বিশ্বকাপ থেকে বাংলাদেশকে বিদায় করে সেমিফাইনালে ভারত
মোহাম্মাদ সাকিব খাঁন : সংক্ষিপ্ত স্কোর: ভারত ২০ ওভারে ১৯৬/৫
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৪৬/৮ (লক্ষ্য ১৯৭ রান)
অ্যান্টিগায় মোস্তাফিজুর রহমান ও সাকিব আল হাসানদের ওপর চড়াও হয়ে ভারত করে ১৯৬ রান। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অ্যান্টিগায় রেকর্ড রান তোলে তারা। জিততে হলে বাংলাদেশকে রেকর্ড গড়তে হতো। শুরু থেকে তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস মেরে খেলতে চেয়েছিলেন। ছক্কা মেরে আগ্রাসী হয়ে ওঠার আভাস দিয়েই আউট হন লিটন। এরপর তানজিদ ও নাজমুল হোসেন শান্ত প্রতিরোধ গড়েন। কুলদীপ যাদব ব্রেকথ্রু করেন। টানা তিন ওভারে তিন উইকেট নেন ভারতীয় স্পিনার।তাতেই বাংলাদেশের হার সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। শান্ত একাই লড়াই করছিলেন। ইনিংস সেরা ৪০ রান করেন তিনি। শেষ দিকে রিশাদ হোসেন ক্যামিও ইনিংস খেলে হারের ব্যবধান কমান। ১০ বলে ১ চার ও ৩ ছয়ে ২৪ রান করেন তিনি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৯ রান আসে তানজিদের ব্যাটে। বড় লক্ষ্যে নেমে বাংলাদেশ থামে ১৪৬ রানে।ভারতের পক্ষে বুমরা দুর্দান্ত বোলিং করেন। ৪ ওভারে ১৩ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। কুলদীপ ৪ ওভারে ১৯ রান দিয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট পান।
আর্শদীপের বলে আউট মাহমুদউল্লাহ
শেষ ওভারে বাংলাদেশ হারায় অষ্টম উইকেট। মাহমুদউল্লাহ ১৩ রান করে আর্শদীপ সিংয়ের শিকার হন।
ঝলক দেখিয়ে আউট রিশাদ
জাকের আলী আউট হওয়ার পর ১৭তম ওভারে ক্রিজে নেমে রিশাদ হোসেন আক্রমণাত্মক ছিলেন। ওই ওভারে একটি চার ও ছয় মেরে ১২ রান তোলেন তিনি। পরের ওভারে দুটি ছক্কা মেরে ১৫ রান যোগ করেন এই ব্যাটার। শেষের আগের ওভারে তাকে থামতে হলো। ১০ বলে ১ চার ও ৩ ছয়ে ২৪ রান করে যশপ্রীত বুমার শিকার হন তিনি রোহিত শর্মাকে ক্যাচ দিয়ে। ১৩৮ রানে সাত উইকেট হারালো বাংলাদেশ।
বড় শট খেলতে গিয়ে জাকেরের বিদায়
নাজমুল হোসেন শান্ত আউট হওয়ার পর জাকের আলী ক্রিজে নামেন। প্রথম তিন বলে এক রান নেন তিনি। চতুর্থ বলে বড় শট খেলতে গিয়ে বিরাট কোহলিকে ক্যাচ দিলেন জাকের। আর্শদীপ সিংয়ের বলে ১৭তম ওভারে ১ রান করে আউট হলেন তিনি। পাঁচ বলের মধ্যে দুই উইকেট হারালো বাংলাদেশ। দলীয় ১১০ রানে তাদের ষষ্ঠ উইকেট নেই।
৪০ রান করে শান্তর বিদায়
বাংলাদেশের ব্যাটিং ব্যর্থতার মাঝে হাল ধরেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তানজিদ হাসান তামিম আউট হওয়ার পর একাই লড়ছিলেন তিনি। হাফ সেঞ্চুরির পথে ছুটছিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। কিন্তু ১০ রান দূরে থাকতে থামতে হলো তাকে। যশপ্রীত বুমরার বলে আর্শদীপের ক্যাচ হন শান্ত। ৩২ বলে ১ চার ও ৩ ছয়ে সাজানো ছিল তার ৪০ রানের ইনিংস। ১০৯ রানে পঞ্চম উইকেট হারালো বাংলাদেশ।
কুলদীপের তৃতীয় শিকার সাকিব
কুলদীিপ যাদব টানা তিন ওভারে বাংলাদেশের তিন ব্যাটারকে ফেরালেন। নিজের শেষ ওভারে সাকিব আল হাসানকে রোহিত শর্মার ক্যাচ বানান ভারতীয় স্পিনার। আগের বলে তাকে ছক্কা মেরেছিলেন সাকিব, ৭ বলে ১১ রানে আউট হলেন বাংলাদেশি ব্যাটার। ৯৮ রানে চার উইকেট হারালো বাংলাদেশ।
হৃদয়কে ফেরালেন কুলদীপ
কুলদীপ যাদব টানা দুই ওভারে উইকেট পেলেন। তাওহীদ হৃদয়কে এলবিডব্লিউ করেছেন তিনি। ৬ বলে ৪ রান করেন হৃদয়। ৭৬ রানে ৩ উইকেট নেই বাংলাদেশের।
রিভিউ নিলেও প্যাভিলিয়নে তানজিদ
