ওসমান হাদি হত্যার,নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ - Alokitobarta
আজ : বুধবার, ৩১শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদঃ
বরিশালে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের হাজার হাজার টাকা গচ্চা নির্বাচনি সমীকরণে ওলটপালট রাজনীতি ঘন কুয়াশার কারণে সারা দেশে সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা গাজায় ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের ৭০০র বেশি স্বজনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল ঢাকা-১১ আসনে নাহিদকে শুভ কামনা জানিয়ে সরে গেলেন শিবিরের সাবেক সভাপতি হাসনাতের আসনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা জামায়াত প্রার্থীর ভোটকেন্দ্র মেরামত,সিসি ক্যামেরা স্থাপনে ইসির নির্দেশ অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদেই শহীদ ওসমান হাদির হত্যার বিচার সম্পন্ন করা হবে সাইবার নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে সংখ্যালঘু হত্যাকাণ্ড ও সহিংসতার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ

ওসমান হাদি হত্যার,নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ


মোহাম্মাদ আমিনুল ইসলাম:জুলাই যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদি হত্যায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাচ্ছেন গোয়েন্দারা।নিখুঁতভাবে কাটআউট পদ্ধতিতে সম্পন্ন হয় পুরো হত্যা মিশন। খুনিরা ভেবেছিল কেউ কিছুই বুঝতে পারবে না। তবে মাঠপর্যায়ে গোয়েন্দাদের অনুসন্ধান ও তথ্য প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মধ্য দিয়ে একে একে বেরিয়ে আসছে হাদি হত্যার মাস্টারমাইন্ডদের নাম।হত্যা মিশনে সরাসরি অংশ নেয় কারা,অর্থের জোগান দিয়েছে কারা,কে,কখন,কিভাবে শুটারদের সহায়তা করেছে-সব তথ্যই উঠে আসছে তদন্তে। তবে ওসমান হাদির মূল শুটার ফয়সাল করিম মাসুদ ও তার সহযোগী আলমগীর এখনো অধরা। সূত্র বলছে, ফয়সাল ও আলমগীর বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওসমান হাদি হত্যার মূল ছক কষা হয় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বসে। পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রত্যক্ষ সহায়তায় ঘটে এ হত্যা। মানব পাচারকারী ফিলিপের মাধ্যমে খুনিদের নিরাপদে সীন্তের ওপারে নিয়ে যায় ভারতে অবস্থানকারী যুবলীগ নেতা তাইজুল ইসলাম চৌধুরী ওরফে বাপ্পি। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, বাপ্পির ভগিনীপতি আমিনুল ইসলামের মাধ্যমে ১২ ডিসেম্বর দুপুরে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্তের মানব পাচারকারী ফিলিপের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাপ্পি। আমিনুলের মাধ্যমে ফিলিপের কাছে টাকাও পাঠানো হয়। ওই দিন গভীর রাতে ফয়সাল ও আলমগীরকে সীমান্ত পার করার বিষয়টি বাপ্পিকে নিশ্চিত করে ফিলিপ। পুরো বিষয়টি স্বল্প সময়ে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়।

গোয়েন্দাদের অনুসন্ধান বলছে, বাপ্পি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর। ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকও ছিলেন তিনি। ঢাকা-১৬ আসনের সাবেক এমপি পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহর রাজনীতি করেন বাপ্পি। এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানকেরও যোগসূত্র রয়েছে।তবে এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাচ্ছেন না ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দায়িত্বশীলরা। যুবলীগ নেতা তাইজুল ইসলাম চৌধুরী ওরফে বাপ্পির সম্পৃক্ততার বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন,তদন্তাধীন বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। মামলার সর্বশেষ অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা আমিনুলকে গ্রেফতার করেছি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি।

ডিবির তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেছেন, হাদি হত্যায় গ্রেফতার ১১ জনের মধ্যে ৬ জন দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। বর্তমানে দুজন ডিবির কাছে রিমান্ডে আছে। তারা হলো মো. কবির ও আমিনুল। অন্যদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।ফয়সালের ব্যাংক হিসাবে ৬৫ লাখ টাকার এফডিআর রয়েছে উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংকে বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে। এছাড়া উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের ব্যালিস্টিক পরীক্ষার জন্য সিআইডিতে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

এর আগে, ওসমান হাদির খুনিদের পালাতে সহায়তার অভিযোগে সীমান্ত থেকে গ্রেফতার দুই আসামি সিবিয়ন দিউ ও সঞ্জয় চিসিমকে দুই দফায় রিমান্ড শেষে শুক্রবার কারাগারে পাঠানো হয়। ওই দিন আদালতে দেওয়া আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের মতিঝিল আঞ্চলিক টিমের পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ উল্লেখ করেন, ২১ থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত রিমান্ডে থাকা অবস্থায় আসামিরা ঘটনার নেপথ্যে থাকা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। সিবিয়ন দিউ ও সঞ্জয় চিসিম ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত এলাকায় সক্রিয় একটি মানব পাচার ও চোরাকারবারি সিন্ডিকেটের সদস্য। তারা এই সিন্ডিকেটের হোতা ফিলিপের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই মামলার প্রধান আসামি ফয়সাল ও তার সহযোগীরা ভারতে পালিয়ে গিয়ে থাকতে পারে।

সূত্র বলছে, ফিলিপ দীর্ঘদিন ধরেই এই মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত। সে ও তার সহযোগীরা হরহামেশা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে যায়। শুধু হাদির হত্যাকারী নয় গত বছরের ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে তার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মী অবৈধপথে ভারতে ঢুকেছে। যুবলীগ নেতা বাপ্পী ফিলিপের মাধ্যমে পাচার করে তাদের। তাদের অন্যতম সহযোগী আমিনুলকে ২৪ ডিসেম্বর মিরপুর থেকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। আমিনুল হলেন বাপ্পির ভগিনীপতি। তিনি বাপ্পির ক্যাশিয়ার হিসাবে পরিচিত।

রিমান্ডে থাকা আমিনুল পুলিশকে জানিয়েছে, ১২ ডিসেম্বর দুপুরে ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়। ওই দিন দুপুর ২টা ৫৯ মিনিটে ভারত থেকে আমিনুলকে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করে বাপ্পি। ফোনে বাপ্পি বলে, আমি ফিলিপকে পাচ্ছি না। তুই দ্রুত কল দে। আমিনুল ফিলিপের ফোনে কল করে বলে, বাপ্পি দাদার সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করেন। পরে ফিলিপ ফোন দেয় বাপ্পিকে। এর পরই ফয়সাল ও আলমগীরকে সীমান্ত পার করার আয়োজন করে ফিলিপ। আমিনুল ফিলিপকে বিকাশে ৫ হাজার টাকাও পাঠায়। তবে এক্ষেত্রে মোট কত টাকার চুক্তি হয়েছে তা ফিলিপ ও বাপ্পি জানে বলে দাবি আমিনুলের।জিজ্ঞাসাবাদে আমিনুল আরও জানিয়েছে, ভারতের চোরাই ফোন কিনে ফিলিপের মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঠাত বাপ্পি। এসব ফোন ফিলিপের কাছ থেকে নিয়ে ডিস্ট্রিবিউটরদের দিত আমিনুল। টাকা নিজের কাছে গচ্ছিত রাখত। পরে বাপ্পির নির্দেশে ওই সব টাকা বিভিন্ন ব্যক্তিকে পাঠাত।

Top