বিশ্ববাজারে পোশাক রফতানিতে দ্বিতীয় স্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ
মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া : ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার হাসিনা ভারতে পলায়ন করলে গত বছর আগস্টে ক্ষমতার পালাবদলের পর প্রায় দুই মাস টানা শ্রমিক অসন্তোষে জর্জরিত ছিল তৈরি পোশাকশিল্প। কারখানায় গ্যাস সংকটও ছিল প্রকট। এ রকম আরও কিছু চ্যালেঞ্জের মধ্যেই বিশ্ববাজারে পোশাক রফতানিতে দ্বিতীয় স্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটিস্টিক্যাল রিভিউ ২০২৪’ প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। এ নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো বিশ্ববাজারে পোশাক রফতানিতে দ্বিতীয় স্থান ধরে রাখার কৃতিত্ব দেখাল বাংলাদেশ। ২০২০ সালে অতিমারি করোনার সময়ে বাংলাদেশকে টপকে দ্বিতীয় স্থানটি দখল করে নিয়েছিল ভিয়েতনাম। পরের বছর ২০২১ সালে ভিয়েতনামকে পেছনে ফেলে হারানো অবস্থান পুনরুদ্ধার করে বাংলাদেশ। তৃতীয় অবস্থানে চলে যায় ভিয়েতনাম। ২০২৪ সালের প্রতিবেদনেও পোশাক রফতানিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে দেশটি। পোশাক রফতানিতে বরাবরের মতো এবারও প্রথম স্থানে আছে চীন। এদিকে পোশাক রফতানিতে দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রাখলেও বৈশ্বিক হিস্যা কমেছে বাংলাদেশের। আগের বছরের হিস্যা ৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ থেকে কমে গত বছর এ হার ৬ দশমিক ৯০ শতাংশে নেমে এসেছে। এ নিয়ে টানা দুই বছর বিশ্ববাজারে পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশের হিস্যা কমলো। আগের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে হিস্যা ছিল ৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ, যা এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ।
এ হিস্যা ইস্যুতে কিছুটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে। কারণ প্রধান প্রতিযোগী ভিয়েতনামের হিস্যা গত বছর আরও বেড়েছে। ডব্লিউটিওর উপাত্তে দেখা যায়, গত বছর ভিয়েতনামের হিস্যা দাঁড়ায় ৬ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ, যা আগের বছর ছিল ৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
পোশাক রফতানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, চলতি প্রবাহ এবং যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য প্রবেশে নতুন শুল্কের কারণে আগামীতে ভিয়েতনামের কাছে দ্বিতীয় রফতানিকারকের মর্যাদা হয়তো হারাতে হবে। কারণ প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে ভিয়েতনামের পোশাকের তুলনায় অন্তত ১৫ শতাংশ বেশি শুল্ক দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশের পোশাকে।
অন্যান্য দেশের মধ্যে ভারত, তুরস্কের হিস্যা অনেকটা অপরিবর্তিত রয়েছে। অবশ্য প্রধান রফতানিকারক চীনের হিস্যা কিছুটা কমেছে। ৩১ দশমিক ৬৪ শতাংশ থেকে ২৯ দশমিক ৬৪ শতাংশে নেমে এসেছে। প্রধান রফতানিকারক দেশটির হিস্যাও গত তিন বছর টানা কমছে।
ডব্লিউটিওর পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর বাংলাদেশ ৩৮ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৮৪৮ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি করেছে। আগের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে বাংলাদেশের পোশাক রফতানির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৮৪০ কোটি ডলার। ২০২২ সালে যা ছিল ৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলার।
অন্যদিকে গত বছর ভিয়েতনামের পোশাক রফতানির পরিমাণ ছিল ৩৩ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার বা ৩ হাজার ৩৯৪ কোটি ডলার। আগের বছর যা ছিল ৩ হাজার ১০৪ কোটি ডলার। অর্থাৎ বাংলাদেশের রফতানির পরিমাণ বেড়েছে যেখানে মাত্র ৪৮ কোটি ডলার, সেখানে ভিয়েতনামের বেড়েছে ২৯০ কোটি ডলার।
গত বছর চীন বিশ্ববাজারে ১৬৫ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি করেছে। তার আগের বছর তাদের রফতানির পরিমাণ ছিল ১৬৪ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার। বিশ্ববাজারে প্রধান ১০ রফতানিকারক দেশের অন্য দেশগুলোর মধ্যে তুরস্কের রফতানি ৪ দশমিক ৪২ শতাংশ কমেছে। রফতানি হয়েছে প্রায় ১৮ বিলিয়ন ডলারের পোশাক।
ভারতের রফতানি সাড়ে ৬ শতাংশ বেড়েছে। রফতানি হয়েছে ১৬ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলারের পোশাক। কম্বোডিয়ার রফতানি বেড়েছে ২৪ শতাংশ। পরিমাণ ছিল ১০ বিলিয়ন ডলারের মতো। পাকিস্তানের রফতানি বেড়েছে ২১ শতাংশ। পরিমাণ ছিল সাড়ে ৯ বিলিয়ন ডলারের মতো।