কোথাও কোনো অর্থ নেই,সব ব্যাংক থেকে অর্থ নিয়ে গেছে - Alokitobarta
আজ : বৃহস্পতিবার, ২০শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কোথাও কোনো অর্থ নেই,সব ব্যাংক থেকে অর্থ নিয়ে গেছে


মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া : কোথাও কোনো অর্থ নেই। সব ব্যাংক থেকে অর্থ নিয়ে গেছে। বিশ্বের কোনো দেশে এমন হয়েছে বলে আমার জনা নেই। মঙ্গলবার সরকারি ক্রয় ও অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ব্যাংকের আমানতের টাকাসহ চলে গেছে। টাকা তো নেই ব্যাংকের কাছে। সেই টাকাগুলো আমরা এখন দিচ্ছি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলেছি যে, কীভাবে বিশেষ তহবিল দেওয়া যায় ব্যাংকগুলোকে।উপদেষ্টা আরও বলেছেন, শ্রীলংকার অর্থনীতি বাংলাদেশের মতো এত খারাপ অবস্থায় যায়নি। বাংলাদেশের মতো হলে তো শ্রীলংকাকে আর খুঁজেই পেতাম না। মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমাদের মূল্যস্ফীতির দিকে মূল মনোযোগ আছে। আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। নিয়ন্ত্রণে আনতে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হবে যার প্রভাব বাজারে পড়বে। আশা করছি, জুনের দিকে মূল্যস্ফীতির হার ৬ থেকে ৭ শতাংশে নেমে আসবে।

সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে দুটি বৈঠকে সভাপতিত্ব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা। ওই বৈঠকে সার ও মসুর ডালসহ কয়েকটি পণ্য আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হচ্ছে এতে কতটা চাপ পড়ছে সেটা বাইরে থেকে জানার কথা নয়। আমি ব্যাংকারদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। কীভাবে বেসরকারি খাতে বাণিজ্যপ্রবাহ বাড়ানো যায়, কীভাবে আরও সাশ্রয়ী করা যায় ব্যবসায়। আমরা চেষ্টা করছি ব্যবসা-বাণিজ্য খাতে গতি আনার।বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলংকার থেকেও খারাপ বলতে চাচ্ছেন? এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, যখন আমরা দায়িত্ব নিলাম ওই সময় ৬০ ব্যাংকের মধ্যে মাত্র ১২টি ভালো অবস্থায় ছিল। বাকিগুলো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। এ রকম কোনো দেশে হয়েছে কি? ওয়ান থার্ড ব্যাংক কাজ করে না। তিনি বলেন, টকশোতে শ্রীলংকার উদাহরণ দেয়, মূল্যস্ফীতি কমে গিয়েছিল, এতটুকু একটা দেশ। রাজনৈতিকভাবে যে-ই আসে তাদের পলিসি হলো যেই সরকারই আসুক তাদের একটা চুক্তি থাকে তাকে সাপোর্ট করতে হবে। আর আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ। আমাদের পছন্দ করেন না। চলে যান। এসবের মধ্য থেকে চেষ্টা করছি কিছুটা সহনীয় রাখতে।

মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, যে কোনো ইনডেক্স যখন উঠতে থাকে তখন অপ্রয়োজনীয় কোনো দুর্যোগ না থাকলে, যেমন শেয়ারবাজার উঠেছে, কিন্তু চুরিধারির পর আবার নিচে নেমে গেছে। কিন্তু মূল্যস্ফীতির বিষয়টা একটু অন্য, এখানে কতগুলো কারণ আছে। যেমন টাকার সরবরাহ বেশি ছিল, সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে গেছে। কোনো জিনিস উঠে গেলে জোর করে নামানো যায় না। এটা তো শুধু অর্থনৈতিক বিষয় নয়, সাপ্লাই চেইন, মনিটারি পলিসি, আর সরবরাহ ছাড়াও কতগুলো কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।ভ্যাট নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, কিছু পণ্যের মূল্য বেড়েছে যেমন বিস্কুটের। এতে লোকজনের কিছুটা কষ্ট হচ্ছে, সেটা লাঘব করার জন্য আমি চেষ্টা করব। এসব বিষয়ে বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসব। তবে আগামী মার্চে বাজেট পুনর্মূল্যায়নের সময় কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি যোগ করে বলেন, দিনের পর দিন ছাড় দেওয়া হয়েছে। এগুলোতে আর আমি উৎসাহ দেব না। আয়করের বিষয় দেখা হবে, বিশেষ করে যাতে অন্য ট্যাক্স কম দিতে হয়। ফল ব্যবসায়ীদের ভ্যাট-ট্যাক্স না কমালে আমদানি ও খালাস বন্ধের ঘোষণা প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সেটা তাদের বিষয়। এ বিষয়ে আমার আর কোনো অ্যাকশন নেওয়ার নেই। রমজান মাসে দেখা যাবে ফল আমদানির কী পরিস্থিতি। আমরা খেজুর আমদানি করছি, বহু আগেই খেজুর আমদানিতে শুল্ক তুলে দেওয়া হয়েছে।রিজার্ভ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রিজার্ভ নিয়ে এক ধরনের চাপ আছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ব্যাংকারদের সঙ্গে বৈঠকে বলেছিলেন, সেখানে তাদের বলেছি যেভাবেই হোক আমাদের ফরেন এক্সচেঞ্জে সাশ্রয় করতে হবে। তবে অতিপ্রয়োজনীয় জিনিসের সরবরাহ আমরা কোনোদিনই কমতে দেব না।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে বিনিয়োগকারীরা গতকাল সমাবেশ করছেন-এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সেগুলো তারা বলুক, তারা একেকজন নানা কথা বলবে, যার যার অবস্থান থেকে। যারা লোকসান দেবে তাদের প্রতি সমবেদনা থাকবে। আর এটা তো নতুন চেয়ারম্যানের কাণ্ড নয়। আগে যারা ছিল তারা এ কাণ্ড করেছে। তারা যেভাবে টাকা নিয়েছে সুকুকের তিন হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে। আমরা এসব বিষয় সমাধানের চেষ্টা করব।ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে ৪০ হাজার মেট্রিক টন ফসফরিক অ্যাসিড আমদানির সিদ্ধান্ত হয়। এতে মোট ব্যয় হবে ৮৮৮ কোটি টাকা। এছাড়া সৌদি আরব থেকে ডিএপি সার আমদানি করা হবে। এতে ব্যয় হবে ২৯৮ কোটি টাকা। প্রতি মেট্রিক টন ডিএপি সারের দাম পড়বে ৬১১ মার্কিন ডলার। বৈঠকে টিসিবির জন্য ১০ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। ব্যয় হবে ৯৮ কেটি টাকা।

Top