অফিস-আদালতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শতভাগ উপস্থিতির মাধ্যমে পুরোপুরি শুরু হয়েছে কার্যক্রম
মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম:অফিস-আদালতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শতভাগ উপস্থিতির মাধ্যমে পুরোপুরি শুরু হয়েছে কার্যক্রম। ঢাকার দোকানপাট, মার্কেট, শপিংমল ও বিপণিবিতান খুলে দেওয়ার মধ্য দিয়ে প্রাণ ফিরে পাচ্ছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। ছোট, মাঝারি ও বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। চাকা ঘুরছে রপ্তানিমুখী শিল্পগুলোর।কারফিউ শিথিলের ফলে রাজধানীসহ সারা দেশে ফিরে আসছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ও কর্মচাঞ্চল্য। ঢাকাসহ দেশব্যাপী খুলেছে অফিস-আদালত, দোকানপাট ও বিপণিবিতান। শুরু হয়েছে যানবাহন চলাচল। ভয়-শঙ্কা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাটিয়ে মানুষ হয়ে পড়ছেন কর্মব্যস্ত। আবার ফিরে আসছে স্বাভাবিক অবস্থা। প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয় সকাল থেকেই কর্মমুখর হয়ে উঠছে। গ্রাহকের ভিড় জমছে ব্যাংকপাড়ায়।ঢাকার বাসটার্মিনাল থেকে বিভিন্ন জেলার দূরপাল্লার গাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে। মোকামগুলো থেকে পণ্যবাহী ট্রাক ঢাকার বিভিন্ন পাইকারি বাজারে আসছে। বহির্বিশ্বের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চলছে বন্দরগুলোয়। স্বাভাবিক হয়েছে বিমানের আন্তর্জাতিক ফ্লাইটও। গ্যাস-বিদ্যুৎ ও পানি এবং সিটি করপোরেশনের সেবামূলক কার্যক্রম একই গতিতে চলছে। একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসছে। এতে স্বস্তি ফিরে আসছে সাধারণ মানুষের জীবনে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে চলমান কারফিউ আরও শিথিল হয়েছে। নতুন সপ্তাহের প্রথম তিন কর্মদিবসে (রবি থেকে মঙ্গল) ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী জেলায় সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১১ ঘণ্টা কারফিউ শিথিল করা হয়েছে। অন্যান্য জেলায়ও কারফিউ শিথিলের সময়সীমা বাড়ছে। অফিস সময়সূচি ৪ ঘণ্টার বদলে ৬ ঘণ্টা করা হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত অফিস খোলা। তবে ব্যাংকে লেনদেন চলছে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত। কারফিউ শিথিল থাকছে সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। এছাড়া খুলনা, বগুড়া, চট্টগ্রাম, সিলেট ও কুমিল্লার মতো অনেক জায়গায় কারফিউ শিথিল থাকছে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত। সোমবার কর্মব্যস্তময় নগরী ঢাকার রাজপথে দুপুরেই যানজট শুরু হয়। ব্যক্তিগতসহ গণপরিবহণের সংখ্যা রাজপথে বেড়েছে। আর দিনের শুরুতেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতিতে সরব হয়ে উঠে সচিবালয়। এ সময় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে রুটিন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এদিন মন্ত্রিসভার বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেলা ১২টায় অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ একাধিক মন্ত্রণালয়ে গিয়ে দেখা গেছে কর্মমুখর পরিবেশ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী অফিস চলছে। কাজের কোনো ব্যত্যয় হচ্ছে না।
ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসঙ্গে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট রেজাউল ইসলাম মন্টু সোমবার বলেন, কারফিউ শিথিলের সময় রাত ৯টা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হলে ব্যবসায়ী ও দোকানপাট মালিকদের জন্য আরও সুবিধা হবে। দোকান মালিক সমিতির পক্ষ থেকে এ প্রস্তাব সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে জানানো হয়েছে।রাজধানীর সব মার্কেট, বিপণিবিতান খুলে দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় কেনাকাটার জন্য মার্কেটগুলোয় ক্রেতা আসছে। দিনদিন ক্রেতার সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে অনেক বেসরকারি অফিস, কারখানা সকাল ৮টার মধ্যেই চালু হয়ে যায়। সাতসকালে খুলে দেওয়া হচ্ছে দোকানপাট, রেস্তোরাঁ। অনেকদিনের জমানো কাজ সারতে প্রচুর মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েন। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এখনো খোলার মতো পরিস্থিতি নেই বলে সোমবার জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। কারফিউ চলায় সন্ধ্যার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়, সড়ক ও স্থাপনার সামনে অবস্থান নেয় সেনাবাহিনী।আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশব্যাপী ক্রম অবনতিশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে জনসাধারণের জানমাল ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানে ২০ জুলাই ভোর থেকে নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। জনগণের স্বার্থে ও রাষ্ট্রের যে কোনো প্রয়োজনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সব সময় জনগণের পাশে আছে এবং থাকবে। দেশের সংবিধান সমুন্নত রেখে প্রচলিত আইনের আওতায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, দেশবাসীর জানমালের নিরাপত্তা ও জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
রংপুর বিভাগের আট জেলায় সোমবার সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল ছিল। ময়মনসিংহে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা, রাজশাহীতে সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা, বরিশালে সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা, খুলনায় সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা, সিলেটে সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল ছিল। সিলেটে সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা, রংপুর বিভাগে সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা এবং চট্টগ্রামে সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল রয়েছে। কারফিউ শিথিল করায় রোববার ভোর থেকেই কর্মচঞ্চল হয়ে ওঠে রাজধানী। অলিগলি থেকে মূল সড়কের পাশের দোকানপাট, অফিস, কারখানা খুলে যায়। সরকার এই তিনদিন দেশের সব সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অফিস সময় সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত নির্ধারণ করলেও দীর্ঘদিনের কাজের ঘাটতি পূরণে কিছুটা আগেভাগেই কর্মচঞ্চল হয়ে ওঠে রাজধানী।
ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-চট্টগ্রামে স্বাভাবিক হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য : চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, কারফিউ শিথিল হওয়ায় দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, গুদাম ও আড়তগুলো খুলেছে। শুরু হয়েছে বেচাকেনা। শ্রমিকদের হাঁকডাকে আবারও প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠেছে প্রাচীন এই পাইকারি বাজারটি। তবে সীমিত আকারে কারফিউ থাকায় দূরদূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা আসছেন না। কেবল চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ নয়; চট্টগ্রামের টেরিবাজার, রিয়াজউদ্দিন বাজারসহ অন্যান্য মার্কেট, শপিং সেন্টারগুলোয়ও ক্রেতা সমাগম বেড়েছে। জমজমাট হকার মার্কেটসহ নগরীর ফুটপাতের বাণিজ্যও। কারফিউ উঠে গেলে এ পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। কোটাবিরোধী আন্দোলন ও দেশব্যাপী কারফিউ জারির পর সরবরাহ সংকটে দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে দাম বেড়েছে পণ্যের। পাশাপাশি পরিবহণ চলাচল বন্ধ থাকায় চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে নেমে এসেছিল স্থবিরতা। ভোগ্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুত