চিকিৎসা সহায়তার অর্থ বিভিন্ন কৌশলে আত্মসাৎ করা হচ্ছে - Alokitobarta
আজ : শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদঃ

চিকিৎসা সহায়তার অর্থ বিভিন্ন কৌশলে আত্মসাৎ করা হচ্ছে


মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া :সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্তদের চিকিৎসা সহায়তার অর্থ বিভিন্ন কৌশলে আত্মসাৎ করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে এ খাতের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।ক্যানসার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, জন্মগত হৃদরোগ, থ্যালাসেমিয়া ও স্ট্রোক প্যারালাইজড রোগীর ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে অনুদানের অর্থ তুলে নিচ্ছেন তারা। রোগী নয় এমন ব্যক্তিকে রোগী বানিয়ে আবেদন করা হচ্ছে। অনুদানের ২৫ শতাংশ বরাদ্দ মন্ত্রণালয়ের কাছে সংরক্ষিত থাকে। সংরক্ষিত এই অর্থই তসরুফ হচ্ছে বলে জানা গেছে। এছাড়া চিকিৎসার এই অনুদান বিতরণে ৬৪ জেলায় সমতা বিধান না করার অভিযোগও রয়েছে। উল্লিখিত অনিয়ম দুর্নীতির তদন্ত ও প্রতিকার চেয়ে মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মলি বেগম সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সিনিয়র সচিব জুয়েনা আজিজের কাছে আবেদন করেন।অভিযোগ আমলে নিয়ে বিষয়টি তদন্তে মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব একেএম শহীদুল্লাহকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে কোনো কর্মকর্তাকে দায়ী না করে সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা এবং নীতিমালার দুর্বলতা তুলে ধরেন। তবে তিনি একজন উপসচিব এবং একজন সহকারী সচিবের নিজ জেলায় যথাক্রমে ৮২টি এবং ৮৮টি অনুদানের চেক দেওয়ার কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন। পরবর্তীতে ওই দুই কর্মকর্তার একজনকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আইন ও সংস্থা অধিশাখায় অপরজনকে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে বদলি করা হয়েছে।

