এক প্রতিষ্ঠানই পাচ্ছে ৭০ শতাংশ অর্থ ! - Alokitobarta
আজ : শুক্রবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এক প্রতিষ্ঠানই পাচ্ছে ৭০ শতাংশ অর্থ !


এবি সিদ্দিক ভুঁইয়া:সরকারের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের বিশেষ অনুদানের ৭ কোটি টাকার ৫ কোটিই (প্রায় ৭০ শতাংশ) পাচ্ছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘সূর্যের হাসি নেটওয়ার্ক (এসএইচএন)’। প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনায় এই অর্থ ব্যয় হবে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সব প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত করেছে অর্থ বিভাগ।এর আগে একক প্রতিষ্ঠান হিসাবে বড় অঙ্কের এ অনুদান কাউকে দেওয়া হয়নি। সর্বনিম্ন ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা পর্যন্ত বিশেষ অনুদানের এ অর্থ দেওয়া হতো বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে। একটি প্রতিষ্ঠানকে এককালীন বড় অঙ্কের অনুদান দেওয়ার ফলে অসংখ্য বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান চলতি বছর এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে-এমন আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এবং অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, বিদেশি সহায়তায় সূর্যের হাসি নেটওয়ার্ক পরিচালিত হচ্ছে। আগামীতে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পৌঁছবে। এজন্য তাদের বিদেশি দাতাদের সহায়তা বন্ধ হয়ে যাবে। কার্যক্রম চালিয়ে রাখার জন্য এ প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে ২০ কোটি টাকা চেয়ে অর্থ বিভাগে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে অর্থ বিভাগের সিদ্ধান্ত কি হয়েছে সেটি জানা নেই।

সূত্র জানায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে স্বাস্থ্যসেবা খাতে বিশেষ অনুদান হিসাবে বরাদ্দ ছিল ৭ কোটি টাকা। এরমধ্যে ১৩৬টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয় সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা হারে। আর ২২৬টি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকা হারে এবং ৫০ হাজার টাকা হারে দেওয়া হয় ৬৮২টি প্রতিষ্ঠানকে। অর্থাৎ ৭ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে ১ হাজার ৪৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে।সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন-কার স্বার্থে এককভাবে একটি প্রতিষ্ঠানকে অনুদানের বেশিরভাগ টাকা দেওয়া হচ্ছে। আর এভাবে একটি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার মধ্য দিয়ে অনুদান বিতরণে বৈষম্য দেখা দেবে। এছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরে বিশেষ অনুদানের ৭ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়নি। কারণ ওই বছর কৃচ্ছ সাধন শুরু করে সরকার।চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিশেষ অনুদান খাতে বরাদ্দ আছে ৭ কোটি টাকা। যার মধ্যে ৫ কোটি টাকাই দেওয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে একটি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে। সেটি হচ্ছে সূর্যের হাসি নেটওয়ার্ক। অর্থাৎ মোট অনুদানের ৭০ শতাংশই দেওয়া হচ্ছে একটি প্রতিষ্ঠানকে।এতে বিশেষ অনুদান বিতরণে চরম বৈষম্য সৃষ্টি হবে। বেসরকারি অন্য স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান এ অনুদান পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে। এছাড়া সরকার যেখানে কৃচ্ছ সাধনের আওতায় গত অর্থবছরে ১ টাকাও অনুদানের অর্থ ব্যয় করেনি। এ বছরও নানা খাত থেকে সরকার অর্থ ব্যয় সাশ্রয় করছে। ফলে এখানে সাশ্রয় না করে অনুদানের এ অর্থ ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, কাদের স্বার্থে একটি প্রতিষ্ঠানকে এককভাবে অনুদানের ৭০ শতাংশ দেওয়া হচ্ছে।এ বিষয়ে জানতে সোমবার সূর্যের হাসি নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান প্রফেসর রুবিনা হামিদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। পাশাপাশি একই দিন এই প্রতিবেদকের পরিচয় দিয়ে তার মোবাইল ফোনে এসএমএস দিয়ে মতামত চাওয়া হয়। কিন্তু মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো ধরনের জবাব আসেনি।

সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে থোক বরাদ্দ থেকে ২০ কোটি টাকা অনুদান চেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি দিয়েছে সূর্যের হাসি নেটওয়ার্ক কর্তৃপক্ষ। সেখানে বলা হয়, ইউএসএইড অর্থায়নে দেশে ১৯৯৭ সাল থেকে পরিচালিত হচ্ছে সূর্যের হাসি নেটওয়ার্ক। সারা দেশে ৩৯৯টি ক্লিনিকের মাধ্যমে মা ও শিশু স্বাস্থ্য এবং পরিবার পরিকল্পনার সেবা দিয়ে আসছে। কিন্তু ২০১৯ ও ২০২০ সালে ১৩৪টি ছাড়া বাকি ক্লিনিকগুলো বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমান দাতা সংস্থার আংশিক অনুদানে চালু থাকা ক্লিনিকগুলো চলছে। সেখানে আরও বলা হয়, ২০২২ সাল পর্যন্ত চলমান ক্লিনিকগুলোতে অর্থায়ন করবে এবং ২০২৩ সাল থেকে সেটি বন্ধ করা হবে। এটি দাতা সংস্থার পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় সূর্যের হাসি নেটওয়ার্কে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩০ কোটি টাকা বাজেট ঘাটতি সৃষ্টি হবে। এই ঘাটতি মেটাতে এসএইচএন এ বছর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে থোক বরাদ্দ থেকে ২০ কোটি টাকা চেয়ে চিঠি দিয়েছে।সূত্র আরও জানায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে সূর্যের হাসি নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠানের জন্য ২০ কোটি টাকা চেয়ে প্রস্তাব পাঠায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে। ওই প্রস্তাবে এ টাকা স্বাস্থ্য বিভাগের থোক বরাদ্দ থেকে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু সূর্যের হাসি নেটওয়ার্ক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এর কোনো অর্থনৈতিক কোড নেই। নিয়ম হচ্ছে, থোক বরাদ্দের অর্থ পেতে হলে অর্থনৈতিক কোড থাকতে হয়। এটি একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠানের থাকে। অর্থনৈতিক কোড না থাকায় থোক বরাদ্দ থেকে কোনো অর্থ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।সূত্র জানায়, সর্বশেষ এখন সূর্যের হাসি নেটওয়ার্ককে এককালীন বিশেষ অনুদান থেকে ৫ কোটি টাকা দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে অর্থ বিভাগ। সম্মতিপত্রে বলা হয়, সূর্যের হাসি নেটওয়ার্কের কোনো অর্থনৈতিক কোড নেই। তাই এ প্রতিষ্ঠানকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ১৫৮ কোটি টাকার ‘থোক বরাদ্দ’ থেকে কোনো অর্থ দেওয়া যাচ্ছে না। তবে বিশেষ অনুদান খাতে বরাদ্দকৃত ৭ কোটি টাকা থেকে এককালীন বিশেষ অনুদান হিসাবে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে বলে প্রতীয়মান হয়। ফলে এ খাত থেকে এককালীন ৫ কোটি টাকা প্রদান করা যেতে পারে।

Top