সামনে ঋণের বড় ফাঁদ,এখন ঋণ নিয়ে ঋণ পরিশোধের সময় চলে এসেছে - Alokitobarta
আজ : শুক্রবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সামনে ঋণের বড় ফাঁদ,এখন ঋণ নিয়ে ঋণ পরিশোধের সময় চলে এসেছে


মু.এবি সিদ্দীক ভুঁইয়া :সামনে ঋণের বড় ফাঁদ। এখন ঋণ নিয়ে ঋণ পরিশোধের সময় চলে এসেছে। এর আগেও এসব সংকট ছিল। তবে সে অর্থনীতির এসব হজমের সক্ষমতা ছিল।দেশের অর্থনীতির প্রতিটি খাতই এখন সংকটে। সূচকগুলো দুর্বল অবস্থানে। রেমিট্যান্সে (প্রবাসী আয়) ইতিবাচক সাড়া নেই। রপ্তানি প্রবৃদ্ধিও আশাব্যঞ্জক নয়। সংকটে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। বিশৃঙ্খল ব্যাংকিং খাত এবং মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী। ফলে সামগ্রিক অর্থনীতি একটা ভঙ্গুর অবস্থায় আছে। এখন সে ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। সবকিছু মিলিয়ে ক্রমেই নৈতিকতাহীন অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। এ অবস্থা মোকাবিলায় ব্যাংক, রাজস্ব খাত এবং প্রশাসনে বড় ধরনের সংস্কারের বিকল্প নেই। এছাড়া কেন এই অবস্থা তৈরি হলো, সে ব্যাপারে শ্বেতপত্র প্রকাশ করা দরকার।

সোমবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নোয়াব এবং জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ আয়োজিত বাজেট আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। এ সময় সংবাদপত্র টিকিয়ে রাখতে বিজ্ঞাপনের মূল্য বাড়ানো এবং বকেয়া টাকা পরিশোধে সরকারের প্রতি দাবি জানানো হয়। আলোচনার বিষয় ছিল ‘অর্থনীতির চালচিত্র ও প্রস্তাবিত বাজেট ২০২৪-২৫।’ তাদের মতে, এবারের বাজেট প্রণয়নে লুটেরা গোষ্ঠীর কথা শুনেছেন অর্থমন্ত্রী, যারা ক্ষমতার প্রশ্রয়ে ফুলেফেঁপে উঠেছে। সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও দৈনিক যুগান্তরের প্রকাশক অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি, নোয়াব সভাপতি একে আজাদ এমপি, অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, সাবেক অর্থসচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, বেসরকারি সংস্থা সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ।

যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও যুগান্তর প্রকাশক অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি বলেন, বর্তমানে অনলাইন সাংবাদিকতার ডোমাডোলের মধ্যে অফলাইন সাংবাদিকতা তথা ছাপানো কাগজের পত্রিকা টিকিয়ে রাখা বড় চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্রমেই বিজ্ঞাপনের সংখ্যা ও পরিসর কমে আসছে। বেশির ভাগ বিজ্ঞাপন চলে যাচ্ছে অনলাইনের দখলে। বিশেষ করে ইউটিউব ও ফেসবুকে। অথচ অনলাইনের চেয়ে অফলাইনে পত্রিকা পরিচালনায় খরচ অনেক বেশি। কাগজ-কালিসহ এর যাবতীয় খরচ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। আবার মূল্যস্ফীতির পাগলা ঘোড়া এবং ডলারের অব্যাহত দাম বৃদ্ধি সবার জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তুলেছে। এ রকম দুরবস্থার মধ্যে গণমাধ্যমকর্মীদের বেতন-ভাতাও বাড়াতে হচ্ছে। এতে লোকসান দিয়ে পত্রিকা চালাতে হয়। তিনি বলেন, সংবাদপত্রকে সরকার যদি শিল্প হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে থাকে, তাহলে এ খাতকে বাঁচাতে সরকারের পক্ষ থেকে আরও সহনশীল নীতি নিয়ে আসতে হবে। সংবাদপত্রের ‘সব খাত থেকে সব ধরনের ডিউটি তুলে নিতে হবে। আমরা যাতে ওয়েজবোর্ড অনুসারে পত্রিকা চালাতে পারি, সে সুযোগ সরকারকেই করে দিতে হবে। তার মতে, বেসরকারি খাত সামনে এগোতে না পারলে এক সময় সবকিছু কলাপস করতে বাধ্য। কারণ কর্মসংস্থানের ৮০ ভাগই পূরণ করে বেসরকারি খাত। তাই সরকারের কাছে দাবি, মিডিয়াকে শক্তিশালী করতে হলে সরকারকে আরও উদার নীতি গ্রহণ করতে হবে। মালিক, সাংবাদিক ও কর্মচারীরা যেন কোনো ধরনের চাপও অনুভব না করে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, যে দেশে গণমাধ্যম শক্তিশালী হবে না, সে দেশে গণতন্ত্র কখনো শক্তিশালী হতে পারে না। আর দুর্বল গণতন্ত্র দিয়ে দেশ চালানো সম্ভব হলেও দীর্ঘমেয়াদে তা বড় বিপদ ডেকে আনে। বিশেষ করে একটা পর্যায়ে দেশ নানারকম বিদেশি শক্তির ফাঁদে আটকা পড়ে যায়। ফলে সবার আগে দেশ। তাই দেশের স্বার্থে সবাইকে এক এবং ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমি যত বড় ধনী শিল্পপতি হই না কেন, পাশের বাড়িতে হাহাকার বিরাজ করলে আমিও কিন্তু শান্তিতে ঘুমাতে পারব না। যুগান্তর প্রকাশক আরও বলেন, বিজ্ঞাপন বাবদ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে এখনো বিপুল অঙ্কের টাকা বকেয়া পড়ে আছে। সরকার এ ব্যাপারে দ্রুত ইতিবাচক সিদ্ধান্ত না নিলে অনেক পত্রিকা তার কর্মীদের বেতন-ভাতা দিতে পারবে না। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ভবিষ্যতে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করতে হলে প্রস্তাবিত বাজেটে গণমাধ্যমকে শক্তিশালী করার কোনো বিকল্প নেই। এজন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা ও সমর্থন জরুরি।

ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, দেশে অর্থনীতির প্রতিটি খাতই এখন সংকটে। রেমিট্যান্স এখন ইতিবাচক ধারায় নেই। রপ্তানি প্রবৃদ্ধিও আশাব্যঞ্জক নয়। এর আগেও এসব সংকট ছিল, কিন্তু তখন প্রকাশ পায়নি। এখন রিজার্ভ সংকট, সামগ্রিক অর্থনীতিতে মন্দা, এগুলো প্রকাশ পাচ্ছে। আগে নেতিবাচক দিকগুলো সামাল দেওয়া গেলেও এখন সামাল দেওয়া কঠিন। তিনি বলেন, অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণকারী খাতই এখন অরক্ষিত। এটা বিশৃঙ্খল অবস্থায় রয়েছে। কোটি কোটি টাকা তছরুপ হচ্ছে। আবার টাকা জমাও হয়, রাতারাতি সে টাকা উধাও হয়ে যায়। সামগ্রিক অর্থনীতি একটা ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। ভঙ্গুর পরিস্থিতির মধ্যেই জাতীয় বাজেট উত্থাপন হয়েছে সংসদে। রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না। ব্যাংক খাতের অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম আর খেলাপির পাল্লা ভারী হচ্ছে। দুর্নীতি, অর্থ পাচার আর বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে। বাজেটের অবস্থা দেখলে বোঝা যায়, রাজস্ব আয়ের সবচেয়ে নিম্নতম হারের দিকে আমরা অবস্থান করছি। এর সঙ্গে রয়েছে আইএমএফের চাপ আর নানা ভর্তুকির বোঝা। রাজস্ব আহরণের হার নিম্নমানের হলেও এ বিষয়টি সব সময়ই অবহেলায় ছিল। তিনি আরও বলেন, এখন বাজেটে ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকের ওপর আরও চাপ বাড়বে। যা নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা ছাপিয়ে দেওয়া আর ঋণ নেওয়া এগুলো বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করবে। এর মধ্যেই খেলাপি ঋণ বেড়ে রেকর্ড তৈরি হয়েছে। এ খেলাপি ঋণ ব্যাংক খাতের সংকট আরও ঘনীভূত করছে। এতে ব্যাংকগুলো নতুন করে ঋণ দেওয়া বন্ধ করতে বাধ্য হবে। ব্যাংক থেকে ছোট উদ্যোক্তারা তো ঋণই পাবে না।যূপকাষ্ঠে বাঁধা বলির পশুর মতো। অর্থাৎ হাত-পা বাঁধা বলির পশুর মতো, তার কিছু করার নেই। তিনি বলেন, সরকার বিদেশি ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এতে সামনে বিদেশি ঋণের ফাঁদে পড়তে পারে।

