বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধে সম্মত হয়েছে মালিকপক্ষ
মোহাম্মাদ নাসির উদ্দিন: পোশাক শ্রমিকদের দাবির প্রেক্ষিতে হাজিরা, বোনাস ২২৫ টাকা, টিফিন ও নাইট বিল ১০ টাকা করে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়াও দেশের সব কারখানায় অক্টোবরের মধ্যে মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন, শ্রমিকদের নামে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার, ১০ অক্টোবরের মধ্যে বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধে সম্মত হয়েছে মালিকপক্ষ। তবে ন্যূনতম মজুরি বোর্ড পুনর্গঠনে মালিক-শ্রমিকদের সক্ষমতা বিবেচনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।মঙ্গলবার সচিবালয়ে সরকার-মালিক-শ্রমিক নেতাদের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠকে সরকারের তরফ থেকে উপস্থিত ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রশিদ চৌধুরী এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আকতার।
মালিকপক্ষে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি একে আজাদ। শ্রমিক নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সম্মিলিত শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার, গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তার, গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির প্রধান তসলিমা আক্তার প্রমুখ।যৌথ ঘোষণা অনুযায়ী, আপাতত শ্রমঘন এলাকায় টিসিবির মাধ্যমে শ্রমিকদের রেশন দেওয়া হবে। স্থায়ী রেশনের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রস্তাব পাঠানো হবে।বিজিএমইএ কর্তৃক শ্রমিকদের বায়োমেট্রিক ব্ল্যাকলিস্টিংয়ের বিষয়ে অক্টোবরে পর্যালোচনা প্রতিবেদন দেবে টেকনিক্যাল টিম। মজুরি আন্দোলনে নিহত ৪ শ্রমিকের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হবে। নিয়োগের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ বৈষম্য দূর করে যোগ্যতার মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হবে। জুলাই বিপ্লবে শহিদ ও আহত শ্রমিকদের তালিকা প্রণয়ন করে মন্ত্রণালয়ে জমা দেবে বিজিএমইএ। অন্যায্যভাবে শ্রমিক ছাঁটাই করা হবে না। নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ১২০ দিন করা হয়েছে। প্রভিডেন্ট ফান্ডের বিষয়ে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে উন্নত চর্চার আদলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অবশ্য শ্রমিকদের মূল দুটি দাবির একটি ছিল ন্যূনতম মজুরি বোর্ড পুনর্গঠন এবং অন্যটি বার্ষিক ১০ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট। ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের বিষয়ে অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে, যেখানে মালিকপক্ষের ৩ জন ও শ্রমিক পক্ষের ৩ জন প্রতিনিধি থাকবেন।
এই কমিটি ন্যূনতম মজুরি বিধিবিধান ও শিল্পের সক্ষমতা ৬ মাসের মধ্যে পর্যালোচনা করবে। একইভাবে ওই কমিটি মূল্যস্ফীতি বিবেচনা করে শ্রম আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের বিষয়ে নভেম্বরের মধ্যে সুপারিশ দেবে।বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, এ খাতটিকে শুধু দেশ থেকেই নয়, দেশের বাইরে থেকেও নষ্ট করার চেষ্টা চলছে। আমরা এখন সব পক্ষের সমঝোতায় এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, এখন কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করলে শ্রমিক ও মালিকপক্ষের যারা এই সমঝোতায় স্বাক্ষর করেছেন তাদের আগে দায়ী করা হবে।শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, যত ন্যায্য দাবি ছিল তা পূরণের জন্যই ১৮ দাবির বিষয়ে সমাধানে পৌঁছেছি। স্বল্পমেয়াদি দাবিগুলো আজকে থেকেই বাস্তবায়ন করা হবে। এখন শিল্পকে বাঁচানোর স্বার্থে কাল থেকেই সব কারখানা চালু রাখতে হবে। শিল্প না বাঁচলে সরকার, দেশ, শ্রমিক-মালিক কেউই বাঁচবে না। তাই কোনো পক্ষ দাবি বাস্তবায়নে গড়িমসি করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।বিজিএমইএর সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, বড় কারখানাগুলো অনেক দিন ধরেই বন্ধ। আমরা একটা সম্মিলিত সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি। আশা করছি কাল থেকে (আজ বুধবার) সবাই কাজে যোগ দেবেন, কারখানা চালু করবেন। এর পরও কারও কথা থাকলে সেটা মালিকের সঙ্গে কারখানার ভেতরে বসেই আলোচনা করুন, রাস্তা বন্ধ করে, কোনো ভাঙচুর করে নয়।
গাজীপুরে কাজে যোগ দিয়েছেন শ্রমিকরা : গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, বেশিরভাগ পোশাক কারখানায় মঙ্গলবার শান্তিপূর্ণভাবে সকাল থেকে দলে দলে যোগ দিয়েছেন শ্রমিকরা। তবে শ্রমিক আন্দোলনের মুখে সোমবার বন্ধ ঘোষণা করা ১৩টি কারখানা মঙ্গলবারও বন্ধ ছিল। সোমবার গাজীপুরের টঙ্গী, বাঘেরবাজার ও মৌচাক এলাকায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিলেও মঙ্গলবার কোথাও বিক্ষোভের সংবাদ পাওয়া যায়নি।উৎপাদন ছিল স্বাভাবিক। কারখানা এলাকায় নিরাপত্তায় পুলিশ ছাড়াও রয়েছে সেনাবাহিনী ও বিজিবির টহল।
আশুলিয়ায় আটক ৮ : আশুলিয়া (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, আশুলিয়াসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকার পোশাক কারখানায় অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির অভিযোগে আটজনকে আটক করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ আটজনকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেন-আশুলিয়ার দেওয়ান আব্দুল হাই, শুক্কুর আলী, জাহিদুল ইসলাম, টাঙ্গাইলের রনি ও রাব্বি মিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মিজানুর রহমান ও জাহিদুল এবং কুমিল্লার শাহাপরান।