ড. ইউনূসের সঙ্গে যাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ ৪ রাজনৈতিক নেতা - Alokitobarta
আজ : বুধবার, ১৯শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ড. ইউনূসের সঙ্গে যাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ ৪ রাজনৈতিক নেতা


জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক,আলোকিত বার্তা :বিদেশের মাটিতে রাজনৈতিক সংকটের আলোচনায় ‘আন্তর্জাতিক অ্যাক্টররা’ উপস্থিত থাকতে পারেন। কেননা বাংলাদেশের নির্বাচনপূর্ব রাজনৈতিক সংকট নিয়ে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ত হওয়ার ঘটনা অতীতে ঘটেছে। এই সফরে নির্বাচনের আগে রাজনীতির অনেক জট আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে আলোকপাত করা হতে পারে। বিশেষ করে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথ কেমন হবে, এর রূপরেখায় রাজনীতিকদেরও সঙ্গে রাখতে চাইছেন ইউনূস। এতে বর্তমান অনিশ্চিত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একধরনের মধ্যস্থতার ভূমিকা নিতে পারে।প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সফরসঙ্গী হিসাবে চারজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতার যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে ব্যাপক কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদানের লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা আজ রাতেই যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওয়ানা হচ্ছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে হাইপ্রোফাইল চার নেতাকে সফরসঙ্গী করায় যুক্তরাষ্ট্রে আনুষ্ঠানিক কিংবা অনানুষ্ঠানিক রাজনৈতিক সংলাপের সম্ভাবনা অনেকটাই স্পষ্ট।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির অন্যদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হচ্ছেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজান শুরুর আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। এবারের নির্বাচনের বৈশিষ্ট্য হলো, এতে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। তবে এতকিছুর পরও বিভিন্ন মহলে দ্বিধার শেষ নেই। অনেকেরই প্রশ্ন-ফেব্রুয়ারিতে আদৌ নির্বাচন হবে কি না। বেশকিছু ইস্যুতে রাজনৈতিক ফয়সালা এখনো হয়নি। তাছাড়া আন্তর্জাতিক মহলের মনোভাবও নিবিড়ভাবে রাজনীতিকদের সামনে আনার লক্ষ্যে জাতিসংঘে প্রধান উপদেষ্টার এই সফরকে কাজে লাগানোর চেষ্টা হতে পারে। বিদেশে বাংলাদেশের রাজনৈতিক আলোচনা নতুন নয়। এর আগে প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাজ্যে দ্বিপক্ষীয় সফরে গিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এবার বিদেশিদের সামনে রাজনীতিকদের সরাসরি হাজির করে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসার কোনো পথ খোঁজতে পারেন। স্পষ্টত মধ্যস্থতায় যুক্তরাষ্ট্র মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে। এ ব্যাপারে ঢাকায় মার্কিন কূটনীতিকসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং এনসিপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ঢাকায় অবস্থানরত বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা নিজেদের দেশে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রেরণ করেছেন। এর আলোকে সংকটের রাজনৈতিক সংলাপ ভিন্ন আঙ্গিকে হতে যাচ্ছে।

জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির শনিবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক নেতাদের সফরসঙ্গী হিসাবে সঙ্গে নেওয়ার পেছনে নিশ্চয়ই রাজনৈতিক চিন্তা আছে। এটা অত্যন্ত স্পষ্ট। রাজনৈতিক সমঝোতা প্রতিষ্ঠাই লক্ষ্য। কারণ, দেশে থাকলে অনেক টেনশন থাকে। নিউইয়র্কে সারাক্ষণ ইনফরমাল আলোচনা চলতে থাকবে। খাওয়াদাওয়ার সময়ও আলাপ-আলোচনা হবে। অন্তর্বর্তী সরকার উদ্যোগ নিলে আন্তর্জাতিক অ্যাক্টরদেরও এতে যুক্ত করতে পারে।রাজনৈতিক সমঝোতা প্রতিষ্ঠার সংলাপে বর্তমানে বড় দল বিএনপির সঙ্গে জামায়াত ও এনসিপির বেশকিছু বিষয়ে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। জামায়াতের নেতৃত্বে ইসলামি দলগুলো রাজপথে কর্মসূচি পালন শুরু করেছে। এমন বাস্তবতায় বিদেশে রাজনৈতিক সমঝোতা প্রতিষ্ঠার মর্মার্থ কী জানতে চাইলে বিএনপির এক নেতা মন্তব্য করেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূস হাতির দাঁত দেখানোর উদ্যোগ নিয়েছেন।’ দৃশ্যত রাজনৈতিক আলোচনায় বিএনপির কাছ থেকে ছাড় আদায়ে আন্তর্জাতিক অ্যাক্টরদের যুক্ত করা হতে পারে।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের বাইরেও এবার রোহিঙ্গা ইস্যুতে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন ৩০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের জন্য রোহিঙ্গা ইস্যুর সম্মেলনটিও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। তবে দেশে ও বিদেশে সবাই বাংলাদেশের রাজনীতির আগামীর গতিপ্রকৃতি বোঝার লক্ষ্যে রাজনীতিকদের মুখোমুখি হবেন। আন্তর্জাতিক পক্ষগুলো বাংলাদেশে স্থিতিশীল, নির্বাচিত, দীর্ঘমেয়াদি সরকারের অপেক্ষায় আছে। ফলে আগামী নির্বাচন খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ছাত্রদের নেতৃত্বে পরিচালিত গণ-অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার সাধনে ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন ঐকমত্য কমিশন বিভিন্ন ইস্যুতে সংস্কার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা শুরু করে। এসব আলোচনা পরিচালনা করেন ড. আলী রীয়াজ। যিনি ঐকমত্য কমিশনে সহসভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির আলোচনায় ইনপুট দিতে আলী রিয়াজও যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন।

প্রধান উপদেষ্টার যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে আওয়ামী লীগ বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে পারে। তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফরকালেও আওয়ামী লীগ বিক্ষোভ করেছে। উপদেষ্টার গাড়িতে ডিম নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। তখন পালটা কোনো বিক্ষোভ হয়নি। এবার প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসাবে বিএনপি ও জামায়াত নেতারা অন্তর্ভুক্ত থাকায় তারা পালটা কোনো কর্মসূচি পালন করবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। প্রধান উপদেষ্টা ২ অক্টোবর দেশে ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

Top