাদেশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (এফআইউ) সুইজারল্যান্ডের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের সঙ্গে।
এতে ভারতীয় মডেল অনুসরণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গত কয়েক বছরে ভারত সুইস ব্যাংকে সে দেশের নাগরিকদের জমা অর্থের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করেছে। ভারত তথ্য পেতে কী মডেল ব্যবহার করেছে, বাংলাদেশ সেটি সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছে। এখন বাংলাদেশও সেই পথে এগোচ্ছে।তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এবার হয়তো ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে। কেননা সুইজারল্যান্ড এখন বিভিন্ন দেশকে তথ্য দিতে শুরু করেছে।সূত্র জানায়, বাংলাদেশ এখন আন্তর্জাতিক মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে কার্যকর জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা এগমন্ট গ্রুপের সদস্য। ১৬৪টি দেশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট এ সংস্থার সদস্য।
সুইজারল্যান্ডের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট ‘মানি লন্ডারিং রিপোর্টিং অফিস, সুইজারল্যান্ড’ (এমআরওএস) এগমন্ট গ্রুপের সদস্য। ফলে এগমন্ট গ্রুপের মাধ্যমে ওই দেশের দুই আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের মধ্যে যোগাযোগ হচ্ছে।নিয়ম অনুযায়ী এগমন্ট গ্রুপের মাধ্যমে সদস্য যে কোনো দেশ অপর কোনো দেশের কাছে তথ্য চাইতে পারে। সে তথ্য সংশ্লিষ্ট দেশ দিয়েও থাকে। তবে তথ্য চাইতে হয় সুনির্দিষ্টভাবে। অর্থাৎ ব্যক্তির নাম, ঠিকানা, পাসপোর্ট নম্বরসহ।এক্ষেত্রে নামের মধ্যে ভিন্নতা থাকলে তথ্য পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এর আগে বাংলাদেশের বহুল আলোচিত একজন জনশক্তি রফতানিকারক ব্যবসায়ীর নামে তথ্য অনুসন্ধান করে প্রথমে পাওয়া যায়নি। পরে তার একাধিক নামে অনুসন্ধান করে বেশকিছু তথ্য পাওয়া যায়।সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভারত ২০১৮ সালে তাদের দেশের নাগরিকদের নামে সে দেশে জমা অর্থ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেছে। ভারত কি প্রক্রিয়ায় সুইজারল্যান্ড থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে, সে সম্পর্কে বাংলাদেশ অবহিত হয়েছে।এ বিষয়ে আরও বিশদ তথ্য সংগ্রহের জন্য বিএফআইইউর একটি গ্রুপ কাজ করছে। এর ভিত্তিতে সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।এদিকে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত সুইস ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সুপারিশে সে দেশের সরকার তাদের ব্যাংকিং আইনে বেশকিছু শিথিলতা এনেছে। এর মধ্যে বিদেশে আমানতকারীদের ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য চাইলে তা এখন দিচ্ছে। আগে দেয়া হতো না।বিশেষ করে যেসব বিদেশি দুর্নীতি, কর ফাঁকি দিয়ে অর্থ সুইস ব্যাংকে রেখেছে- এমন সব গ্রাহকের তথ্য সুইস ব্যাংক দিচ্ছে। তবে গ্রাহকের বিরুদ্ধে আদালতে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকতে হবে।