দেশের সমুদ্রসীমায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ভারতীয় জেলেরা, তৎপর নৌবাহিনী
মোহাম্মাদ সাকিব খাঁন: বঙ্গোপসাগরে মা ইলিশ রক্ষায় চলছে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। এ সুযোগে সাগরের আন্তর্জাতিক সীমা পেরিয়ে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় ঢুকে ভারতীয় জেলেরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এবং মাছ ধরছে বলে অভিযোগ উঠেছে।তবে ভারতীয় জেলেদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। গত কয়েকদিনে ৭৯ ভারতীয় জেলেকে ট্রলারসহ আটক করেছেন নৌসেনারা। তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।বঙ্গপোসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে মাছ শিকারের অপরাধে ভারতীয় পতাকাবাহী দুটি ফিশিং ট্রলারসহ ৩১ জেলেকে আটক করে নৌবাহিনী। বুধবার (১৬ অক্টোবর) সকালে পায়রা বন্দরের জেটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বানৌজা শহীদ আখতার উদ্দিন জাহাজের কমান্ডিং অফিসার লেফটেনেন্ট মো. মোসিউল ইসলাম। তিনি বলেন, গত ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ বানৌজা শহীদ আখতার উদ্দিন নিয়ে নিয়মিত পেট্রলিং চলাকালে জাহাজটির রাডারে সন্দেহজনক ফিশিং ট্রলারের উপস্থিতি লক্ষ্য করা হয়। তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে বিদেশি পতাকাবাহী ট্রলার হিসেবে শনাক্ত করা হয়। এ সময় নৌবাহিনীর জাহাজ শহীদ আখতার উদ্দিন ধাওয়া করে ট্রলার দুটি বাংলাদেশের জলসীমাতেই আটক করতে সক্ষম হয়।
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) মোংলা বন্দরের অদূরে ফেয়ারওয়ে সংলগ্ন গভীর সাগর থেকে তিনটি ট্রলারসহ ৪৮ ভারতীয় জেলেকে আটক করে নৌবাহিনীর টহল দল।নৌবাহিনীর সূত্র জানায়, বাংলাদেশের জলসীমায় ভারতীয় জেলেদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ব্যাপকভাবে নজরদারি করছে নৌবাহিনী। ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার সুযোগে তারা যেন আমাদের সীমানায় প্রবেশ করে মাছ শিকার না করতে পারে সেজন্য তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।নৌবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করে জেলে ও ট্রলার মালিকরা বলছেন, অবাধে মাছ শিকার বন্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি আরও বাড়ানো প্রয়োজন। জানা যায়, ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক আদালতে বাংলাদেশ উপকূলবর্তী এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র অঞ্চলের ২০০ নটিক্যাল মাইলের একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্ধারণ করা হয়। মূলত এখানেই বাংলাদেশের জেলেরা মাছ ধরার সুযোগ পায়। কিন্তু জেলে এবং ট্রলার মালিকদের অভিযোগ, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার সুযোগে বাংলাদেশের জলসীমায় রীতিমতো মাছ লুট করে নিয়ে যাচ্ছে ভারতের জেলেরা। রুপালি ইলিশের বিচরণের বড় ক্ষেত্রগুলো দখলে নিয়েছে তারা।সাগরে ভারতীয় জেলেদের অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে না পারলে নিষেধাজ্ঞার তেমন সুফল মিলবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সদর উপজেলার বাসিন্দা জেলে ইদ্রিস বলেন, ২২ দিন আমরা মাছ শিকারে যাচ্ছি না। তবে সরকারের কাছে দাবি চাল-ডালের সঙ্গে অল্প কিছু নগদ অর্থ দেওয়ার।
জেলে মামুন হোসেন বলেন, নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে ছেলে-সন্তান নিয়ে সংসার চালাতে একটু কষ্ট হলেও মা ইলিশ রক্ষায় নদীতে মাছ শিকার বন্ধ রেখেছি। তবে বাংলাদেশ অংশে অন্য কোনো দেশের ট্রলার মাছ শিকার করতে যেন না পারে সে দিকে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাই। নৌবাহিনী বিপুল সংখ্যক ভারতীয় জেলেকে আটক করেছে বলে শুনেছি।বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ অংশে যাতে অন্য দেশের ট্রলার ঢুকতে না পারে সেজন্য নৌবাহিনী কাজ করছে। তারা ব্যাপক নজরদারীর মাধ্যমে দুই দিনে ৭৯ জন ভারতীয় জেলেকে আটক করেছে। এ বিষয়ে মৎস্য বিভাগও সচেতন রয়েছে।বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মহসীন জানান, মা ইলিশ রক্ষায় ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে সে অনুযায়ী অভিযান চলমান রয়েছে।খুলনা নৌ অঞ্চলের (জি), এনজিপি, এনডিসি, এনসিসি, পিএসসি, বিএন এরিয়া কমান্ডার, রিয়ার অ্যাডমিরাল গোলাম সাদেক জানান, বাংলাদেশের জলসীমায় কেউ যাতে মাছ শিকার করতে না পারে সে ব্যাপারে তৎপর রয়েছে নৌবাহিনী।