করোনাভাইরাসের প্রভাবে গার্মেন্ট শিল্পের অবস্থা ক্রমশই খারাপ হচ্ছে।প্রতিদিনই ক্রেতা হারাচ্ছে এ সেক্টর। - Alokitobarta
আজ : শুক্রবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

করোনাভাইরাসের প্রভাবে গার্মেন্ট শিল্পের অবস্থা ক্রমশই খারাপ হচ্ছে।প্রতিদিনই ক্রেতা হারাচ্ছে এ সেক্টর।


আলোকিত বার্তা:করোনাভাইরাসের প্রভাবে গার্মেন্ট শিল্পের অবস্থা ক্রমশই খারাপ হচ্ছে।প্রতিদিনই ক্রেতা হারাচ্ছে এ সেক্টর।এ অবস্থায় সরকারের কাছ থেকে বিশেষ প্রণোদনা না পেলে কারখানা বন্ধ করা ছাড়া উপায় নেই।কারণ,এ পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের বসিয়ে রেখে বেতন দেয়ার সক্ষমতা বেশিরভাগ গার্মেন্ট মালিকের নেই।সঙ্গত কারণে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে দ্রুত সিদ্ধান্ত না এলে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য মালিকদের দায়ী করা সমীচীন হবে না।পাশাপাশি সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল মহলও এর দায় এড়াতে পারবে না।বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন গার্মেন্ট মালিকদের অনেকে বৃহস্পতিবার কাছে এমন মন্তব্য করেন।এদিকে এ বিষয়ে সম্প্রতি একটি গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকেও নানা শঙ্কার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গোপনীয় প্রতিবেদন পাঠানো হয়।এতে মূল বক্তব্য হিসেবে বলা হয়,ঈদ সামনে রেখে অনেক কারখানা শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সময়মতো পরিশোধ করতে না পারায় গার্মেন্ট সেক্টরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি, রাস্তা অবরোধ, ভাংচুরের মতো আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী ঘটনা ঘটে।করোনাভাইরাসের কারণে উৎপাদন সরঞ্জামাদি অভাবে এ বছর গার্মেন্ট কারখানাগুলো চাহিদা অনুযায়ী অর্ডার না পাওয়া, উৎপাদন কমে যাওয়া এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকায় এর নেতিবাচক প্রভাব আগামী ঈদুল ফিতরে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় এখন থেকেই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা প্রয়োজন।

এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হকের বক্তব্য নেয়ার জন্য বৃহস্পতিবার কয়েক দফা তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি।সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শীর্ষস্থানীয় গার্মেন্ট শিল্প মালিক বৃহস্পতিবার বলেন,প্রতিদিনই গার্মেন্ট মালিকদের অর্ডার বাতিল হয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে অহেতুক গার্মেন্ট চালু রেখে অনেকে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন দিতে পারবেন না। এর ফলে শ্রমিকদের বেতন বন্ধ হলে স্বাভাবিকভাবে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তায় নামবেন। কারণ, শ্রমিকরা স্বল্প বেতন পান।আবার উৎপাদন ছাড়া কারখানা চালু রেখেও শ্রমিকদের বসিয়ে বসিয়ে বেতন-ভাতা দেয়াও মালিকদের পক্ষে সম্ভব হবে না। তাই এ সংকট মোকাবেলায় বিজিএমইএকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।তারা কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিলে তার খেসারত কে দেবে? তিনি মনে করেন,সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে বিজিএমইএকে যত দ্রুত সম্ভব সবার জন্য মঙ্গল হয় এমন সিদ্ধান্তে আসতে হবে। প্রয়োজনে এ সেক্টরের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ টিকিয়ে রাখতে সরকারকে উদার হস্তে এগিয়ে আসতে হবে। সংকট মোকাবেলায় এ সেক্টরের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন বিশেষ তহবিল গঠন করে সেখান থেকে বিশেষ প্রণোদনা দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, তৈরি পোশাক সম্পূর্ণ রফতানিমুখী শিল্প। ক্রেতারা গরমকালে এক ধরনের পোশাকের অর্ডার দেন এবং শীতের সময় অন্য পোশাকের অর্ডার দেন। গরমকালের অর্ডার শীতকালে সরবরাহ করা যাবে না।তেমনি শীতের অর্ডার গরমকালে কেউ নেবেন না। তাছাড়া এই সংকট কতদিন চলবে, তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেন না। এ অবস্থায় অর্ডার ছাড়া উৎপাদন করার কোনো যৌক্তিকতা নেই।সুনির্দিষ্ট অর্ডার ছাড়া ধারণাভিত্তিক পোশাক প্রস্তুত করলে তা বিক্রির নিশ্চয়তা কে দেবে? বিক্রি করতে না পারলে অবিক্রীত পণ্য লোকসান দিয়ে বঙ্গবাজারে বিক্রি করতে হবে। সুতারং সময় থাকতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আবেগ দিয়ে অনেক কিছু চালানো সম্ভব হলেও ব্যবসা কিংবা অর্থনীতি বেশিদিন চালানো যায় না। মহাসংকটে পড়লে কোনো মালিক ভর্তুকি দিয়ে গার্মেন্ট চালাবেন না।অপর একজন গার্মেন্ট মালিক বলেন, এই মুহূর্তে সরকার এবং বিজিএমইএকে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে তা হল- মালিক এবং শ্রমিকদের কেউই যাতে বেকায়দায় না পড়েন।মালিক-শ্রমিক উভয়ের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে দায়িত্বশীলদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত দিতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা মনে করছি, কারখানা চালু রাখতে হলে সরকারকে মালিকদের অফেরতযোগ্য ক্রাইসিস ফান্ড দিতে হবে।

