জন্মলগ্ন থেকে জুলুম, নির্যাতন, নিপীড়ন,শত সংকট মোকাবিলায় অদম্য গতিতে এগিয়ে চলছে
মু.এবি সিদ্দীক ভুঁইয়া :দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ রোববার।দীর্ঘ এ পথচলায় ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে সব আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে দলটি।এই সময়ে এসেছে নানা বাধা-বিপত্তি-দুর্যোগও। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা, দলে ভাঙন, নেতাদের দলত্যাগ, সামরিক জান্তাদের রোষানল, নিষেধাজ্ঞা, হামলা-মামলাসহ কণ্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে আওয়ামী লীগকে।এ পথচলায় ৪৩ বছর ধরে দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগকে করেছেন দীপ্তময়। এ সময়ে তিনি বহুধাবিভক্ত দলকে বেঁধেছেন এক সুতোয়। নেতৃত্ব দিয়েছেন লড়াই-সংগ্রামে। সহ্য করেছেন জেল জুলুম অত্যাচার। তুচ্ছ করেছেন মৃত্যুভয়। সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনের মধ্য দিয়ে টানা চতুর্থবারসহ পঞ্চমবারের মতো দলকে এনেছেন রাষ্ট্র ক্ষমতায়।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ যেমন বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছে, ঠিক তেমনি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। কমেছে দারিদ্র্য, বেড়েছে মাথাপিছু আয়। স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ বাস্তব। চলছে মেট্রোরেল। বাস্তবায়ন হয়েছে কর্ণফুলী টানেলসহ অনেক মেগা প্রকল্প।সাম্প্রদায়িক শক্তি ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা সরকারের কঠোর অবস্থান সারা বিশ্বে প্রশংসিত। সব মিলিয়ে নির্বাচনি অঙ্গীকার অনুযায়ী ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত, আধুনিক বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সুখী, সমৃদ্ধ ‘ডিজটাল বাংলাদেশ’ গড়াসহ বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নিয়ে গেছে দলটি।ডিজিটাল বাংলাদেশের পর এবার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’র স্বপ্নযাত্রা শুরু করেছে দলটি। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণই তাদের লক্ষ্য। এই স্বপ্নযাত্রায় বাধা থাকলেও তারা সঠিক পথেই রয়েছেন।
আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দলটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু বলেন, ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। তার নেতৃত্বে ১৫ বছর আন্দোলন-সংগ্রামের পরে আমরা ক্ষমতায় আসি। বঙ্গবন্ধু সব সময় বলতেন-‘আমি বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই।তার কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরে পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে সেই দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন একটি আত্মমর্যাদাশীল বাঙালি জাতি পৃথিবীর বুকে আত্মপ্রকাশ করবে। আজকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা সেই আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে সমর্থ হয়েছি। এর মধ্যে দিয়ে শেখ হাসিনা বিশ্বের হাতেগোনা কয়েকজন রাষ্ট্রনায়কের মধ্যে অন্যতম রাষ্ট্রনায়ন হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের।
তিনি আরও বলেন, আজকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ৩০ বছর ফারাক্কা চুক্তি ছিল না। তিনি সেটা করেছেন। তিনি পার্বত্য শান্তি চুক্তি করেছিলেন। ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতি আদায় করেছেন। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে দেশকে মর্যাদার আসনে নিয়ে গেছেন। আজকে পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেলসহ অনেক মেগা প্রজেক্ট তিনি করেছেন। তার এইসব কাজের মধ্য দিয়ে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পেয়েছে।
১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা এবং জাতীয় চার নেতাকে খুনের পর দুঃসহ পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যেতে হয় বাংলাদেশকে। সেই হিংস্র থাবায় কিছুটা দিকভ্রান্ত হয়ে পড়ে আওয়ামী লীগও। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে, নির্যাতন ও ষড়যন্ত্রের কারণে বহুধাবিভক্ত আওয়ামী লীগকে এক সুতোয় বাঁধতে ১৯৮১ সালের কাউন্সিলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে ফিরে আসেন তিনি।পিতার মতোই ছুটতে শুরু করেন দেশের প্রতিটি অঞ্চলে। গ্রামে গ্রামে ঘুরে মানুষের দারিদ্র্যপীড়িত কষ্টের জীবন দেখে দেশ পুনর্গঠনের শপথ নেন। পুনর্গঠিত করেন আওয়ামী লীগের প্রতিটি ইউনিট। নিপীড়িত বাঙালি জাতিকে আবারও জীবনের স্বপ্ন দেখান শেখ হাসিনা।