রোগীদের জন্য দেওয়া মোট বরাদ্দের ২৫ শতাংশ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্বে সংরক্ষিত থাকে। সংরক্ষিত বরাদ্দ থেকে অনুদান বণ্টনে অস্বচ্ছতার অভিযোগ রয়েছে। অনুদান পাওয়ার জন্য কোন পদ্ধতিতে মন্ত্রণালয়ে দরখাস্ত করতে হবে তার কোনো দিকনির্দেশনা নেই নীতিমালায়। অনুদানের অর্থ প্রাপকের কাছে কোন প্রক্রিয়ায় পৌঁছাবে সে বিষয়ে পরিষ্কার কোনো গাইডলাইন নেই। সংরক্ষিত অনুদানের অর্থ সব জেলায় সমহারে বণ্টন করা হয় না। কোনো এলাকা মোটেই পায় না, আবার কোনো এলাকায় অস্বাভাবিক হারে অনুদান বণ্টনের অভিযোগ রয়েছে।এ ধরনের অনিয়ম বন্ধে নীতিমালায় সংশোধনীর সুপারিশ করে তদন্ত কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ বলেন, সংরক্ষিত কোটার আবেদন কোন প্রক্রিয়ায় মন্ত্রণালয়ে গৃহীত হবে তা নীতিমালায় সংযোজন করা প্রয়োজন। আবেদন ফরম সহজ ও ব্যবহারবান্ধব করা দরকার। রোগীর কাছে অনুদান স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় পাঠাতে মোবাইল ব্যাংকিং অথবা ইএফটি পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।সংরক্ষিত অনুদান বরাদ্দ কমিটির প্রধান করা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে (কার্যক্রম)। এছাড়া অনুদান বরাদ্দ কমিটিতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একই অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব, উপসচিব ও সিনিয়র সহকারী সচিবকে সদস্য রাখা হয়েছে। এ ধরনের জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের অন্য অনুবিভাগের কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ত করে তাদের মতামত নেওয়ার রেওয়াজ থাকলেও তা অনুসরণ করা হয়নি। সে ক্ষেত্রে সংশোধন করে কমিটি পুনর্গঠন করার পরামর্শ দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ব্যক্তিগতভাবে তাদের দায়দায়িত্ব নিরূপণ করেননি তদন্ত কর্মকর্তা। তিনি কাউকে দোষী না করে সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা ও নীতিমালার দোষত্রুটি তুলে ধরেছেন। তবে ব্যক্তিগতভাবে যারা লাভবান হয়েছেন তাদের ছাড় দেওয়া কর্তৃপক্ষের দুর্বলতার প্রকাশ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে তদন্তে উপসচিব খাদিজা নাজনীনের নিজ জেলা ফেনীতে ৮২টি ও সহকারী সচিব শেখ রবিউল ইসলামের নিজ জেলা খুলনায় ৮৮টি চেক নেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তারা ২০১৯-২০ অর্থবছরের ২০ মার্চ থেকে ২০ মে সংরক্ষিত বরাদ্দ থেকে নিজ এলাকার জন্য অনুদান নিয়েছেন। প্রতিটি চেকে ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়। এমন প্রমাণ পাওয়া সত্ত্বেও তদন্ত কর্মকর্তা তাদের কারও বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে প্রতিবেদন দিয়েছেন।জানা গেছে, চলতি অর্থ বছর ক্যানসার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, জন্মগত হৃদরোগ, থ্যালাসেমিয়া, স্ট্রোক প্যারালাইজড রোগীর সহায়তার জন্য ২শ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। মোট বরাদ্দের ২৫ শতাংশ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্বে সংরক্ষিত অর্থাৎ ৫০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। চলতি অর্থবছর সংরক্ষিত খাত থেকে কোনো অর্থ এখনও অনুদান হিসেবে দেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে সমাজকল্যাণ সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ বছর আমরা অনুদানের অর্থ এখনও ছাড় করিনি। এখনও সময় আছে। সময়মতো ছাড় করা হবে। অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে সচিব বলেন, আমি দায়িত্বভার গ্রহণের আগে কী হয়েছে জানি না। তবে আমার দায়িত্বকালীন কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না খোঁজ নেন। আপনার দায়িত্ব গ্রহণের আগের তদন্ত প্রতিবেদনে নীতিমালা সংশোধনসহ বেশ কিছু সুপারিশ ছিল সেগুলো কোন পর্যায়ে-এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, নীতিমালা সংশোধনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। হয়তো সব সুপারিশ থাকবে, হয়তো কিছু বাদ যাবে।মন্ত্রণালয়ের (কার্যক্রম) অনুবিভাগের সাবেক উপসচিব বর্তমানে (আইন ও সংস্থা) অধিশাখার যুগ্মসচিব খাদিজা নাজনীন বলেন, আমাদের বেড়ে ওঠা শহরে। গ্রামের বাড়িতে বহু বছরেও একবারের জন্য যাওয়া হয় না। তাছাড়া গ্রামের আত্মীয়স্বজনকেও ঠিকমতো চিনি না। তাহলে আমি অনুদানের ৮৮টি চেক নিলাম কী করে। তিনি আরও বলেন, অতিরিক্ত সচিব মো. ইসমাইল স্যারের বাড়িও কিন্তু ওই এলাকায়। সুতরাং চেকগুলো কার সুপারিশে গেছে তা তদন্ত হওয়া দরকার।সহকারী সচিব শেখ মো. রবিউল ইসলাম বলেন, আমি জীবনেও কোনো অনিয়ম করিনি। আমার এলাকায় সরকার কাউকে অনুদান দিতে পারবে না এমন কোনো আইন আছে? কত মানুষ কতভাবে তদবির করে সবাই কি আমাকে জিজ্ঞেস করে করেন।

Top
%d bloggers like this: