শেষ সময়ে পুলিশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ চলে যায় ছাত্রলীগ করা কর্মকর্তাদের হাতে
মু.এ বি সিদ্দীক ভুঁইয়া:আন্দোলনের সময় পরিস্থিতি বুঝে কঠোরতা প্রদর্শনের জন্য ডিএমপির মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়। আর মাঠে সক্রিয় হওয়ার জন্য বলা হয়, বিশেষ করে ছাত্রলীগ করে আসা পুলিশ কর্মকর্তাদের। এরপর পরিস্থিতি দ্রুতই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। কঠোরতা প্রদর্শনের নির্দেশ দেয়া হলে নির্বিচারে ছাত্র-জনতার ওপর গুলির ঘটনা ঘটে, যা গণহত্যায় রূপ নেয়। পরে আর মাঠ পুলিশকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য জানান সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন। চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন গণ-আন্দোলনে রূপ নেয়ার পর পুলিশ নির্বিচারে গণ-হত্যা চালায়। গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে রিমান্ডে রয়েছেন সাবেক এই আইজিপি। সেখানেই জিজ্ঞাসাবাদে তদন্ত কর্মকর্তা তাকে বলেন, গণ-হত্যার দায় এড়াতে পারননি আপনি। এ সময় তিনি কোন উত্তর দেননি বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে।বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি, দমন-পীড়ন সম্পর্কে তাদের ভূমিকা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পাশাপাশি আন্দোলন সংক্রান্ত অনেক বিষয়ে জানতে চাওয়া হচ্ছে। মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে।
তদন্তকারী একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গ্রেপ্তারের পর থেকে জিজ্ঞাসাবাদে নির্বাক রয়েছেন চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন। কোনোভাবেই গণহত্যার দায় এড়াতে পারেননি। তবে তিনি দাবি করেছেন ছাত্র-জনতার আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে মাঠ পুলিশ তার কমান্ড বা নিয়ন্ত্রণে ছিল না। রাজনৈতিক বিবেচনায় ভূমিকা নেয় মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তারা, বিশেষ করে ডিএমপি।এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ছাত্রদের হাতে শুরু হওয়া আন্দোলন দমন-পীড়নের কারণে গণ-আন্দোলনে রূপ নিয়েছিল। এই আন্দোলন দমন করতে গিয়ে পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। গণহত্যায় তৎকালীন সরকারের চাপ আর সরকার দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ন্যায় পুলিশকে ব্যবহার করা হিতে বিপরীত হয়েছে। পুলিশের ভূমিকা ও ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারের পতন ও শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলে ছাত্র-জনতার রোষ পড়ে পুলিশের ওপর। এই দায় তো তৎকালীন পুলিশ প্রধান হিসেবে মামুন স্যার এড়াতে পারেন না।তিনি বলেন, আমরা তাকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তিনি দায় এড়াতে চেষ্টা করেননি। বেশিরভাগ সময় নির্বাক ছিলেন, কখনো প্রশ্ন শুনে হতভম্ব হয়ে পড়েন তিনি।জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে বিমর্ষ হয়ে সাবেক আইজিপি মামুন বলেন, দ্বিতীয় দফায় চুক্তিভিত্তিক আইজিপি হতে ইচ্ছে ছিল না। এতে করে বাহিনীতে চেইন অব কমান্ডে বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হয়। কাউকে বঞ্চিত করা হয়। কিন্তু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা এড়াতে পারিনি। সেদিন যদি নারাজি দিতাম তাহলে হয়তো আমি এই গণহত্যার দায়মুক্ত থাকতাম বলে মন্তব্য করেন। গত ৩ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে পৃথক হত্যা মামলায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ও এ কে এম শহীদুল হককে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ(ডিবি)।