থাকার পরও চট্টগ্রামে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়। ব্যবসায়ীদের মতে, ২০ থেকে ২৫ জুলাই ছয়দিন চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে লেনদেন বন্ধ ছিল। এ সময় ব্যবসায়ীদের লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। অনেক আড়তে পেঁয়াজসহ অনেক পচনশীল পণ্য নষ্ট হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয় খাতুনগঞ্জে। এক সপ্তাহ এ বাজারে ক্রেতা ছিল না; কিন্তু সব রকমের ব্যয় অব্যাহত ছিল। অনেক আমদানিকারকের পণ্য বন্দরে ছিল, সেখানে বাড়তি খরচ হয়েছে। বিক্রি না থাকলেও ব্যাংকের সুদ উঠেছে, অনেক ব্যবসায়ীর বড় অঙ্কের লোকসান হয়েছে। এই লোকসান পুষিয়ে নিতে কয়েক মাস লেগে যাবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
সোমবার দুপুরে সরেজমিনে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ দেখা যায়, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে বেশির ভাগ আড়ত-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছে। চাক্তাই খাতুনগঞ্জের মূল সড়কের দুই পাশে ট্রাক কাভার্ডভ্যানের দীর্ঘ সারি। এসব ট্রাক, কাভার্ডভ্যান থেকে পণ্য লোড-আনলোডে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। বান্দরবান থেকে ভোগ্যপণ্য কিনতে আসা ব্যবসায়ী কনক দাশবলেন, গত এক সপ্তাহ চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে মালামাল কিনতে আসতে পারিনি। ভয় ও আতঙ্কে ছিলাম। সোমবার সকালে এসেছি মালামাল কিনতে। আন্দোলনের কারণে পরিবহণ মালিকরাও ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, কারফিউ শিথিল করলেও এখনো পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। তবে বাইরে থেকে ব্যবসায়ীরা আসছেন। মালামাল কিনছেন। উত্তর বঙ্গের বিভিন্ন আড়ত ও মোকাম থেকেও মালামাল আসছে। ফলে পুনরায় আমরা আগের মতো ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারছি। আমাদের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে এখন রাতদিন পণ্য লোড-আনলোড হচ্ছে। বেচাবিক্রিও অনেক বেড়ে গেছে।
সিলেট : দফায় দফায় বন্যা ও কোটা আন্দোলনে স্থবির হয়ে পড়া সিলেটের সব স্থলবন্দর ও শুল্কস্টেশন ফের কর্মব্যস্ত হয়ে উঠেছে। ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের মধ্যে দেখা গেছে পুরোদমে কর্মচঞ্চলতা। একের পর এক ঢুকছে পণ্যবাহী ট্রাক। পাথরভর্তি ভারতীয় ট্রাক তামাবিল স্থলবন্দরে মালামাল খালাস করে ফিরে যাচ্ছে। সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় ১১টি শুল্ক স্টেশনে লক্ষাধিক শ্রমিক কাজ করেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় শ্রমিকরা খুশি।
তামাবিল পাথর, চুনাপাথর ও কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সহসভাপতি জালাল উদ্দিন বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। নগরীর দোকানপাট, অফিস-আদালত, বিপণিবিতান খুলেছে। সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল গিয়ে দেখা যায়, অভ্যন্তরীণ ও ঢাকাসহ বিভিন্ন রুটের বাস চলাচল করছে।
কারফিউ শিথিলে পালটে গেছে বরিশালের চিত্র : বরিশাল জেলাসহ মহানগরীতে ১৬ ঘণ্টা কারফিউ শিথিলে জনজীবনে অনেকটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। রোববার থেকে ১৬ ঘণ্টা শিথিল ঘোষণায় নগরীর চিত্র পালটে গেছে। সোমবার দিনভর নগরীসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ দিনের মতো জনসমাগম লক্ষ করা গেছে। ঘরবন্দি অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসছেন মানুষ। এ কারণে বরিশাল অনেকটা স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে।
