চালের বাড়তি দামে ভোগান্তিতে ক্রেতা
নুর নবী জনী :চালের বাড়তি দামে ভোগান্তিতে ক্রেতা। এক মাস ধরে মিল থেকেই ৫০ কেজির বস্তায় ৩০০ টাকা বাড়তি দাম যোগ করা হয়েছে। যার খড়গ নেমেছে ক্রেতার কপালে। পরিস্থিতি এমন যে, খুচরা বাজারে সরু চালের কেজি ৯০ ও মোটা চালের দাম ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি গত সপ্তাহে কাঁচামরিচের দাম কমলেও এখনো ২০০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে। সঙ্গে সপ্তাহের ব্যবধানে নতুন করে সব ধরনের ডালের দাম বেড়েছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাওরান বাজার, নয়াবাজার, মালিবাগ কাঁচাবাজারসহ কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।এদিন খুচরা বাজারে ভালোমানের প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হয় ৮৫-৮৭ টাকায়। যা এক মাস আগে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
মাঝারি মানের মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা। যা আগে ৭৫ টাকা ছিল। পাশাপাশি প্রতি কেজি নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা। যা আগে ৮৫ টাকা ছিল। বিআর ২৮ ও পাইজাম চাল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬৫ টাকা। যা আগে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। যা এক মাস আগে ৫৫ টাকা ছিল। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, গত বছর একই সময় সরু চালের মধ্যে মিনিকেট ও নাজিরশাইল বিক্রি হয়েছে ৬২-৭৮ টাকা। পাশাপাশি পাইজাম প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৪-৫৮ টাকা। সঙ্গে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৪ টাকা।
কাওরান বাজারে চাল কিনতে আসা মো. সালেকিন বলেন, শেখ হাসিনার সরকার ভোক্তাদের জন্য কিছুই করেনি। তার আমলে আমরা ক্রেতারা পণ্যের দামে হাবুডুবু খেয়েছি। হাসিনার সরকার পতনের পর নতুন দেশ, নতুন সরকার। ভেবেছিলাম এবার আমরা কম দামে পণ্য কিনতে পারব। কিন্তু সে আশাও নষ্ট হচ্ছে। মৌসুমে চালের অস্বাভাবিক বাড়তি দামে আমরা ক্রেতারা ভোগান্তিতে পড়ছি। তিনি বলেন, সরকার সবকিছু সংস্কার করছে, কিন্তু বাজার ব্যবস্থাপনায় সরকার কোনো সংস্কার করছে না। বিক্রেতারা মনমতো পণ্যের দাম বাড়িয়ে আমাদের পকেট কাটছে।
কাওরান বাজারের আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির চাল বিক্রেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, মৌসুমের কৃষকের মাঠের বোরো ধান চাল হয়ে বাজারেও বিক্রি হচ্ছে। এখন সব ধরনের চালের দাম কমার কথা। কিন্তু বস্তায় সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা বেড়েছে। মিলারদের কারসাজিতেই এমন পরিস্থিতি হয়েছে। তিনি জানান, এবার মিলাররা কৃষকের ধান মাঠ থেকেই কিনে নিয়েছে। পরে সংকট দেখিয়ে নিজেরাই ধান ও চালের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। বেড়েছে চালের দাম।
এদিকে টানা বৃষ্টি ও বন্যায় মরিচের খেত নষ্ট হওয়ায় কাঁচামরিচের সরবরাহ কমে যায়। এতে হু-হু করে বাড়ে পণ্যটির দাম। খুচরা বাজারে প্রতিকেজির দাম সর্বোচ্চ ৩০০ টাকার ওপরে গিয়ে ঠেকে। তবে বৃহস্পতিবার সরবরাহ কিছুটা বাড়লে কমেছে দাম। তারপরও খুচরা পর্যায়ে কেজিপ্রতি ২০০-২৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। পাশাপাশি রাজধানীর খুচরা বাজারে বেড়েছে সব ধরনের ডালের দাম। ছোট দানার মসুর ডাল প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৪০ টাকা। যা সাত দিন আগেও ১৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাঝারি দানার প্রতিকেজি মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১২৫ টাকা। যা সাত দিন আগেও ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মোটা দানার প্রতিকেজি মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা। পাশাপাশি প্রতিকেজি অ্যাংকর ডাল সর্বনিম্ন ৫৫ টাকা বিক্রি করতে দেখা গেছে। যা সাত দিন আগেও ৫০ টাকা ছিল।
খুচরা বাজারে প্রতিকেজি ১০ টাকা বেড়ে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা। প্রতিকেজি দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৫৮০-৭০০ টাকা। প্রতিকেজি গরুর গোশত বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকা। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১১০০-১২৫০ টাকা কেজি। পাশাপাশি প্রতি হালি ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪৬ টাকা।
খুচরা বাজারে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬৫ টাকা। দেশি রসুনের কেজি ১০০-১৫০ ও আমদানিকৃত রসুন সর্বোচ্চ ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি হলুদের কেজি ৩০০-৩৫০ ও আমদানিকৃত রসুন সর্বোচ্চ ৪২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমদানি করা আদা প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক পর্যায়ের এক কর্মকর্তা জানান, চালের দাম নিয়ন্ত্রণে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তদারকি জোরদার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বিভিন্ন আড়ত ও খুচরা বাজারে অভিযান পরিচালনা করে দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় এনেছে। তদারকি চলমান রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে দাম নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।