আওয়ামীলীগ সরকারের সময়ে ছিলেন খুবই প্রভাবশালী মো.ওহিদুল ইসলাম - Alokitobarta
আজ : বুধবার, ১৯শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আওয়ামীলীগ সরকারের সময়ে ছিলেন খুবই প্রভাবশালী মো.ওহিদুল ইসলাম


আলোকিত বার্তা প্রতিবেদন:বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরে বদলী ও পদায়নে আইন মানা হচ্ছে না। গত ১৭ই এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ মো.ওহিদুল ইসলামকে ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) পদে বদলীর আদেশ জারি করেন।অথচ মাত্র সাড়ে ৫ মাস আগে অন্তবর্তী সরকার আওয়ামী পন্থী হিসাবে চিহ্নিত করে ওহিদুল ইসলামকে অধিপ্তরের উপ পরিচালক পদ থেকে সরিয়ে ফায়ার সার্ভিসের মিরপুর ট্রেনিং কমপ্লেক্সে অধ্যক্ষ হিসাবে বদলী করে।ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের বদলী ও পদায়ন নীতিমালা-২০২৩ অনুযায়ী ওহিদুল ইসলামের অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পদে ৩ বছরের আগে পদায়নের কোন সুযোগ নেই। কারণ নীতিমালার ৫ দশমিক ১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, একই কর্মস্থলে কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাকরীকাল একাধারে ৩ বছররের অধিক হলে বদলীযোগ্য হবেন। এর আগে বদলীর আবেদনেরই কোন সুযোগ নেই। ওহিদুল ইসামের পদায়নের ক্ষেত্রে নীতিমালার এ শর্তটি মানা হয়নি।এদিকে বদলী ও পদায়ন নীতিমালার ৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, নবম ও তার উর্ধ্বে কর্মকর্তাদের বদলী ও পদায়নের ক্ষেত্রে অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগ নিষ্পণ্ন করবেন। এক্ষেত্রে ওহিদুল ইসলামের বদলী ও পদায়নে অধিদপ্তর থেকে কোন সুপারিশ না করা হলেও ভুতুড়ে বদলীর আদেশ জারি করেন সংশ্লিষ্টরা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের এমন বিধি বহিভূত বদলীর আদেশ ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরে অসন্তোষ তৈরি করছে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিপ্তরের মহাপরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল-এনডিসি এ প্রতিবেদককে বলেন, ওহিদুল ইসলামের বদলীর আদেশটি মন্ত্রণালয় জারি করেছে। আমি এর বেশিকিছু বলতে পারবো না। এ বিষয়ে আপনার কোন কিছু জানার থাকলে আপনি মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেন।এদিকে ওহিদুল ইসলামকে পুনরায় ফায়ার সার্ভিসের পদে পদায়ন করার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের উপ সচিব সফিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। ওহিদুল ইসলামের পদায়নের বিষয়টি সিনিয়ররা বলতে পারবেন।

উল্লেখ্য ওহিদুল ইসলামকে পদায়নের প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন উপ সচিব সফিকুল ইসলাম। শুধু বদলী আর পদায়নই নয়। ওহিদুল ইসলাম ফায়ার সার্ভিসের খুবই আলোচিত নাম। আওয়ামীলীগ সরকারের সময়ে ছিলেন খুবই প্রভাবশালী। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে ছিল খুবই ঘনিষ্ট সম্পর্ক। তাই পদে উপ-পরিচালক হলেও ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তর চলতো তার মতোই। নিয়োগ,কেনা-কাটা, টেন্ডার সব কিছুই ওহিদুল ইসলাম নিয়ন্ত্রণ করতেন।নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফায়ার সার্ভিসের উর্ধবতন কর্মকর্তা প্রতিবেদককে বলেন, ড. ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তবর্তী সরকারের বয়স আট মাস অতিক্রম করলেও ফ্যাসিষ্টমুক্ত করা যায়নি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরকে। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের সুবিধাভোগী ও মদদপুষ্ট কর্মকর্তা ছিলেন ওহিদুল ইসলাম।

এ জন্য ৫ই আগষ্টের পর তাকে অধিদপ্তর থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সরিয়ে দেওয়ার সাড়ে ৫ মাসের মাথায় আওয়ামীলী কর্মকর্তাদের শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কারণে ওহিদুলকে পুণরায় উপ পরিচালক পদে বহাল করা হয়েছে।
ওহিদুল ইসলাম বিধি বহিভুতভাবে ২০২২ সালে ১৩ই মে ফায়ার সার্ভিস শারীরিক যোগ্যতা যাচাই পরীক্ষা স্থগিত করেন।
এ বিষয়ে তখন সমালোচনা সৃষ্টি হলে তাকে উপ পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) পদ থেকে স্ট্যান্ড রিলিজ করে উপ পরিচালক হিসেবে রাজশাহীতে বদলী করা হয়। যদিও কিছুদিন পরই তাকে আবার অধিদপ্তরের উপ পরিচালক পদে পদায়ন করে ফিরিয়ে আনা হয়।তিনি বলেন, ওহিদুলের এ সিন্ডিকেট আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে ১৫/১৬ বছর ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। তারা নিয়োগ,বদলী,কেনা-কাটা, পদন্নোতি, পদায়নসহ সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করেছে। এসব করে সিন্ডিকেটটি শতশত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে চলে গেলেও এ সিন্ডিকেট এখনো শক্তিশালী।এ দিকে ওহিদুল ইসলামকে পুনরায় অধিদপ্তরের উপ পরিচালক পদে পদায়ন করায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরে কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।কেন-না, মো. ওহিদুল ইসলাম এর আগে যখন এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন তখন তিনি প্রশাসনিক খড়গ চালিয়ে ফায়ার কর্মীদের অতিষ্ঠ করে তুলেছিলেন। এজন্য বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে ওহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে একাধিকবার সংবাদ প্রকাশ হয়।

ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরে ওহিদুল ছিলেন আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তা। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি আওয়ামী লীগের প্রতিটি দলীয় কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ করতেন। সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল খান ও প্রতিমন্ত্রী সামশুল হক টুকুর সাথে ছিল তার ঘনিষ্ট সম্পর্ক। জুলাই-আগষ্টের ছাত্র জনতার আন্দোলন ব্যর্থ করতে অর্থ বিনিয়োগও করেছিলেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওহিদুল ইসলাম বলেন, আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগগুলো সঠিক নয়। আমি বদলী আর পদায়ন নিয়ে কোন তদবির করি নাই। এক্ষেত্রে কোন অনিয়ম হয়ে থাকলে সেটি মন্ত্রণালয়ই করেছে।

Top