করোনা আক্রান্ত বিশ্বের অনেক দেশ শিল্পকে বাঁচাতে ইতিমধ্যে এ ধরনের তহবিল গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, সরকার ও বিজিএমইএর পক্ষ থেকে যত কথাই বলা হোক না কেন, এ পরিস্থিতিতে লোকসান দেয়ার প্রশ্ন এলে কোনো গার্মেন্ট মালিকই কারখানা চালু রাখতে চাইবেন না। কারণ একটি কারখানায় প্রতি মাসে বিপুল অঙ্কের বেতন-ভাতা গুনতে হয়।ডিজাইন অ্যান্ড সোর্স গার্মেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ মুহূর্তে ক্রেতারা বানানো পণ্যের অর্ডার বাতিল করছেন। এ অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে কোনো গার্মেন্ট মালিক শ্রমিকদের বেতন দেয়া তো দূরের কথা, নিজের ঘরের জন্য চালও কিনতে পারবেন না।কারণ পণ্য রফতানি হওয়ার পর ডকুমেন্ট ব্যাংকের কাছে বিক্রি করে গার্মেন্ট মালিকদের টাকা নিতে হয়। এখন যেহেতু অর্ডারই বন্ধ হয়ে গেছে, তাই ডকুমেন্ট বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। অর্থাৎ গার্মেন্ট মালিকদের হাত শূন্য। সুতরাং সব ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সরকারকে সবার জন্য মঙ্গল হয় এমন সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ জহির বলেন, অর্ডার না থাকলে গার্মেন্টের অবস্থাভেদে মার্চের পর অনেকে শ্রমিকদের বেতন দিতে পারবেন না। ক্রেতাদের অর্ডার বাতিল না করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু তারা বলেছেন, তারাই ব্যাংক খেলাপি হয়ে পড়ছেন।অন্যদিকে কাপড় ও এক্সেসরিজ মালিকরা বিল চাচ্ছেন। এ অবস্থায় ‘বেইল আউট’ প্যাকেজ ঘোষণা না করা হলে গার্মেন্ট খাত বাংলাদেশে টিকিয়ে রাখা যাবে না। কারণ করোনাভাইরাসের স্থায়িত্ব বিশ্বব্যাপী কতদিন থাকবে তা কেউ বলতে পারছেন না।তিনি আরও বলেন, এ সংকট মুহূর্তে সরকার গার্মেন্ট শ্রমিকদের বেতনের ব্যবস্থা করতে পারে। প্রয়োজনে গার্মেন্টস মালিকদের ডলারে ব্যাংক ঋণ দিতে পারে, যা সময় সুযোগমতো ব্যবসায়ীরা পরিশোধ করে দেবেন। এখন গার্মেন্ট বন্ধ করে দিলে পরবর্তীতে তা চালু করা আরও কঠিন হয়ে পড়বে। এ কঠিন সময়ে সরকার গার্মেন্ট খাতকে সহায়তা দিলে এ শিল্পটি টিকে থাকবে এবং লক্ষাধিক মানুষ কর্মসংস্থান হারাবেন না।

ক্যাপিটাল ফ্যাশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শওকত আলী ভূঁইয়া বলেন, এখন কারখানার আগের অর্ডারের কাজ চলছে। নতুন কোনো অর্ডার না পাওয়ায় এপ্রিল থেকে কাজ থাকবে না। তখন কারখানা বন্ধ করে দেয়া ছাড়া অন্য উপায় থাকবে না।বড় বড় কারখানা বেশি বন্ধ হবে। কারণ তাদের বেতন-ভাতাসহ আনুষঙ্গিক খরচ বেশি। তাই গার্মেন্ট খাত বাঁচিয়ে রাখতে হলে অন্য দেশের মতো মালিকদের আর্থিক সুবিধা দিতে হবে। সিঙ্গাপুরে দোকানদারদের বেতন দিচ্ছে সরকার। তেমনি এপ্রিল-জুন মাসের শ্রমিকদের বেতন সরকারকে প্রণোদনা হিসেবে দিতে হবে।মনে রাখতে হবে,গার্মেন্টস মালিকরা এত টাকা-পয়সার মালিক না যে শ্রমিকদের বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিতে পারবেন।বিকেএমইএর জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত নিট খাতে প্রায় ১০ কোটি টাকা অর্ডার স্থগিত করেছেন ক্রেতারা।

সারাদিন কারখানা মালিকরা ফোন দিয়ে জানতে চেয়েছেন কী করবেন। এ অবস্থায় কাজ না থাকলে ২-৩ মাস পর কারখানা এমনিতেই বন্ধ করে দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, সংকট মোকাবেলায় পোশাক খাতের জন্য স্পেশাল ফান্ড গঠন করতে হবে।সেই ফান্ড থেকে কারখানাগুলোকে বিনা সুদে আগামী ১ বছরের জন্য ঋণ দিতে হবে। একই সঙ্গে আগামী ৬ মাস আগের নেয়া ব্যাংক ঋণের কিস্তি মওকুফ এবং কিস্তির সুদ মওকুফ করতে হবে।এছাড়া ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির দায়ও এখন পরিশোধ করা সম্ভব নয়। ব্যাংকগুলো যাতে ফোসর্ড লোন তৈরি না করে, ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির দায় পরিশোধ না করে- সেদিকে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, ব্যাংকগুলো সারাজীবন ব্যবসা করেছে। এ সংকট মুহূর্তে তাদের সেবা দেয়া উচিত।

Top