জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ‘যোগ্য’ এসপি খুঁজে বের করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে - Alokitobarta
আজ : মঙ্গলবার, ১৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ‘যোগ্য’ এসপি খুঁজে বের করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে


জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক,আলোকিত বার্তা :ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ‘যোগ্য’ এসপি খুঁজে বের করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে পুলিশ সদরদপ্তর।জেলার দায়িত্বে আছেন এমন এসপি ছাড়া বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত একই পদমর্যাদার ‘যোগ্য কর্মকর্তা’র তালিকা তৈরির কাজও চলছে। তাদের সবাইকে নিয়ে পুল গঠন করা হচ্ছে। পৃথক তিনটি পুল থেকে নির্বাচনকালে মাঠ প্রশাসনে পুলিশ সুপার নিয়োগ দেওয়ার কথা ভাবছেন বাহিনীর নীতিনির্ধারকরা।এ জন্য বর্তমানে ৬৪ জেলায় যারা পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তাদের যোগ্যতার মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। রেঞ্জ ডিআইজিদের মাধ্যমে এ মূল্যায়ন করা হয়েছে।তবে যোগ্য কর্মকর্তা বাছাই প্রক্রিয়া নিয়ে পুলিশের ভেতরেই অনেকের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় সঠিক কর্মকর্তা বাছাই হবে কিনা– এমন সংশয় আছে কারও কারও মধ্যে।নির্বাচন সামনে রেখে গত দুই দিনে ২৯ জেলায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) রদবদল করা হয়েছে। শিগগিরই শুরু হবে এসপি পদে রদবদল। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, নির্বাচনকালীন মাঠ প্রশাসনে পুলিশের ৬৪ জেলার এসপির যোগ্যতার মূলায়ন করা হয়েছে ডিআইজিদের মাধ্যমে। তারা মনে করেন, ডিআইজিদের মূল্যায়নে অনেকের বিষয়ে সঠিক তথ্য নাও উঠে আসতে পারে। কারণ কোনো জেলার এসপির সঙ্গে ডিআইজির সুসম্পর্ক থাকলে তার মূল্যায়ন যথাযথ নাও হতে পারে। আবার ডিআইজির সঙ্গে এসপির নানা ইস্যুতে মতবিরোধ থাকতে পারে। কোনো এসপি সংশ্লিষ্ট ডিআইজির বলয়ের নাও হতে পারেন। আবার সততা, দক্ষতার নিরিখে ডিআইজির সঙ্গে এসপির দূরত্ব থাকাও অস্বাভাবিক নয়। এমন বাস্তবতায় এসপির ব্যাপারে ডিআইজির মূল্যায়ন শতভাগ নিরপেক্ষ নাও হতে পারে।

যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাসম্পন্ন প্রার্থীদের তালিকা তৈরির বিষয়টি ‘পুল’ হিসেবে বিবেচিত। প্রয়োজন অনুযায়ী এ তালিকা থেকে কর্মকর্তা বাছাই করা হয়। পুলে যারা যাবেন তাদের ৭-৮টি মানদণ্ডের ভিত্তিতে বাছাই করা হয়। মানদণ্ডের মধ্যে সততা, যোগ্যতা, বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দক্ষতা, দ্রুত কার্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো বিষয় রয়েছে।জানতে চাইলে পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম বলেন,এসপিরা কে কী রকম কাজ করছেন, এটা জানতে তাদের ইভালুয়েশন (মূল্যায়ন) করা হয়েছে। আমরা একটা পুল করছি। এ পুল থেকে যোগ্যদের পদায়ন করা হবে। এখন যারা এসপি আছেন তাদের কেউ কেউ অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারেন। আবার কেউ মাঠে এসপির দায়িত্ব পালনে আগ্রহী নাও হতে পারেন। তখন পুল থেকে অন্যদের বিবেচনা করা হবে।যোগ্য এসপি নির্বাচনের প্রক্রিয়া কী– জানতে চাইলে বাহারুল আলম বলেন, ‘আমাদের অনেক টুলস আছে। এলাকার ব্যবসায়ী, মামলার বাদী, রাজনৈতিক নেতা– এমন আরও অনেকের কাছ থেকে তাদের ব্যাপারে আমরা তথ্য নিতে পারি।