দেশ থেকে পুঁজি পাচার হচ্ছে, বাড়ছে ব্যাংক খাতে বিশৃঙ্খলা। বাড়ছে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয়। এমন বাস্তবতায় অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনতে বাজেট সংকোচনের বিকল্প নেই। বিদেশি ঋণ প্রসঙ্গে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, সরকারের বিদেশি ঋণ নেওয়া অব্যাহত আছে, সুদের ব্যয় বেড়েছে। সামনে ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এমন অবস্থায় বাজেট বিদেশি ঋণের ফাঁদে পড়তে পারে। অবাধে কালোটাকার ব্যবহার হচ্ছে। বিদেশে পাচার হচ্ছে টাকা। অর্থনীতিতে এই সমস্যা আগে থেকেই ছিল। বর্তমানে বেড়েছে। অবশ্য এতদিন সেই সমস্যা হজম করার শক্তি অর্থনীতির ছিল। সমস্যা এতটাই বেড়েছে যে, এখন সেই হজম করার শক্তি নেই। যার কারণে সমস্যাগুলো বেরিয়ে এসেছে। এই বাস্তবতা থেকে বের হতে হবে। এজন্য দৃঢ় পথনির্দেশনা দরকার। করনীতি দেখে মনে হয় ‘বাঘ হরিণ শিকার করার নীতিতে চলছে রাজস্ব ব্যবস্থা।’ কারণ দুর্বল হরিণকে বাঘ সব সময় শিকার করে। অর্থাৎ ছোট ও ক্ষমতাহীনদের চাপে রাখা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে অর্থনীতিতে নৈতিকতা নিয়ে আলোচনা দরকার। বেনজীর আহমেদ প্রসঙ্গে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ব্যাংকে এত অর্থ তিনি কীভাবে রাখলেন। ব্যাংকে টাকা রাখতে হলে অনেক নিয়মের মধ্যে যেতে হয়। কিন্তু নিয়ম তার বেলায় কী হল যে, তিনি টাকা রাখলেন, আবার সেই টাকা তুলেও নিলেন। এসব পরিষ্কার হওয়া জরুরি।

শীর্ষস্থানীয় এই অর্থনীতিবিদ বলেন, সরকারি ব্যয়ের অপচয় রোধ করা যায়নি, বাজেটেও তার প্রতিফলন হয়নি। ব্যাপক অপচয় হচ্ছে। এখানে আস্থা তৈরি হয়নি। এক্ষেত্রে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাকে কাজে লাগাতে পারছি না। তিনি বলেন, একজন ব্যাংকে টাকা রাখলেন আবার রাতারাতি ব্যাংক থেকে সেই টাকা উধাও করে ফেললেন, এটা কীভাবে সম্ভব। স্বাধীনভাবে কাজের সুযোগের পাশাপাশি বিএফআইইউকে (বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট) কাজে লাগাতে হবে। বিনিয়োগ বিষয়ে ড. ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, ৯০-এর দশকে ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা একইরকম ছিল। এখন তারা অনেক শক্তিশালী। আমেরিকার সঙ্গেও বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করছে। একটা কমিউনিস্ট রাষ্ট্র আমেরিকার বিনিয়োগ টানতে পারছে, আর আমরা পিছিয়ে পড়ছি। সংকট মোকাবিলায় নতুন করে কোনো মেগা প্রকল্প নেওয়া যাবে না। যে প্রকল্প চলছে বা আসছে তার ভবিষ্যৎও দেখতে হবে। এর মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে কী সুফল আসবে তা-ও দেখার বিষয়। তিনি বলেন, তবে কিছু প্রকল্প অনেক কাজের, অবদানও রয়েছে। বিদ্যুৎ-জ্বালানিতে আমাদের খরচ কমাতে হবে। একই সঙ্গে কালোটাকা ১৫ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে সাদা করার সুযোগ। সব মিলিয়ে ক্রমেই নৈতিকতাহীন অর্থনীতির দিকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। যে সরকারের লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা সেই সরকারই আবার ইন্টারনেটের ওপর শুল্ক আরোপ করছে। তারা ভাবছে এতে করে রাজস্ব আদায় বাড়বে। রাজস্ব আদায় কতটুকু বাড়বে তা জানি না, তবে এতে করে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমে যেতে পারে। এতে করে রাজস্ব আদায় আরও কমার শঙ্কা রয়েছে। এই স্মাট বাংলাদেশে আমরা ‘স্মার্ট নৈতিকতাহীন’ হয়ে পড়ব। আর স্মার্ট মানুষ নৈতিকতাহীন হলে সেটা হবে ভয়ংকর।

