দেশে তিনজনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় বড় ধরনের জনসমাগম এড়িয়ে চলার নির্দেশ
আলোকিত বার্তা:দেশে তিনজনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় বড় ধরনের জনসমাগম এড়িয়ে চলার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশ প্রস্তুত।’ সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তেজগাঁও কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকের অনির্ধারিত আলোচনায় তিনি এ নির্দেশ দেন। পরে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ও স্বাস্থ্য সচিব আসাদুল ইসলাম।রোববার স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিনজন রোগী শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে একজন নারী ও দু’জন পুরুষ। এর মধ্যে দু’জন ইতালি ফেরত। এদের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে।মন্ত্রিসভার বৈঠকে করোনাভাইরাস নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কোনো নির্দেশনা দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আজ বিকাল ৪টায় মিটিং আছে। গতকাল যৌথ কমিটির লম্বা মিটিং হয়েছে। সেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন বাস্তবায়ন কমিটিকে সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে। তারা ৪টায় মিটিং করে বিস্তারিত আপনাদের বলবেন।এ সময় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় তিন স্তরের কর্মকৌশল নেয়া হয়েছে। যাতে না আসে, সেজন্য প্রথম ব্যবস্থা নিয়েছে। যদি আসে তাহলে কীভাবে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করব। তৃতীয় স্তর হল যদি প্রাদুর্ভাব হয় তাহলে আমরা কীভাবে ম্যানেজ করব। আমাদের মাধ্যমে আপনাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ হল,আমরা যেন আতঙ্কিত না হই। এটা একটা ভাইরাস।
আমাদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এটা ছোঁয়াচে অবশ্যই।’ তিনি বলেন, চীনে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সময় থেকেই আমরা প্রস্তুতি শুরু করেছি। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আরও বলেন, প্রটোকল অনুযায়ী ব্যবস্থা হয়েছে। কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা হয়েছে, ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আরও নির্দেশনা হচ্ছে, আমরা বড় গ্যাদারিং (জনসমাগম) এড়িয়ে চলব, যতটুকু সম্ভব।করোনাভাইরাসে আক্রান্তরা বিমানবন্দরে শনাক্ত হয়নি- এ বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব বলেন, এ ভাইরাসের প্রকৃতিটা একটু জানা দরকার। ভাইরাস যদি থাকে তবে সঙ্গে সঙ্গে জ্বর আসবে না, ধরা পড়বে না বা উপসর্গ দেখা দেবে না। ১৪ দিন পর্যন্ত উপসর্গ দেখা নাও দিতে পারে। যখন উনি (আক্রান্ত ব্যক্তি) দেশে এসেছেন তখন তার কোনো উপসর্গ ছিল না।উপসর্গ ছাড়া এটা শনাক্ত করার কোনো ব্যবস্থা নেই। স্ক্যানিংয়ে তার জ্বর ধরা পড়বে না, এমনকি যদি ব্লাড টেস্টও করা হয় রিপোর্ট নেগেটিভ আসবে। তাই যে কেউ চলে আসতে পারবে। এ বিষয়েও আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। তাদের (বিদেশ ফেরত যাত্রী) একটি লোকেটর ফরম দিয়ে দেয়া হয়েছে।সেখানে তিনি কোথায় কীভাবে থাকবেন তা লেখা থাকবে। যদি কোনো উপসর্গ দেখা দেয় সে যোগাযোগ করবে। তারাও শারীরিক অবস্থা জানিয়ে হটলাইনে যোগাযোগ করে বলে, আমার জ্বর আসছে, কাশি হচ্ছে। এভাবে আমরা ১০০ জনের মতো লোককে টেস্ট করেছি। এর মধ্যে বিদেশ থেকে আসা দু’জনের শরীরে ভাইরাসটি ধরা পড়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হবে কিনা- এ বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবা সচিব বলেন, ‘এভাবে আতঙ্ক ছড়ানোর কোনো যুক্তি ও ভিত্তি নেই।’ এ সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রীও গতকাল মিটিংয়ে ছিলেন। অলরেডি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়ে দেয়া হয়েছে। যাতে তারা এ জিনিসগুলো লুক আফটার করে। যথাযথ ব্যবস্থা নেয়।