অর্থপাচারকে সুকৌশলে বৈধতা দেওয়ার অভূতপূর্ব দুর্নীতি সহায়ক সব পদক্ষেপ ঘোষণায় টিআইবি গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ

আলোকিত বার্তা:অর্থমন্ত্রী উত্থাপিত জাতীয় সংসদে কালো টাকা সাদা করার প্রস্তাব প্রত্যাহার চায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি।বৃহস্পতিবার (১২ জুন) বাজেট পেশ করার সময় সংসদে এ প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী।এর পরিপ্রেক্ষিতে টিআইবি এক বিবৃতিতে শুক্রবার জানায়, করোনা ভাইরাস মহামারিতে বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে সচল করা, রাজস্ব আয় ও বিনিয়োগ বাড়ানো এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির নামে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অপ্রদর্শিত বা কালো টাকা সাদা করা ও অর্থপাচারকে সুকৌশলে বৈধতা দেওয়ার অভূতপূর্ব দুর্নীতি সহায়ক সব পদক্ষেপ ঘোষণায় টিআইবি গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে।একই সঙ্গে অনৈতিক, বৈষম্যমূলক ও সংবিধান পরিপন্থি এসব পদক্ষেপ বাতিলে জোর দাবি জানায়। দীর্ঘদিনের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা ও স্বার্থান্বেষী মহলের দুর্নীতিতে পর্যুদস্ত স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ ও সুশাসন নিশ্চিতে জোরালো কোনো পদক্ষেপ বাজেটে না থাকা এবং করোনাকালীনও এ খাতে বরাদ্দ অপর্যাপ্ত হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের নামে সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অঙ্গীকার ও দেশের সব প্রচলিত আইন উপেক্ষা করে বাজেটে আয়কর অধ্যাদেশে নতুন দু’টি ধারা সংযোজনের মাধ্যমে জমি, ভবন, ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট কেনা, নগদ অর্থ, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার ও বন্ডে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা সাদা করার অবারিত সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। একই সঙ্গে অর্থের বা সম্পদের উৎস নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের প্রশ্ন তোলার বিধানটিও রহিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।’

বাজেটের এ প্রস্তাবে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এটি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত দুর্নীতির প্রতি শূন্য সহনশীলতার সম্পূর্ণ বিপরীত ও অমর্যাদাকর পদক্ষেপ, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বছরের পর বছর এ ধরনের সুবিধা দিয়ে দেশের অর্থনীতির কোনো উপকার হয়নি, উল্লেখযোগ্য রাজস্ব আদায় হয়নি। কোনো বিনিয়োগতো নয়-ই বরং অনৈতিকতা প্রশ্রয় পেয়েছে আর সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সরকার প্রস্তাবিত ধারাগুলো প্রত্যাহার করে নেওয়ার মাধ্যমে এই আত্মঘাতী অবস্থান থেকে সরে আসবে এই আশাবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর শূন্য সহনশীলতার ঘোষণা আর অপ্রদর্শিত আয় এর পোশাকে কালোটাকা ও তার দ্বারা অর্জিত সম্পদ আর অর্থপাচার বৈধতা দেওয়া শুধু পরস্পরবিরোধী নয় বরং সরাসরি দুর্নীতি সহায়ক এবং সরকার প্রধানের অঙ্গীকারের অবমাননাকর।কোভিড-১৯ মোকাবিলায় জরুরি তহবিল হিসেবে ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দের বাইরে স্বাস্থ্যখাতের বাজেট বরাদ্দ একেবারেই গতানুগতিক আখ্যা দিয়ে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এই থোক বরাদ্দ যেন ব্যাপকতর দুর্নীতির সুযোগে রূপান্তরিত হতে না পারে তার পথনকশা থাকতে হবে।

একইভাবে প্রত্যাশা ছিল করোনা সংকটের কারণে কর্মহীন হয়ে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাওয়া মানুষের জন্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতা বাড়ানো এবং কর্মসংস্থান তৈরিতে ব্যাপকভিত্তিক পরিকল্পনা। কিন্তু বাজেট বিভিন্ন শিল্পখাতের জন্য কর ও শুল্ক ছাড়ের ওপর প্রাধান্য দিতেই বেশি মনোযোগী হয়েছে।তিনি আরো বলেন, ক্রমাগত প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দুর্যোগে ক্ষয়-ক্ষতি বাড়ার প্রেক্ষাপটে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড বিসিসিটিএফ- এ বর্ধিত মাত্রায় বরাদ্দের প্রয়োজন হলেও মাত্র ১শ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। একইভাবে ঘূর্ণিঝড় আম্পান, আম্পান পরবর্তী জলোচ্ছ্বাস ও বন্যায় ক্ষয়-ক্ষতি মোকাবিলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে কোনো সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ রাখা হয়নি বরং মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ কিছুটা কমে গেছে।