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, এবারের বাজেট প্রণয়নে অলিগার্ক বা লুটেরা গোষ্ঠীর কথা শুনেছেন অর্থমন্ত্রী, যারা ক্ষমতার প্রশ্রয়ে ফুলেফেঁপে উঠেছে। এই শ্রেণিগোষ্ঠীর কথা চিন্তা করেই কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আবার এই বিশেষ শ্রেণির কথা চিন্তা করে অর্থনীতিতে সংস্কার ও ব্যাংক খাত নিয়ে তেমন আলোচনা করা হয়নি। তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী তিন শ্রেণির কথা শুনেছেন। প্রথমত, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কথা শুনেছেন। আইএমএফ বলেছে, এবার বেশি উচ্চাকাঙ্ক্ষী বাজেট করা যাবে না। কারণ সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতিও থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, অলিগার্ক বা লুটেরা গোষ্ঠীর কথা শুনেছেন। তৃতীয়ত, এবারের বাজেট গতানুগতিক বাজেট। এতে মনে হচ্ছে, অর্থমন্ত্রী আমলাদের কথা শুনেছেন। আমলাদের সুযোগ-সুবিধার যেন কমতি না হয়। তবে কার কথা শোনেননি অর্থমন্ত্রী এমন ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে হোসেন জিল্লুর বলেন, এই দুই শ্রেণি হলো পরিশ্রমী উদ্যোক্তা এবং পরিশ্রমী কর্মী। ক্ষমতার প্রশ্রয়ে ফুলেফেঁপে উঠেছেন, এই শ্রেণিগোষ্ঠীর কথা চিন্তা করেই কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আবার এই বিশেষ শ্রেণির কথা চিন্তা করে অর্থনীতিতে সংস্কার ও ব্যাংক খাত নিয়ে তেমন আলোচনা করা হয়নি। তিনি বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতির ভঙ্গুরতা মোকাবিলায় বাজেটের আকার কিছুটা কমানো হয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ে প্রায় সবাই সংকটে আছে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার বাজেটের লক্ষ্যটি কাগুজে লক্ষ্য ছাড়া আর কিছু নয়। মূল্যস্ফীতি কমানোর কোনো কৌশল নেই। কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাজেটে তেমন বিশ্বাসযোগ্য কর্মকৌশল নেই। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আরও বলেন, ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ স্থবির হয়েছে। এ দেশের বিনিয়োগকারীরা পরিশ্রম করতে রাজি আছেন। কিন্তু আস্থার পরিবেশের অভাব আছে। বাজেটে সৎ করদাতাদের জন্য ৩০ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছে। আর কালোটাকার জন্য ১৫ শতাংশ কর নির্ধারণ করা হয়েছে। মোটরসাইকেলে কর বাড়ানো হয়েছে, কিন্তু ইউএনওদের বিলাসবহুল গাড়ির সুবিধা কমানো হয়নি।

ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, শুধু রাজস্ব সংগ্রহে ব্যর্থতার কারণে দেশ দেউলিয়া হওয়ার পথে। উচ্চ আয়ের তো পরের কথা, মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হলে রাজস্ব আয় ব্যাপকভাবে বাড়াতে হবে। রাজস্ব খাত এবং আর্থিক খাত সংস্কার অর্থনীতির জন্য এই মুহূর্তে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অথচ এ দুটি খাতের সংস্কার নিয়ে বাজেটে তেমন কিছু বলা হয়নি। সংস্কারের জন্য সর্বোচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক অঙ্গীকার দরকার। আহসান মনসুর বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতকে আমরা ধ্বংস করে ফেলেছি। ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। কেন এ অবস্থা হলো তার শ্বেতপত্র প্রকাশ করুন।’ তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি কমানো বাজেটের বিষয় নয়। সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য গত মাসে সুদের হার বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। বিনিময় হার বাজারভিত্তিক হওয়ার পথে অগ্রসর হয়েছে। বাজেট মুদ্রানীতির জন্য সহায়ক অবস্থান ঘোষণা করেছে, যা ইতিবাচক। আহসান এইচ মনসুর বলেন, অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতের ৮৬ শতাংশ। আর সরকারি খাত ১৪ শতাংশ। কিন্তু এবার ঋণ নেওয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তাতে ৭৬ শতাংশ ঋণ যাবে সরকারের কাছে, আর ২৪ শতাংশ বেসরকারি খাত পাবে।

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, কঠিন সময়ের এই বাজেটে নতুনত্ব দেখলাম না। সবকিছু আগের মতোই রয়ে গেছে। ঘাটতি পূরণ হবে ব্যাংক ঋণ দিয়ে। তিনি বলেন, ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি। এটি সর্বোচ্চ এক থেকে দেড় লাখ কোটি টাকা হওয়া উচিত ছিল। তিনি বলেন, অর্থনীতি মোটা দাগে সংকট তিনটি। এগুলো হলো-মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ সংকট এবং জ্বালানি খাতের দুরবস্থা। তিনি বলেন, বাজেট শুধু যোগ-বিয়োগের হিসাব নয়। এর সঙ্গে কিছু কৌশল জরুরি। তিনি বলেন, আমরা খেলাপি ঋণ মডেলের মধ্যে ঢুকে পড়েছি। এ অবস্থা এমন যেন খেলাপি ঋণ বাড়ছে, এরপরও প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এ কারণে বর্তমানে ঋণ নিয়ে ঋণ পরিশোধের অবস্থায় চলে এসেছে দেশ।

Top