পরিস্থিতি এতটাই বেগতিক যে,স্থানীয়দের হেঁটেও মহাসড়ক অতিক্রমে কষ্ট হয় - Alokitobarta
আজ : মঙ্গলবার, ১৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পরিস্থিতি এতটাই বেগতিক যে,স্থানীয়দের হেঁটেও মহাসড়ক অতিক্রমে কষ্ট হয়


মোহাম্মাদ আমিনুল ইসলাম :পরিস্থিতি এতটাই বেগতিক যে,স্থানীয়দের হেঁটেও মহাসড়ক অতিক্রমে কষ্ট হয়।তথ্যমতে, দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি পটুয়াখালী জেলা সদরকে মির্জাগঞ্জ, বরগুনা, পিরোজপুরসহ অন্তত ৫৬টি উপজেলার সঙ্গে যুক্ত করেছে। পাশাপাশি খুলনা, ভোলা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিকল্প যোগাযোগ পথ হিসাবেও ব্যবহার হয় এটি। কিন্তু দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় এখন এটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।সরেজমিন স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পটুয়াখালী সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কর্মকর্তারা বছরের শুরু ও শেষে ‘জরুরি মেরামতের’ নামে প্রকল্প তৈরি করে নামমাত্র কাজ দেখিয়ে ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেন। এতে সরকারি তহবিল থেকে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হলেও সড়কের অবস্থা অপরিবর্তিত থাকে।পটুয়াখালী-মির্জাগঞ্জ-বেতাগী ভায়া বিনাপানি-কচুয়া আঞ্চলিক মহাসড়কটি বছরের পর বছর ধরে বেহাল পড়ে আছে। প্রতি বছর জরুরি মেরামত প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হলেও সড়কের কোনো উন্নয়ন হয়নি।বরং প্রতিদিনই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এই অঞ্চলের লাখো মানুষ।

সড়কের পায়রাকুঞ্জ ফেরিঘাট এলাকায় প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার সেতু নির্মাণকাজ চলমান। ফলে সড়কটির গুরুত্ব অনেক বেড়েছে। এই গুরুত্বের কারণেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর সহজেই প্রকল্প অনুমোদন দিচ্ছে। আর সেই সুযোগে এক টাকার কাজে শত টাকার প্রকল্প দেখিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্তারা সহজেই অর্থ লোপাটের সুযোগ পাচ্ছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ঠিকাদার বলেন, ‘এই সড়ক এখন কিছু প্রকৌশলীর অবৈধ আয়ের উৎস। অনেক সময় কোনো কাজই করা হয় না। শুধু কাগজে প্রকল্প শেষ দেখিয়ে পুরো টাকাই তোলা হয়।সড়কটিতে নিয়মবহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত ওজনের ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচল করে। ফলে যেনতেন করে মেরামত করা রাস্তার পিচ ইট খোয়া কয়েক মাসের মধ্যেই উঠে যায়। বর্ষার সময় খানাখন্দে পানি জমে সড়ক কাদামাটিতে পরিণত হয়। একেক জায়গায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় যানবাহন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।চালক ও স্থানীয়দের অভিযোগ, কখনো নামমাত্র কাজ করা হলেও তা সঠিক সময়ে হয় না এবং নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের কারণে অল্প সময়েই সড়ক ভেঙে পড়ে। ফলে একদিকে সরকারি অর্থ অপচয়, অন্যদিকে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলছে। বর্ষা মৌসুমে এই সড়কে চলাচল করা যেন এক প্রকার দুঃসাহসিক কাজ। বড় বড় গর্তে পানি জমে কাদা মিশে যায়, মাঝপথে ভারী যানবাহন আটকে পড়ে। এতে প্রায়ই ঘটে ছোট বড় দুর্ঘটনা।

বিনাপানি বাজারের ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন হাওলাদার বলেন, সড়কের অবস্থা এমন যে, ট্রাকচালকরা আসতে চান না। পণ্য পরিবহণে সময় ও খরচ দুইই বাড়ছে। মির্জাগঞ্জের বাসিন্দা আল আমিন সিকদার বলেন, ৫ মিনিটের পথ যেতে এখন লাগে ৩০ মিনিট। বৃষ্টি হলে রিকশা বা মোটরসাইকেল চালানোই যায় না। স্থানীয় বাসিন্দা রফিক গোলদার বলেন, বর্ষায় কাদা-পানিতে কষ্ট, আর শুকনো মৌসুমে ধুলায় শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এই রাস্তায় চলাচল মানে রোগ-বালাই সঙ্গে নেওয়া। একই এলাকার হানিফ আকন বলেন, প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। কতবার সড়ক সংস্কারের দাবি জানিয়েছি, কিন্তু মেরামত হচ্ছে না।১৭ কোটি টাকার নতুন প্রকল্প অনুমোদনের আশার বাণী শুনিয়ে পটুয়াখালী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জামিল আক্তার লিমন বলেন, দুই-তিন বছর ধরে বড় কোনো সংস্কার হয়নি। পটুয়াখালী চৌরাস্তা থেকে মির্জাগঞ্জের সুবিদখালী পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারে ১৭ কোটি ৬০ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। ঠিকাদার কাজ শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বর্ষা শেষে পুরোদমে কাজ শুরু হবে।

Top