পোশাক শিল্প একটি চ্যালেঞ্জিং সময় পার করে বর্তমানে স্থিতিশীলতা অর্জন করেছে
মোহাম্মাদ মুরাদ হোসেন: পোশাক শিল্প একটি চ্যালেঞ্জিং সময় পার করে বর্তমানে স্থিতিশীলতা অর্জন করেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)। একই সঙ্গে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের শ্রমিক অসন্তোষের কারণে পোশাক খাত প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলারের উৎপাদন ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলার স্থিতিশীলতা বিবেচনায় ওই সময় বেশ কিছু কাজের অর্ডার অন্যান্য দেশগুলোতে স্থানান্তরিত হয়েছিল। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সাথে সাথে আন্তর্জাতিক খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলো আবার ফিরে আসছে। বিজিএমইএ জানিয়েছে, পোশাক খাতের অস্থিরতা ও শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখাটাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ। সরকার, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, শ্রমিক নেতা ও বিজিএমইএ-র যৌথ প্রচেষ্টার পর এখন কারখানাগুলো স্বাভাবিক রয়েছে।গতকাল ঢাকায় উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম।শ্রমিক অসন্তোষের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিজিএমইএ সভাপতি সরকারের কাছে তিন মাসের জন্য কোনো কারখানায় গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করার অনুরোধ জানান। ব্যাংক সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার জন্যও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।এছাড়া, গ্যাস সংকটের সময় উৎপাদন চালু রাখতে পোশাক প্রস্তুতকারকদের সিএনজি ফিলিং স্টেশন থেকে গ্যাস সংগ্রহের অনুমতি দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ করেন সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম।সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সরকার, মালিক, শ্রমিক, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সবার সহযোগিতায় বিজিএমইএ বোর্ড বিপর্যয়কর পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছে। এইজন্য বিজিএমইএ বোর্ড সরকার ও সেনাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে।
বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, ক্রেতারাও বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ওপর আস্থা রাখছেন। তিনি বলেন, বিজিএমইএ বোর্ডের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সরকারের নির্দেশনায় পোশাক কারখানাগুলোর নিরাপত্তায় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথবাহিনী গঠন হয়েছে এবং যৌথবাহিনী গার্মেন্টস অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিয়মিতভাবে টহল পরিচালনা করেছে। বিজিএমইএ সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় কমিউনিটি পুলিশিং চালু করেছে।সংবাদ সম্মেলেনে বলা হয়, পোশাক কারখানাগুলোতে আগস্ট মাসের বেতন পরিশোধে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়ায় বিজিএমইএ থেকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা চেয়ে অর্থ উপদেষ্টাকে চিঠি দেয়া হয় এবং বিজিএমইএ বোর্ড বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে দেখা করেন। বিজিএমইএ’র অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক আগস্ট মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে।বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, শ্রম অসন্তোষে আশুলিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩৯টি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সেপ্টেম্বর মাসের বেতন বেতন-ভাতা পরিশোধের সক্ষমতা ছিলো না। বিজিএমইএ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়কে সেপ্টেম্বর মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধের লক্ষ্যে ৩৯টি পোশাক কারখানাকে সুদবিহীন সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পোশাক শিল্পের ৪০ লাখ শ্রমিককে ন্যায্যমূল্যে টিসিবি পণ্য বিক্রয় কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে। গত ১৬ অক্টোবর পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের জন্য ন্যায্য মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রয় কর্মসূচির উদ্বোধন করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।বিজিএমইএ’র অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে পোশাক শিল্প কারখানাগুলোর জন্য বিএনবিসি-২০০৬-এর আলোকে স্টিল স্ট্রাকচারাল ভবনের জন্য ফায়ার রেজিসট্যান্স রেটিং প্রদানের বাধ্যবাধকতা শিথিল করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।শিল্পের প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখতে এবং শিল্পকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে বিজিএমইএ নিম্নোক্ত কিছু বিষয়ে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে। সেগুলো হলো-শিল্পে সুষ্ঠু আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখা; কাস্টমস বন্দর সংক্রান্ত প্রক্রিয়াগুলো সহজতর ও দ্রুততর করা; চট্টগ্রাম বন্দরে পূর্ণ লোডিং ও আনলোডিংয়ে অহেতুক সময়ক্ষেপণ বন্ধ করা; এই ক্রান্তিকালে পরবর্তী ৩ মাসের জন্য কারখানার ইউটিলিটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করা; ব্যাংক খাতের সংস্কার যেন উৎপাদন ও বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব না রাখে; কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কারণে কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়; শিল্পকে ব্যবসাবান্ধব করতে যথাযথ নীতি সহায়তা প্রণয়নের বিষয়ে এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংক সমন্বয়ে একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করা; শিল্পে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা ও বিদ্যুতের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণসহ একটি টেকসই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নীতি প্রণয়ন করা; সব ধরনের ঋণের বিপরীতে ঋণ শ্রেণিকরণ না করা এবং ঋণ পরিশোধে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের জারিকৃত বিআরপিডি সার্কুলার লেটার নং-৪৪ তারিখ ১৪ অক্টোবর ২০২৪ এর ন্যায় পুনঃতফসিলকরণের সুযোগ প্রদান করা; তৈরি পোশাক কারখানাসমূহের স্বাভাবিক উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে জরুরি ভিত্তিতে সিএনজি স্টেশন থেকে সিলিন্ডারের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহের নিমিত্তে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদান করা; ঝুটসহ অন্যান্য রিসাইকেলিং উপযোগী বর্জ্য অপসারণকে বাইরের প্রভাবমুক্ত রাখা; পোশাক খাতের গুরুত্ব বিবেচনা করে প্রণোদনা পুনর্বহালের বিষয়টি বিবেচনা করা; পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের জন্য একটি নিরাপদ এক্সিট পলিসি’র ব্যবস্থা করা এবং শিল্পে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের কঠোর আইনের আওতায় আনা। সংবাদ সম্মেলনে পোশাক শিল্প এগিয়ে নিতে সবার সহযোগিতা চাওয়া হয়।