প্রাপ্তবয়স্ক বিবাহিত মেয়েকে উদ্ধারের নামে নাটকীয় পুলিশি অভিযান ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ!
নিজস্ব প্রতিবেদক:দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্কের পর প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর গোপনে বিয়ে—এই ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে বরিশালে কথিত অপহরণ মামলা, নাটকীয় পুলিশি অভিযান ও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।ভুক্তভোগী তরুণীর নাম সাবিহা আফরোজ। সাংবাদিকদের সামনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি দাবি করেন— “আমার বয়স ১৮ বছর। আমাকে জোর করে এখানে আটকে রাখা হয়েছে। আমাদের একটা মামলা চলছে, সেখানে মিথ্যা বলে নিয়ে আসা হয়েছে। কালকে কোর্টে হাজির করার কথা বলা হচ্ছে—সব মিথ্যা। আপনারা আমাকে বাঁচান।
প্রেমের বিয়ের পর ‘অপহরণ’ মামলা স্থানীয় সূত্র ও অভিযোগ অনুযায়ী, সাবিহা আফরোজ দীর্ঘদিন ধরে শেখ সাফাতুল ইসলাম (তাহসান) নামের এক যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে ছিলেন। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর দুজন গোপনে বিয়ে করেন। কিন্তু মেয়ের বাবা মোঃ আবদুল হাই মোল্লা (৬০) এই বিয়ে মেনে না নিয়ে ঘটনাটিকে ‘অপহরণ’ আখ্যা দিয়ে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন।
মামলার এজাহারে সাবিহার বয়স ১৭ বছর উল্লেখ করে বলা হয়, তাকে জোরপূর্বক মোটরসাইকেলে তুলে অপহরণ করা হয়েছে। অথচ মেয়ের দাবি—তিনি প্রাপ্তবয়স্ক এবং স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছেন।উদ্ধারের নামে নাটকীয় অভিযানগত ২২ ডিসেম্বর (সোমবার) বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ ‘উদ্ধার অভিযান’-এর নামে সাবিহা আফরোজকে আটক করে। পরে তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসি সেন্টারে নেওয়া হয়।এ সময় মেয়েটি আতঙ্কিত হয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আজ ডাক্তার নেই, ডাক্তার আসলে পরীক্ষা হবে। আজ রাতে এখানেই থাকতে হবে। আমাকে যদি ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে কোনো ক্ষতি করা হয়, তার দায় প্রশাসনকে নিতে হবে।
ছেলে পক্ষের অভিযোগ, মেয়ের বাবা অর্থশালী হওয়ায় বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার এক এসআই সাইফুল ইসলাম টাকার বিনিময়ে মেয়ে পক্ষের হয়ে পক্ষপাতিত্ব করছেন। তারা দাবি করেন, আইনগতভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ও বিবাহিত নারীকে জোর করে আটকে রাখা সম্পূর্ণ বেআইনি।
এজাহারে যাদের নাম
মামলায় আসামি করা হয়েছে, শেখ সাফাতুল ইসলাম (তাহসান) (২২), মিনহাজুল আবেদীন (৪৫), একেএম তসলিম উদ্দিন (৬৯), লামিয়া (২৫) অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন ঘটনার তারিখ দেখানো হয়েছে ২৭ অক্টোবর ২০২৫।
আইনজ্ঞদের মতে, যদি সাবিহা আফরোজ প্রাপ্তবয়স্ক হন এবং স্বেচ্ছায় বিয়ে করে থাকেন, তবে অপহরণ মামলা ও তাকে জোর করে আটক রাখার বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ। পাশাপাশি, পুলিশি ক্ষমতার অপব্যবহার ও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ গুরুতর তদন্তের দাবি রাখে।
প্রেম, বিয়ে ও পারিবারিক বিরোধের জেরে একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীর স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও সাংবিধানিক অধিকার কতটা সুরক্ষিত—এই ঘটনায় সেই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে বরিশালে।
এ বিষয়ে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার এস আই সাইফুল ইসলামের সাথে আলাপ করলে, তিনি ঘটনা এড়িয়ে গিয়ে বলেন উদ্ধার বা আটক নেই। আসামিপক্ষ জামিনে আছে। আর কোন বিস্তারিত জানাননি।