২৪ রানে রিশাভ পান্তের হাত ফসকে জীবন পেয়ে বড় ইনিংস খেলতে পারলেন না তানজিদ হাসান তামিম। কুলদীপ যাদবের বলে দশম ওভারে আউট হলেন তিনি। আম্পায়ারের এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রিভিউ নিয়েও টিকতে পারলেন না বাংলাদেশের ওপেনার। ৩১ বলে চারটি চারে ২৯ রান করেন তানজিদ। ৬৬ রানে ২ উইকেট হারালো বাংলাদেশ। নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে ৩১ রানের জুটি তার। পানি পানের বিরতির আগে ১০ ওভারে ৬৭ রান করেছে তারা। লক্ষ্য ১৯৭ রানের।
জীবন পেলেন তানজিদ
আউট হতে বসেছিলেন তানজিদ হাসান তামিম। ষষ্ঠ ওভারে যশপ্রীত বুমরার দ্বিতীয় বলে রিশাভ পান্তের হাত ফসকে জীবন পান তিনি ২৪ রানে। বাংলাদেশ পাওয়ার প্লেতে ১ উইকেটে ৪২ রান করেছে।
হার্দিককে ছক্কা মারার পর আউট লিটন
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চলতি আসরে নিজেদের সর্বোচ্চ ওপেনিং জুটি গড়লো বাংলাদেশ। তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাসের উদ্বোধনী জুটি প্রথমবার দুই অঙ্কের ঘর ছাড়ালো। তানজিদ হাত খুলে খেলছিলেন। লিটনও পঞ্চম ওভারের দ্বিতীয় বলে প্রথম ছক্কা মেরে গ্যালারি মাতান। কিন্তু পরের বলে হার্দিক পান্ডিয়ার শিকার হন বাংলাদেশি ওপেনার। ১০ বলে একটি করে চার ও ছয়ে ১৩ রান করে সূর্যকুমার যাদবকে ক্যাচ দেন লিটন। ৩৫ রানে প্রথম উইকেট হারালো বাংলাদেশ।
বাংলাদেশকে ১৯৭ রানের লক্ষ্য দিলো ভারত
সাকিব আল হাসান রোহিত শর্মাকে ফিরিয়ে পেলেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ৫০তম উইকেট। বাংলাদেশের স্পিনারের অনন্য কীর্তি ঢাকা পড়েছে অ্যান্টিগায় ভারতের ব্যাটিং ঝড়ে। বোলারদের ওপর শুরু থেকে চড়াও হয়েছেন ভারতের ব্যাটাররা। রোহিত (২৩) ও বিরাট কোহলি (৩৭) শুরু থেকে চাপ তৈরি করেন। দুজনের কেউই বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। তবে স্ট্রাইক রেট ছিল দারুণ। এরপর রিশাভ পান্ত (৩৬) ও শিবম দুবে (৩৪) ক্যামিও ইনিংস খেলেন। আর ইনিংসের শেষ বলে চার মেরে ২৭ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করে বাংলাদেশের সামনে রান পাহাড় গড়েন হার্দিক পান্ডিয়া। ৫ উইকেটে ১৯৬ রান করে ভারত, যা এই ভেন্যুতে সর্বোচ্চ টি-টোয়েন্টি রান।বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ দুটি করে উইকেট নেন রিশাদ হোসেন ও তানজিম হাসান সাকিব। সবচেয়ে খরুচে ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান, চার ওভারে ৪৮ রান দিয়ে উইকেট পাননি তিনি। রিশাদ ৩ ওভারে ৪৩ রান দেন এবং সমান সংখ্যক বল করে সাকিব দেন ৩৭ রান। সবচেয়ে মিতব্যয়ী ছিলেন মাহমুদউল্লাহ, ২ ওভারে দেন মাত্র ৮ রান।
দুবেকে ফেরালেন রিশাদ
রিশাদের দ্বিতীয় শিকার হলেন শিবম দুবে। ১৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে তাকে বোল্ড করেন বাংলাদেশি স্পিনার। হার্দিক পান্ডিয়ার সঙ্গে ৩৪ বলে ৫৩ রানের জুটি গড়েন দুবে। করেন ২৪ বলে ৩ ছয়ে ৩৪ রান।
পান্ত ঝড় থামালেন রিশাদ
পানি পানের বিরতির পর ফিরে মারমুখী হয়ে ওঠেন রিশাভ পান্ত। মোস্তাফিজুর রহমানের কাছ থেকে ১১তম ওভারে ১৪ রান আদায় করেন তিনি। দুটি চার ও এক ছয় মারেন ভারতীয় ব্যাটার। পরের ওভারে রিশাদ হোসেন বল হাতে নিয়েও সুবিধা করতে পারছিলেন না। টানা দুটি ছয় ও চার হজম করেন বাংলাদেশি স্পিনার। চতুর্থ বলে তিনি শর্ট থা্র্ডে তানজিম হাসান সাকিবের ক্যাচ বানান পান্তকে। ১০৮ রানে চার উইকেট পড়লো ভারতের। ২৪ বলে চারটি চার ও দুটি ছয়ে ৩৬ রান করেন পান্ত।