রাজশাহীর জনজীবন প্রায় স্বাভাবিক : ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে রাজশাহী মহানগরীর জনজীবন। দিনে কারকিউ শিথিল হওয়ায় দোকানপাট, বাজারঘাট যেমন সচল হয়েছে, তেমনই অফিস-আদালতও আগের চেহারায় ফিরছে। ব্যাংকগুলোয় মানুষের আসা-যাওয়া বেড়েছে এবং লেনদেন হচ্ছে পুরোদমে। সোমবার সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল ছিল। এই সময়ে নগরীর কাঁচাবাজার, মার্কেট ও বিপণিবিতানগুলোয় উপচে পড়া ভিড় ছিল। নগরবাসী আগের মতোই তাদের নিত্যকাজ স্বচ্ছন্দে করেছেন। নগরীর বাইরে থেকেও বিভিন্ন প্রয়োজনে নগরীতে আসছেন এবং কাজ শেষে এলাকায় ফিরছেন। রাজশাহী থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকলেও আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার বাস চলাচল শুরু হয়ে গেছে।
ময়মনসিংহে প্রধান সড়কগুলোয় যানজট : ময়মনসিংহে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। ১৩ ঘণ্টা কারফিউ শিথিল থাকায় যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে পুরোদমে। প্রধান প্রধান সড়কে ছিল তীব্র যানজট। এখনো ট্রেন চলাচল শুরু না করলেও গণপরিবহণের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। জেলা ও উপজেলায় দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল করছে। নগরীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, অফিস-আদালত, ব্যাংক-বিমা খোলা থাকায় মানুষের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য বিরাজ করছে।
স্থবিরতা কাটছে বগুড়ায় : কারফিউ শিথিলে বগুড়ায় কয়েকদিনের অচলাবস্থা শেষে সবকিছু স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। ২৪ জুলাই থেকে শহরে স্বাভাবিক রিকশা চলাচল। খুলেছে অফিস-আদালত, দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন রুটে বাস চলাচল শুরু করায় মানুষের মাঝে উৎকণ্ঠা, হতাশা ও আতঙ্ক কেটে যাচ্ছে। সব ধরনের যানবাহন চলাচল শুরু করায় শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোয় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
ফরিদপুরে জনজীবনে স্বস্তি : অফিস, বাজার, দোকানপাট, যানবাহন চলাচল প্রায় স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। কারফিউ শিথিলের সময় সবকিছু স্বাভাবিকভাবে চলছে। তিতুমীর বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, কয়েকদিনের ভীতিকর পরিস্থিতির পর কারফিউ শিথিলের সময় মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে কেনাকাটা করছে। ফরিদপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফসিসিআই) সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম বলেন, কোটা আন্দোলন নিয়ে সারা দেশে যে সহিংসতা হয়েছে, সেই তুলনায় ফরিদপুর অনেক ভালো ছিল, শান্তিতে ছিল। এখানে তেমন কোনো সংঘাত হয়নি। কারফিউ শিথিলের পর জনজীবনে স্বস্তি ফিরে আসছে।
কুমিল্লায় কেটেছে শঙ্কা : কুমিল্লায় শঙ্কা কাটিয়ে অবশেষে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং নৈরাজ্যের নানা ধকল শেষ করে মানুষ তাদের সব ধরনের কাজকর্ম শুরু করেছে। সোমবার বিকালে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে এবং জেলার সবকটি উপজেলায় খবর নিয়ে এ চিত্র পাওয়া গেছে। কুমিল্লা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম বলেন, কুমিল্লা থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ সব সড়কে আমাদের যানবাহন চলাচল করছে। আপাতত পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখা যাচ্ছে।
খুলনা : কারফিউ শিথিলের পর গেল এক সপ্তাহে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে মানুষের মনে। আবার স্বাভাবিক হয়েছে নগরী। অফিস-আদালতগুলোয় ফিরেছে কর্মচাঞ্চল্য, বাজারগুলোয়ও বাড়ছে ভিড়। খুব দ্রুত দেশের অবস্থা আরও স্বাভাবিক হবে-এমনটাই প্রত্যাশা সাধারণ মানুষের। দেয়ানা দক্ষিণপাড়া মাদ্রাসার শিক্ষক জিয়া চৌধুরী বলেন, আগের সপ্তাহে কারফিউর কারণে মনের মধ্যে সব সময় অজানা ভয় কাজ করত। কারফিউ শিথিল হওয়ায় সেই ভয় অনেকটা কেটেছে। কাপড় ব্যবসায়ী আশিকুর রহমান বলেন, সাধারণ মানুষ কারফিউর মতো পরিস্থিতি চায় না। স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে চায়।