সরকারের নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প কেন বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না
আলোকিত বার্তা:সরকারের নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প কেন বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না, তার কারণ উদঘাটন করা জরুরি। দেখা যাচ্ছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে গৃহীত ১০৬ উন্নয়ন প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো এক টাকাও খরচ করতে পারেনি।আর্থিক অগ্রগতি শূন্য থাকা এসব প্রকল্পের মধ্যে সরকারের নতুন উদ্যোগ ‘পল্লী জনপদ’ প্রকল্প ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের সহযোগী প্রকল্প যেমন রয়েছে; তেমনি আছে বাংলাদেশ রেলওয়ের পার্বতীপুর-কাউনিয়া সেকশনে ডুয়েলগেজ লাইন নির্মাণ, চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি হাইওয়ের হাটহাজারী থেকে রাউজান পর্যন্ত চার লেন সড়ক উন্নয়ন।ঢাকা-সিলেট-তামাবিল হাইওয়ের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ ও ইউটিলিটি অপসারণ প্রকল্পসহ কৈলাসটিলা-৯ কূপ খনন প্রকল্প, ঢাকায় তিনটি পাইকারি ‘কিচেন মার্কেট’ নির্মাণ, ডিপিডিসি’র আওতায় রাজধানীর কারওয়ানবাজারে আন্ডারগ্রাউন্ড সাবস্টেশন নির্মাণ এবং ডেসকো এলাকায় স্মার্ট প্রিপেমেন্ট মিটার স্থাপন ইত্যাদি প্রকল্প।
উদ্বেগের বিষয় হল, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রতি বছর একই চিত্র প্রত্যক্ষ করছি আমরা। আর্থিক অগ্রগতি শূন্য থাকা একশ’র বেশি প্রকল্প বাস্তবায়িত না হওয়ায় নির্দিষ্ট অর্থবছরে গৃহীত উন্নয়নের কাক্সিক্ষত লক্ষ্য থেকে পিছিয়ে আসতে হয়েছে আমাদের, যা মোটেই কাম্য নয়।প্রতি বছর প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা ভুল প্রমাণিত হচ্ছে এবং এর ফলে এডিপির বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হচ্ছে। শুধু তাই নয়, লক্ষ্য বাস্তবায়ন হবে না এমন ধারণা বদ্ধমূল হওয়ায় দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের মধ্যেও আন্তরিকতার ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়। কাজেই বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা এমনভাবে নির্ধারণ করা উচিত, যাতে সেগুলো পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়।উল্লিখিত প্রকল্পগুলোয় কোনো অর্থ ব্যয় না হওয়ার ১০টি কারণ চিহ্নিত করেছে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, সুষ্ঠুভাবে এডিপি বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে আগে যেসব সমস্যা বিদ্যমান ছিল, সেগুলোর অধিকাংশ এখনও বিদ্যমান রয়েছে। আইএমইডি ইতিপূর্বে প্রকল্প বাস্তবায়নে বেশকিছু বাধা চিহ্নিত করেছে, যা আলোচ্য প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
এগুলো হল- কর্মপরিকল্পনা ছাড়াই প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করা, জমি অধিগ্রহণের জটিলতা, অর্থ ছাড়ে বিলম্ব, দরপত্র মূল্যায়নে দীর্ঘসূত্রতা, সমীক্ষা ছাড়াই প্রকল্প গ্রহণ, দক্ষ ও কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন জনবলের অভাব, উন্নয়ন সহযোগীদের প্রকিউরমেন্ট গাইডলাইন অনুসরণ করে মালামাল ক্রয়ে অসুবিধা।ঠিকাদারদের পেশাদারিত্বের অভাব, ভৌত নির্মাণ কাজের ধীরগতি, প্রকল্প প্রস্তাব তৈরিতে দ্রব্যের মান ও মূল্য নির্ধারণে অদূরদর্শিতা ইত্যাদি। এসব সমস্যা দ্রুত নিরসন করা না হলে ভবিষ্যতেও যে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে, তা বলাই বাহুল্য।সাধারণত বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের চাহিদা ও সরকারের সক্ষমতার মধ্যে সমন্বয় করে প্রকল্পের অনুমোদন দেয়ার কথা বলা হলেও প্রতি বছরই মাত্রাতিরিক্ত প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি খারাপ প্রবণতা। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে হলে সরকারি বিনিয়োগ পরিকল্পনার যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি।জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় কোনো প্রকল্প অনুমোদনের পর তা নির্দিষ্ট মেয়াদকালে শেষ করা না গেলে রাষ্ট্র আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়; পাশাপাশি জনদুর্ভোগ ও হয়রানির মাত্রাও বাড়ে। গৃহীত প্রকল্পগুলোর শতভাগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকার উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সচেষ্ট হবে, এটাই প্রত্যাশা।