প্রায় এক দশক নিরলস সংগ্রামের পর দেশে সামরিক শাসনের অবসান ঘটে। ফিরে আসে গণতন্ত্র। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিরোধী দলের আসনে বসতে হয় শেখ হাসিনাকে। বিএনপি সরকারকে চাপ দিয়ে সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা চালু করতে বাধ্য করেন তিনি।শেখ হাসিনার অনমনীয় মনোভাবের কারণেই জবাবদিহিতামূলক গণতান্ত্রিক সংসদীয় ব্যবস্থা ফিরে আসে বাংলাদেশে। পাশাপাশি নিজের দলকে ভেতর থেকে সাংগঠনিকভাবে গুছিয়ে তুলতে মনোনিবেশ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তার পাঁচ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর অবশেষে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ। দীর্ঘ ২১ বছর পর শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে সরকার গঠন করতে সক্ষম হয় মুক্তি সংগ্রাম ও স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী এই দলটি।
২০০১ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। এই সময়ে রাজপথে সক্রিয় ছিল আওয়ামী লীগ। রাজপথ থেকে আওয়ামী লীগকে সরানোর জন্য প্রকাশ্যে বোমা ও গ্রেনেড মেরে হত্যার অপচেষ্টা করা হয় শেখ হাসিনাকে। কিন্তু নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে গণমানুষকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথ আঁকড়ে ধরেন তিনি। নির্বাচনে পরাজয়ের পর সুসংহত হয়ে জোট সরকার বিরোধী আন্দোলনে সফলতার পরিচয়ও দিয়েছিল দলটি।কিন্তু এই আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নিলে আবারও নতুন সংকটের মুখে পড়ে যায় দলটি। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাসহ প্রথম সারির অসংখ্য নেতার গ্রেফতার এবং একাংশের সংস্কার তৎপরতায় কিছুটা সংকটে পড়ে দলীয় কার্যক্রম।
তবে, সব প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করেই ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও মহাজোট ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করে। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি গঠিত হয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা।পরে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপি-জামায়াত জোটের শত প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে এবং তৃতীয় বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে এবং শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন। সর্বশেষ, ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে এবং শেখ হাসিনা পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমাদের চলার পথে প্রধান বাধা বর্ণচোরা বিএনপি। এ অপশক্তিকে প্রতিহত করাই আওয়ামী লীগের আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ। রোববার আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির জনক প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের দলের জন্মদিনে আমাদের অঙ্গীকার হচ্ছে আমাদের রক্তমূল্যে অর্জিত বিজয়কে সুসংহত করব। আমাদের চলার পথে প্রধান বাধা বর্ণচোরা বিএনপি। মুক্তিযুদ্ধের নামে এ বর্ণচোরারা ভাঁওতাবাজি করে। সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গিবাদী শত্রু আজ আমাদের অভিন্ন শত্রু।তিনি আরও বলেন, আজ আমাদের অঙ্গীকার, আমাদের আজ শপথ এ অপশক্তিকে পরাজিত করতে হবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ করব। এটাই আজকের দিনের শপথ।এর আগে সকাল ৭টায় আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ধানমন্ডিতে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন শেখ হাসিনা। পরে দলের অন্যান্য নেতারাও শ্রদ্ধা জানান।
জন্মলগ্ন থেকে জুলুম, নির্যাতন, নিপীড়ন তথা শত সংকট মোকাবিলা এবং দীর্ঘ সংগ্রামের পথ অতিক্রম করে অদম্য গতিতে এগিয়ে চলছে দলটি। এই দলের নেতৃত্বাধীন সরকারের হাত ধরে উন্নয়ন-অর্জনে বাংলাদেশ আজ অনন্য উচ্চতায়। স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় এখন বাংলাদেশ। এই দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী স্মরণীয় করতে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। ব্যানার-ফেস্টুন ও বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে পুরো রাজধানী। এতে দলটির ইতিহাস ও ঐতিহ্য পাশাপাশি এই দলের নেতৃত্বাধীন সরকারের বড় বড় মেগা প্রকল্পের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।আওয়ামী লীগের প্লাটিনামজয়ন্তী নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, উন্নয়ন অর্জনে পরিপূর্ণ আওয়ামী লীগের সাফল্য একদিনে আসেনি। স্বাধীনতা সংগ্রামের আগে-পরে শত চড়াই-উতরাই পাড়ি দিয়ে আসতে হয়েছে। সহ্য করতে হয়েছে গুম, খুন, ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত ও নির্যাতন।জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, হঠাৎ করে আওয়ামী লীগ আজকের অবস্থানে আসেনি। এই দলকে নানামুখী সংকট ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত, গুম, খুন ও নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা আওয়ামী লীগ কখনো বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে বেরিয়ে আসেনি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ধর্মনিরপেক্ষতা, অসাম্প্রদায়িকতা, গণতন্ত্র, অর্থনীতি ও মানবিক বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্য নিয়েই এই দল কাজ করে চলেছে। আওয়ামী লীগের হাত ধরেই আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলছে, যা দেশের অন্য কোনো রাজনৈতিক দল করতে পারেনি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত বলেন, আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার সংগ্রামের নেতৃত্বদানকারী দল। এই দলটি শুধু নতুন একটি দেশ উপহার দেয়নি, দলটি এখন দেশের মানুষকে অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে কাজ করছে। এই দল স্বাধীনতার পর দীর্ঘদিন ক্ষমতায় ছিল না। তারপরও দেশের বড় অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাফল্য এসেছে আওয়ামী লীগের হাত ধরেই।