মাস্কের দাম বেড়ে গেছে- এ বিষয়ে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘প্রফেসর আবদুল্লাহর বক্তব্য দেখেন। মাস্ক পরার কোনো প্রয়োজন নেই। এটা তো বাতাসে যায় না, ছোট হলেও ওয়েটটা বেশি। এটার টাচে আসতে হবে।করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে কিনা- জানতে চাইলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘অবশ্যই আছে। এ আশঙ্কা রোধের জন্য আমরা ব্যবস্থাও করেছি। তাদের কন্ট্রাক্ট ট্র্যাকিং করে কোথায় গেছে, কাদের সঙ্গে মিশেছে- সবকিছু করে আমরা প্রথম ব্যক্তির জন্য ৪০ জনকে ট্র্যাক করেছি।
কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করেছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী, তাদের আমরা ফার্স্ট কন্ট্রাক্ট ধরব, এক্সটেন্ডেড কন্ট্রাক্ট ধরব, তাদের কীভাবে কোয়ারেন্টিল করব- সবকিছু ফলো করেই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ একজনের জন্য ৪০ জনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে, অন্য দু’জনের জন্য কতজনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে- এ বিষয়ে সচিব বলেন, ‘এটার কোনো গড় অঙ্ক নেই। কার সঙ্গে মিশেছেন, কন্ট্রাক্ট হয়েছে, তাদের লোকাল লেভেলে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এটার সুনির্দিষ্ট সংখ্যা বলতে পারব না।’
আক্রান্ত দেশগুলো থেকে মানুষ আসার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে আমরা প্রথম থেকেই এডভাইস করছিলাম। যেখানে বেশি প্রাদুর্ভাব হয়েছে সেখান থেকে যেন কম লোক আসে। এমনকি আমাদের যারা ওসব দেশে আছে তারাও যাতে যাতায়াত রেস্ট্রিকটেড করে দেয়, সে বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছিলাম। যেসব দেশে বেশি আক্রান্ত সেসব দেশের অনঅ্যারাইভাল ভিসা স্থগিত করেছি। আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পরামর্শ দিয়েছি- এগুলো করার দায়িত্ব পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের।
আসাদুল ইসলাম আরও বলেন, এটা নিয়ে আমাদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। পৃথিবীতে এ ঘটনা ঘটেছে তারা ম্যানেজ করছে। আমরা মিডিয়া থেকে জানতে পারছি এত লোক আক্রান্ত হয়েছেন, এত লোক মারা গেছেন। কিন্তু যেটা কম শুনেছি সেটা হল কত লোক সুস্থ হয়ে গেছে।জাতীয় জাদুঘরে নিয়োগ দেয়া হবে কিউরেটর : কিউরেটর নিয়োগ দেয়ার বিধান রেখে ‘বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর আইন-২০২০’র খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এতদিন জাদুঘর পরিচালনা করা হচ্ছিল ১৯৮৬ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী।প্রস্তাবিত আইনে, ১১ বিষয়ের সংজ্ঞাসহ ২৫টি ধারা আছে। জাদুঘর পরিচালনার জন্য প্রত্নতাত্ত্বিক বোর্ডের গঠন ও কার্যাবলি সুনির্দিষ্ট করা আছে। ভার্চুয়াল জাদুঘরের বিষয়টি মন্ত্রিসভা আইনে অন্তর্ভুক্ত করে দিয়েছে। শুধু ফিজিক্যালি না বাইরে থেকে কেউ যদি ভার্চুয়ালি জাদুঘর দেখতে চায় সেটার যেন একটা সিস্টেম থাকে। ডিজিটাল জাদুঘর সিস্টেমও আইনে রয়েছে।মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এছাড়া বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরের জন্য ‘সেকেন্ড অ্যাডেনডাম টু বি প্রটোকল অন ইংল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড বিটুইন দ্য গভর্নমেন্ট অব দ্য পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ অ্যান্ড দ্য গভর্নমেন্ট রিপাবলিক অব ইন্ডিয়া’র খসড়ার অনুমোদন করা হয়েছে।তিনি আরও জানান, মন্ত্রিসভার বৈঠকে বাংলাদেশে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে সহায়তার ব্যাপারে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও রাশিয়ান ফেডারেশন সরকারের মধ্যে চুক্তি সংশোধনের জন্য নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।