আরেক প্রশ্নে পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, লটারির মাধ্যমে এসপি পদায়ন করার কথা বলেছে মন্ত্রণালয়। তবে কীভাবে কোন প্রক্রিয়ায় লটারি করা যায়, সেটা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।আগামী বছর ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে সরকার।এরই মধ্যে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকাও ঘোষণা করেছে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করা হতে পারে।

পুলিশের একজন পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচন ঘিরে গুরুত্ব বিবেচনা করে ৬৪ জেলাকে এ, বি, সি– এমন তিনটি ভাগে ভাগ করা হবে। একইভাবে পুলিশ কর্মকর্তাদের দক্ষতা ও যোগ্যতা বিবেচনায় তিনটি ভাগে তাদের নাম থাকবে। এ ক্যাটেগরির জেলায় পুল থেকে এ ক্যাটেগরির কর্মকর্তাদের পদায়ন বিবেচনা করা হবে। বি ক্যাটেগরির জেলায় পুলের বি এবং সি ক্যাটেগরির জেলায় সি ক্যাটেগরির কর্মকর্তাদের পদায়ন হবে।বর্তমানে ৬৪ জেলায় পুলিশ হিসেবে যারা দায়িত্ব পালন করছেন তাদের অধিকাংশ বিসিএস ২৫ ব্যাচের কর্মকর্তা। বাকিরা ২৭ ব্যাচের। নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগে কিছু জেলার এসপি রদবদল হবে। এ ছাড়া নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশের মাঠ প্রশাসনে বড় পরিবর্তন আসবে।

পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের এক কর্মকর্তা জানান, এসপিসহ পুলিশের পদায়ন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, পুলিশের চলমান কার্যক্রমসহ কয়েকটি বিষয়ে তারা চলতি সপ্তাহে বৈঠক করবেন। সেখান থেকে মাঠ প্রশাসনের মতামত পুলিশের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে পৌঁছে দেবেন। তিনি বলেন, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়ন যেভাবে হচ্ছে, পুলিশের পদায়ন একইভাবে হতে পারে।একটি বড় জেলার এসপি বলেন, কর্মকর্তাদের পদায়নসহ বেশ কিছু ব্যাপারে রেঞ্জের ডিআইজির সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ আছে। তাই যোগ্য এসপি হিসেবে ডিআইজি তাঁকে মূল্যায়ন করবেন কিনা– এ নিয়ে তাঁর সন্দেহ আছে। তাঁর ভাষ্য, আরও একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার চ্যানেল থেকে প্রতিবেদন নিয়ে মূল্যায়ন করলে ভালো হতো।এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশের শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলেন, শুধু ডিআইজি নয়, অন্য মাধ্যমেও এসপিদের ব্যাপারে মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরির বিষয়টি তাদের বিবেচনায় রয়েছে।

পুলিশের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, নির্বাচন ঘিরে অতীতের দুর্নাম এবার মুছতে চান তারা। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হওয়া তিনটি নির্বাচন ছিল পক্ষপাতদুষ্ট, বিতর্কিত এবং একতরফা। প্রশাসন ও পুলিশের তৎকালীন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করার অভিযোগ আছে।পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে পুলিশ সুপার ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে পদায়নের জন্য ফিটলিস্ট বা বাছাই তালিকা প্রণয়ন করার কথা বলা হয়। সংস্কার কমিশনের সুপারিশে বলা হয়,পদায়ন, বদলি, পদোন্নতির ক্ষেত্রে সততা ও নিষ্ঠাকে গুরুত্ব দিতে হবে।

Top