তিনি বলেন, দেশ স্বাধীনের আগে-পড়ে সব থেকে বেশি নির্যাতন, নিপীড়ন ও জেল-জুলুম সহ্য করা দল আওয়ামী লীগ। এত নির্যাতনের পরও তৃণমূলে সব সময় শক্তিশালী ছিল এই দল। নির্যাতনে শিকার হলেও আওয়ামী লীগ কখনো রাজনীতি থেকে হারিয়ে যায়নি। শত নির্যাতনের মুখে এই দল টিকে ছিল এবং টিকে থাকবে।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলীর ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্ম। এর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী স্মরণীয় ও জাঁকজমকপূর্ণ করতে প্লাটিনামজয়ন্তী হিসাবে পালন করা হচ্ছে। বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা, সমাবেশ, সেমিনার, চিত্র প্রদর্শনী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বৃক্ষরোপণসহ নানা কর্মসূচিতে থাকছে ভিন্নতা। প্লাটিনামজয়ন্তী সফল করতে ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও প্রধান প্রধান সড়ক ছেয়ে গেছে ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ডে। ব্যানার-ফেস্টুনে স্থান পেয়েছে সরকারের বড় বড় মেগা প্রকল্প ও দলের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। তুলে ধরা হয়েছে দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের গল্প। শুধু রাজধানী নয়, জেলা-উপজেলা পর্যায়েও প্লাটিনামজয়ন্তী সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
সর্বশেষ শুক্রবার বিকালে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা মধ্য দিয়ে প্লাটিনামজয়ন্তীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংলগ্ন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে থেকে ‘বর্ণাঢ্য র্যালি ও শোভাযাত্রা’ বের হয়। এতে ব্যান্ডপার্টি, ঢোল, কৃষকের সাজ, বেলুনসহ বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে অংশ নেন দলটির বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী। ‘বর্ণাঢ্য র্যালি ও শোভাযাত্রা’ ধানমন্ডি ৩২ নম্বর গিয়ে শেষ হয়।টানা চতুর্থ মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। দীর্ঘদিন ক্ষমতা থাকা দলটির হাত ধরেই উন্নয়ন-অর্জনে অনন্য উচ্চতায় বাংলাদেশ। নিজ অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, থার্ড টার্মিনাল, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বড় বড় মেগা প্রকল্প দৃশ্যমান হয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, সামাজিক নিরাপত্তা, কৃষি, স্বাস্থ্য খাতের অগ্রগতি, নারীর ক্ষমতায়ন, অর্থনৈতিক ও যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ ঈর্ষণীয় সাফল্য এসেছে। বিনামূল্যে ভূমি ও গৃহহীনদের ঘরবাড়ি তৈরি, শতভাগ বিদ্যুতায়ন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছে গেছে ইন্টারনেট সংযোগ। স্কুলের পড়াশোনায় যোগ হয়েছে ইন্টারনেট।
বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে এখন উন্নয়নশীল দেশের তালিকায়। সমুদ্র জয় থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে মহাকাশ বিজয় ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন হয়েছে। দলটির লক্ষ্য এখন স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামোকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া, কর্মসংস্থান ও বিশ্বের বুকে নতুন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃত অর্জনে অভাবনীয় সাফল্যও এসেছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই।দেশের সবচেয়ে পুরাতন, ঐতিহ্যবাহী ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের হাত ধরেই বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জন হয়েছে। ছিটমহল সমস্যা নিয়ে ভারতের সঙ্গে ঐতিহাসিক সমঝোতা ও সীমান্ত মীমাংসা আওয়ামী লীগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্জন।তবে স্বাধীনতার আগে-পরে গণতান্ত্রিক সব আন্দোলনে সব থেকে বেশি নির্যাতনের শিকার আওয়ামী লীগ ও দলটির নেতাকর্মীরা। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর গুম, খুন, জেল-জুলুমসহ নানামুখী নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগ জন্ম থেকেই স্বৈরাচারী শাসকদের অন্যায়, অবিচার, অত্যাচার ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্ট গঠন, ৬ দফা ও ১১ দফা দাবি, ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান-এ সবই ছিল স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের চপেটাঘাত। আর এ কারণেই স্বাধীন বাংলাদেশেও দলটি স্বৈরাচারী ও অগণতান্ত্রিক শাসকদের বিরুদ্ধে সর্বদাই সোচ্চার ভূমিকা পালন করে আসছে।