কোহলি-সূর্যকুমারকে ফেরালেন তানজিম
আগের ওভারে রিশাদ হোসেনের কাছ থেকে ১৫ রান আদায় করে নেন বিরাট কোহলি ও রিশাভ পান্ত। ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিলেন তারা। তানজিম হাসান সাকিব নবম ওভারে বল হাতে নিয়ে ভেঙে দিলেন ৩২ রানের এই জুটি। প্রথম বলে কোহলিকে বোল্ড করেন তিনি। ২৮ বলে ১ চার ও ৩ ছয়ে ২৭ রানে থামেন ডানহাতি ব্যাটার। সূর্যকুমার যাদব নেমেই ছক্কা মারলেও পরের বলে লিটন দাসকে কাচ দেন। ৭৭ রানে ৩ উইকেট হারালো ভারত। ১০ ওভারে তাদের রান ৩ উইকেটে ৮৩।
সাকিব আল হাসান দ্বিতীয় ওভারে বল হাতে নিয়ে রোহিত শর্মার কাছে তিন বলের মধ্যে ছয়-চার হজম করেন। ভারতের অধিনায়ক আরেকটি বড় শট খেলতে চেয়েছিলেন, পারেননি সীমানা ছাড়াতে। চতুর্থ বলে কাভারে জাকের আলীর ক্যাচ হন তিনি। রোহিত ১১ বলে ৩ চার ও ১ ছয়ে ২৩ রান করেন। ৩.৪ ওভারে ৩৯ রানে ওপেনিং জুটি ভাঙলো। আর তাকে ফিরিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ৫০ উইকেট নেওয়ার অনন্য কীর্তি গড়েন সাকিব। প্রথম দুই ওভারে ২৫ রান দিয়েছেন বাঁহাতি স্পিনার।রোহিত বিদায় নিলেও বিরাট কোহলি দারুণ ব্যাটিংয়ে পাওয়ার প্লেতে ভারতকে ৫৩ রান এনে দিতে অবদান রাখেন।
শুরুতেই খরুচে মেহেদী-সাকিব
প্রথম ওভারে মেহেদী হাসান ভালোই বোলিং করছিলেন। শেষ বলে চার দিলেন তিনি। পরের ওভারে সাকিব আল হাসান বল হাতে নিয়ে খরুচে। একটি করে চার ও ছয় হজম করেন বাংলাদেশের স্পিনার, দেন ১৫ রান। প্রথম দুই ওভারে তারা ভারতকে দিয়েছে ২৩ রান। ওপেনিংয়ে রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি।
টসে জিতে বাংলাদেশ বোলিংয়ে
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইটে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারত। নাজমুল হোসেন শান্ত টস জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বাংলাদেশ অধিনায়ক জানান, ‘আমরা তাদের অল্প রানে আটকে দিতে চাই। আমার মনে হয় ১৫০-১৬০ ভালো স্কোর হবে।’ বাংলাদেশের একাদশে একটি পরিবর্তন। তাসকিন আহমেদ খেলছেন না। জাকের আলী ঢুকেছেন।
বাংলাদেশ একাদশ: তানজিদ হাসান তামিম, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), তাওহীদ হৃদয়, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ, জাকের আলী, রিশাদ হোসেন, মেহেদী হাসান, তানজিম হাসান সাকিব, মোস্তাফিজুর রহমান।
ভারত একাদশ: রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), বিরাট কোহলি, রিশাভ পান্ত, সূর্যকুমার যাদব, শিবম দুবে, হার্দিক পান্ডিয়া, রবীন্দ্র জাদেজা, অক্ষর প্যাটেল, কুলদীপ যাদব, যশপ্রীত বুমরা, আর্শদীপ সিং।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইটে বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছে হতাশার। নিজেদের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ডাকওয়ার্থ লুইস মেথডে ২৮ রানে হেরেছে তারা। সেমিফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখতে পরের দুই ম্যাচে জয়ের বিকল্প নেই। এমন সমীকরণ সামনে রেখেই আজ শনিবার শক্তিশালী ভারতের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের ময়দানে ভারতের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত জয়হীন বাংলাদেশ। তবে শনিবার ব্যাটিং-বোলিংয়ে ‘এক্সট্রা অর্ডিনারি’ পারফর্ম করে ইতিহাসটা পাল্টে দিতে প্রত্যয়ী নাজমুল হোসেন শান্তর দল।বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টায়। ম্যাচটি সরাসরি দেখা যাবে নাগরিক টেলিভিশনে।